নবাব সিরাজ উদ দৌলার সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো নবাব সিরাজ উদ দৌলার সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের নবাব সিরাজ উদ দৌলার সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

নবাব সিরাজ উদ দৌলার সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর
নবাব সিরাজ উদ দৌলার সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

নবাব সিরাজ উদ দৌলার সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

  • অথবা, বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সংঘর্ষ তথা পলাশির যুদ্ধ বাংলা তথা ভারতের ভাগ্য বিপর্যয়ের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা। 

নবাবী লাভের পর থেকে সিরাজ- উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু হয় তাকে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ইংরেজরা। 

যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির আম্রকাননে । এ পলাশি যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বাঙালির জাতীয় জীবনে নেমে আসে. দুর্যোগের ঘনঘটা, অস্তমিত হয়ে যায় বাংলার স্বাধীনতা সূর্য। 

দু'শ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয় স্বাধীনচেতা বাঙালি জাতি । যদিও পলাশির যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী ছিল না তথাপি এ যুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নবাবের পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে সূচিত হয় বাঙালি জাতীয় জীবনের বিয়োগাত্মক ও হতাশাব্যঞ্জক সুদূরপ্রসারী অধ্যায় ।

সিরাজ-উদ-দৌলার সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ : নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র : সিরাজ-উদ-দৌলার সিংহাসন লাভ আলীবর্দী খানের অপর দুই কন্যা সহজে গ্রহণ করতে পারেননি। 

ঢাকার শাসনকর্তার বিধবাপত্নী ও নবাবের খালা ঘষেটি বেগম ও পুর্নিয়ার শাসনকর্তার পুত্র ও নবাবের অপর খালাত ভাই শওকত জঙ্গ প্রথম থেকেই সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। 

ঘষেটি বেগমের দেওয়ান রাজা রাজবল্লব, রায়দুর্লভ এবং মীর জাফর ক্রমান্বয়ে ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রকারী চক্রের হাতকে শক্তিশালী করে।

২. ইংরেজদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ : সিরাজ-উদ-দৌলা যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন তখন অন্যান্য ইউরোপীয় বণিকরা চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী নতুন নবাবকে স্বীকৃতিপূর্বক উপঢৌকন পাঠিয়ে অভিনন্দন আপন করে। কিন্তু ইংরেজরা প্রচলিত রীতি অগ্রাহ্য করায় প্রথম থেকেই নবাবের বিরাগভাজন হয়।

৩. অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রে ইংরেজদের অংশগ্রহণ : নবাবের আত্মীয়স্বজন ও তার দোসররা যখন নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন তখন ইংরেজরা অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে আঁতাত করে নবাবের বিরুদ্ধে তাদেরকে সহায়তা প্রদান করতে থাকে। এর ফলে নবাব ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।

৪. নবাবের বিনা অনুমতিতে দুর্গ নির্মাণ : দাক্ষিণাত্যে ইঙ্গ- ফরাসি যুদ্ধের অজুহাতে নবাবের অনুমতি না নিয়ে ইংরেজরা কলকাতায় এবং ফরাসিরা চন্দননগরে দুর্গ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। 

সিরাজ-উদ-দৌলা বিদেশিদের উপর দুর্গ নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা জারি করলে ফরাসিরা নবাবের আদেশ মান্য করে। 

কিন্তু ইংরেজরা তা অগ্রাহ্য করে দুর্গ নির্মাণ ও ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ সংস্কার করতে তৎপর হয়। ফলে নবাবের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।

৫. আলীবর্দী খানের সাথে সম্পাদিত সখির বরখেলাপ : নবাব আলীবর্দী খানের সাথে সম্পাদিত সন্ধির যাবতীয় শর্ত ভঙ্গ করে ইংরেজরা জনসাধারণের উপর অত্যাচার শুরু করে এবং নবাবকে কর প্রদান করা হতে বিরত থাকে। ফলে সিরাজ-উল- দৌলা তাদের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।

৬. সিরাজ-উদ-দৌলা কর্তৃক কাসিমবাজার কুঠি পরিদর্শনে ইংরেজদের বাধা প্রদান : নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা যখন ইংরেজদের কাসিমবাজারস্থ কুঠি পরিদর্শনের ইচ্ছা প্রকাশ করে দূত প্রেরণ করেন তখন ইংরেজরা নবাবের দূতকে অপমান করে বিতাড়িত করে। এতে নবাব অপমানবোধ করে ইংরেজদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর হন।

৭. কৃষ্ণদাসকে প্রত্যর্পণে ইংরেজদের অস্বীকৃতি : বেগমের পক্ষাবলম্বন করে রাজা রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাস ও তার পরিবারপরিজন প্রভূত ধন-রত্নসহ পালিয়ে কলকাতায় ”ইংরেজদের আশ্রয় গ্রহণ করে।

নবাব সরাসরি কৃষ্ণদাসকে তার নিকট সমর্পণের জন্য ইংরেজদের নিকট দাবি জানান এবং নারায়ণ সিংহকে দূত হিসেবে ইংরেজদের নিকট প্রেরণ করেন। 

কিন্তু ফোর্ট উইলিয়ামের গভর্নর রজার ড্রেক নবাবের দূতকে অপমান করে বের করে দেন এবং নবাবের দাবি রক্ষা করতে অস্বীকৃতি জানান। এর ফলে নবাবের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়।

৮. নবাব কর্তৃক কলকাতা ও কাসিমবাজার দখল : নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ইংরেজদের সমুচিত শাস্তি প্রদানের জন্য ১৭৫৬ সালের ৪ জুন ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে কলকাতার দিকে অগ্রসর হয়ে প্রথমে কাসিমবাজারের ইংরেজ কুঠি দখল করেন। 

নবাবের এ অতর্কিত আক্রমণে ভীত হয়ে ইংরেজ গভর্নর ড্রেক ও অন্যান্যরা ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ পরিত্যাগ করে কলতা নামক স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করে। 

ফলে কলকাতা অতি সহজেই নবাবের হস্তগত হয় এবং তিনি আলীবর্দী খানের নামানুসারে কলকাতার নতুন নামকরণ করেন আলীনগর। 

এর ফলে ইংরেজদের সাথে নবাবের সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে।৯. অন্ধকূপ হত্যার কাল্পনিক কাহিনি কলকাতা অধিকারকালে কয়েকজন ইংরেজ সৈন্যকে সাময়িক বন্দি করা হয়েছিল। 

বন্দিদের মধ্যে কয়েকজন আহত ও অসুস্থ থাকায় কয়েকজনের মৃত্যুও ঘটে। বন্দিদের মধ্যে একজন ছিল ইংরেজ ডাক্তার হলওয়েল। 

তিনি সিরাজ চরিত্রকে কলঙ্কিত করার জন্য অন্ধকূপ হত্যা নামে একটি কাল্পনিক কাহিনি রচনা করেন যা Blackhole tragedy নামে খ্যাত। 

হলওয়েলের মতে, নবাব ১৪৬ জন বন্দিকে মাত্র ১৮ × ১৪' – ১০" আয়তনবিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্র কক্ষে বন্দি করে রেখেছিল। 

এর মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ১২৩ জনের মৃত্যু ঘটে এবং বাকি ২৩ জন কোনোক্রমে রক্ষা পায়। এ ভিত্তিহীন কাহিনি ইংরেজদেরকে বিক্ষুব্ধ করেছিল।

১০. ইংরেজদের কলকাতা পুনর্দখল : কলকাতা দখলের সংবাদ মাদ্রাজে পৌঁছলে তা পুনরুদ্ধারের জন্য সেখানকার ইংরেজ কাউন্সিল রবার্ট ক্লাইভ ও নৌসেনাপতি ওয়াটসনের নেতৃত্ব একটি অভিযান প্রেরণের নির্দেশ দেয়। 

কলকাতার শাসনকর্তা মানিক চাদ ক্লাইভের 'আগে সংবাদ পেয়ে মিথ্যা যুদ্ধের ভান করে পালিয়ে আসলে কলকাতা পুনরায় ইংরেজদের হস্তগত হয়।

১১. সিরাজ কর্তৃক কলকাতা দখলের ব্যর্থ চেষ্টা : ইংরেজরা কলকাতা পুনর্দখল করলে সিরাজ তা পুনরুদ্ধারের জন্য কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করেন। কয়েকদিন যুদ্ধের পর ১৭৫৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আলীনগরের সন্ধির দ্বারা ইংরেজ ও নবাবের মধ্যে সমঝোতা হয়। 

ফলে কলকাতায় নবাবের আক্রমণ ব্যর্থ হয়। তবে সন্ধি হলেও ইংরেজরা নবাবের বিরুদ্ধে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।

১২. আলীনগরের সন্ধিভঙ্গ ও ষড়যন্ত্র : আলীনগরের সন্ধির দ্বারা ইংরেজ ও সিরাজ-উদ-দৌলার মধ্যে সমাঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সন্ধির শর্তানুসারে ইংরেজরা বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা লাভ করেছিল।

কিন্তু ইংরেজরা আলীনগর সদির সকল শর্ত ভঙ্গ করে নবাব বিরোধী মুর্শিদাবাদের ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে পুনরায় আঁতাত করে।

১৩. সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য ষড়যন্ত্রকারী ও ইংরেজদের মধ্যে গোপন চুক্তি : মুর্শিদাবাদে নবাব বিরোধী জোট সিরাজ-উদ-দৌলাকে সিংহাসন থেকে অপসারণের জন্য ঘোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। 

জগৎশেঠ, মীর জাফর, রাজবল্লত, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, ইয়ার লতিফ প্রমুখ সিরাজের স্থলে মীর জাফরকে নতুন নবাবের আসনে অধিষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ষড়যন্ত্রকারীরা।

 ইংরেজদের সাহায্যপ্রার্থী হলে ইংরেজরা তাদেরকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। অতঃপর মীর জাফর পৌনে দুই কোটি টাকা উপঢৌকনের শর্তসহ বিভিন্ন সুযোগ প্রদান করার বিনিময়ে বাংলার নবাবী লাভের জন্য রবার্ট ক্লাইভের সাথে এক গোপন চুক্তি সম্পাদন করে । 

এভাবে গোপন চুক্তির মধ্য দিয়ে পলাশি যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রশস্ত হয়। এবং সুযোগ বুঝে রবার্ট ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইংরেজদের সাথে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরোধ ছিল প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধে ইংরেজদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলশ্রুতি। 

নবাবের ক্ষমতা ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দেওয়ায় নবাব ইংরেজদের অবাধ্যতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু পলাশির যুদ্ধ সংঘটনে দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষমতালিপ্সা ও বিশ্বাসঘাতকতাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

ইংরেজদেরকে নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ ও সাহস মীর জাফররাই যুগিয়েছিল। তাই পলাশির যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী বা অনিবার্য যুদ্ধ বলা যায় না।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ নবাব সিরাজ উদ দৌলার সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম নবাব সিরাজ উদ দৌলার সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের নবাব সিরাজ উদ দৌলার সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করপড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ