১৭৭০ সালের মহা দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৭৭০ সালের মহা দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৭৭০ সালের মহা দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

১৭৭০ সালের মহা দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর
১৭৭০ সালের মহা দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

১৭৭০ সালের মহা দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

  • অথবা, ১৭৭০-এর দুর্ভিক্ষ কেন হয়েছিল? এ দুর্ভিক্ষের ফলাফল আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট হাওয়া কোম্পানি যে আধিপত্যের সূচনা করে ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে তার চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। 

এরপর রবার্ট ক্লাইভ ১৭৬৫ সালে পুনরায় বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হয়ে আসার পরে তিনি বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। 

তিনি কৌশলে ১৭৬৫ সালে বাংলার দেওয়ানি লাভের পর দ্বৈত শাসন নামে এক অদ্ভুত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। 

আর এই অদ্ভুত শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার ফলে ১৭৬৯-৭০ সাল বা বাংলা ১১৭৬ সালে বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর দেখা দেয় ।

দুর্ভিক্ষের কারণসমূহ : ১৭৬৯-৭০ সালে বাংলায় সংঘটিত মহাদুর্ভিক্ষের পেছনে কোনো একক কারণ যথেষ্ট ছিল না। ফলে এই দুর্ভিক্ষের পেছনে একাধিক কারণ দায়ী ছিল। 

তা নিম্নে আলোচিত হলো :

১. কোম্পানির দ্বৈত শাসনের প্রভাব : ১৭৬৯-৭০ সালের মহাদুর্ভিক্ষের পেছনে ক্লাইভের দ্বৈত শাসন অনেকাংশে দায়ী ছিল। কারণ এ ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের দায়িত্ব ছিল নবাবের হাতে।

কিন্তু তাকে কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি। অন্যদিকে দেওয়ানি বিচার ও রাজস্ব আদায়, সামরিক প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল কোম্পানির হাতে। 

ফলে দেখা যায় নবাবের হাতে কোনো ক্ষমতা না থাকায় দেশের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে এবং কোম্পানির রাজস্ব আদায়ে অবাধ লুটপাটের ফলে ১৭৬৯- '৭০ সালে সারা বাংলার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।

২. রাজস্ব আদায়নীতি : ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি আদায়ের অধিকার পেলেও তারা যেহেতু বাংলার রাজস্ব প্রশাসন সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ছিল এবং তাদের মতো বিশাল সংখ্যক জনবলও ছিল না। 

তাছাড়া বাংলায় বাণিজ্যরত অন্যান্য বণিকদের সমালোচনার ভয়ে তারা কৌশলে রাজস্ব আদায়ের জন্য রেজা খান ও সিতাব রায়কে দিওয়ান নিযুক্ত করেন। তারা সরকার বাহাদুরকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য নিপীড়নমূলক কর বা রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করে।

৩. কোম্পানির অন্যায়মূলক বাণিজ্য নীতি : ১৭১৭ সালে কোম্পানি ফররুখশিয়ারের কাছ থেকে বিনাশুল্কে অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ লাভ করে পরে তারা এই ফরমানের অবৈধ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত বাণিজ্য শুরু করে ফলে দেশিয় বণিকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। 

ফলে কোম্পানির এই একচেটিয়া বাণিজ্যের ফলে বাংলার অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।

৪. কর্মচারীদের দুর্নীতি : ১৭৬৫ সালে কোম্পানি দেওয়ানি লাভের অধিকার পায়। ফলে কোম্পানির অনেক কর্মচারী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে সুদ, ঘুষ এবং উৎকোচ-পারিতোষিকের বিনিময়ে তারা বিভিন্ন কাজ করতো।

৫. প্রাকৃতিক দুর্যোগ : ১৭৬৯-৭০ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে একদিকে বাংলায় দ্বৈত শাসনের কুফল অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বন্যা, খরা, মহামারি ইত্যাদি কারণে বাংলায় দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।

৬. কোম্পানির মজুদদারী নীতি : বাংলায় অনাবৃষ্টির কারণে ফসল উৎপাদন না হওয়ায় খাদ্যও সংকট হতে পারে, এ সংবাদে কোম্পানি তার সেনাবাহিনী ইউরোপীয় ও কলকাতার অধিবাসীর জন্য অবাধে চাল মজুত শুরু করেন। 

আর সরকারের এই মজুত দেখে ধনী সমাজ, উচ্চবিত্ত, ব্যবসায়ী, ফটকাবাজ ও মজুতনাররা মজুতদারী শুরু করলে সারাদেশে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়।

৭. নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি : কোম্পানির মজুদদারী নীতির ফলে একদিকে বাজার হয়ে পড়ে চাল শূন্য। অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় ফলে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ।

৮. ১৭৬৯-৭০ সালের দুর্ভিক্ষ : ১৭৬৯-৭০ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দুর্ভিক্ষ। কোম্পানির প্রবর্তিত দ্বৈত শাসন ও তার কর্মচারীদের অবাধে লুটপাটের জন্য সারাদেশ খাদ্যশূন্য হয়ে পড়ে। 

এই দুর্ভিক্ষের মধ্যেই আবার কোম্পানির লোকেরা রাজস্বের জন্য নির্যাতন-নিপীড়ন করতে থাকে। মানুষ মরতে থাকে অনাহার ও অর্ধাহারে। 

অনেকে তার লাঙল-গরু, পুত্র কন্যাদের বিক্রি করে রাজস্ব প্রদান করতো। সারা দেশে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে লক্ষ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করতে থাকে। 

আবার তাদের লাশের দাফনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় লাশ পঁচে-গলে এক ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ ঘটে। ফলে বিভিন্ন বায়ুবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েও মানুষ মরতে থাকে। এলাকার পর এলাকা মানুষ শূন্য হয়ে পড়ে। অনেক এলাকা বন-জঙ্গলে ঢেকে যায়।

দুর্ভিক্ষের ফলাফল : ১৭৬৯-৭০ সালের ঐতিহাসিক দুর্ভিক্ষের ফলাফল হয়েছিল মারাত্মক। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :

১. মৃত্যুহার বৃদ্ধি : ১৭৬৯-৭০ সালের দুর্ভিক্ষের মূল আঘাতটা পশ্চিম ও উত্তর বঙ্গ এবং বিহার প্রদেশের উপর দিয়ে। ওয়ারেন হেস্টিংসের মতে এই দুর্ভিক্ষে বাংলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোক মৃত্যুবরণ করেন। পুর্নিয়া, রাজশাহী, বিষ্ণুপুর প্রভৃতি জেলার লোক ক্ষয় অনেক বেশি। অনেকে এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়।

২. কৃষিকাজের ক্ষতি : বাংলার অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর কিন্তু দুর্ভিক্ষের ফলে প্রচুর লোকের মৃত্যুর কারণে কৃষিক্ষেত্রে কাজ করার লোক সংকট দেখা দেয়। তাছাড়া অনেক এলাকা বন-জঙ্গলে ঢেকে যাওয়ায় কৃষি উৎপাদনও হ্রাস পায়।

৩. রেশম ও তাঁত শিল্পের ধ্বংস : ১৭৭০ সালের এ দুর্ভিক্ষের সময় রেশম ও তাঁত শিল্পের ক্ষতি হয় অনেক বেশি। উভয় শিল্পের অনেক কারিগর মৃত্যুবরণ করায় শিল্প দুটি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

৪. কোম্পানির শাসন : দ্বৈত শাসনব্যবস্থার কুফল স্বরূপ সমগ্র বাংলায় নেমে আসে ভয়াবহ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। ফলে কোম্পানি আপোষে ১৭৭২ সালে ফরমান জারি করে দ্বৈত শাসন পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে দেওয়ানি শাসন নিজ হাতে তুলে নেয়। ফলে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে বলা যায় যে, ১৭৫৭ ও ১৭৬৪ সালে পরপর দুটি বিজয় লাভের ফলে কোম্পানি কিছুটা বাধ্য হয়ে কিছু অদ্ভূত সংস্কার সাধন করেন। 

যার একটি ছিল দ্বৈত শাসন। আর এই দ্বৈত শাসনের কুলের ফলে সময় বাংলায় ছিয়াত্তরের নির্মম ও ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হানা দেয়। যার প্রভাবে বাংলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক মৃত্যুবরণ করেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৭৭০ সালের মহা দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৭৭০ সালের মহা দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের ১৭৭০ সালের মহা দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ