ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ সম্পর্কে আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ সম্পর্কে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ সম্পর্কে আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ সম্পর্কে আলোচনা কর
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ সম্পর্কে আলোচনা কর

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ সম্পর্কে আলোচনা কর

  • অথবা, কোন পরিস্থিতিতে ইংরেজ হয় ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করেছিল? এর গুরুত্ব কি? 

উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষে ইংরেজ প্রভুত্ব স্থাপনের ইতিহাসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ একটি যুগান্তকারী ও ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। 

১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে মীর কাশিমের পরাজয়ের পরে ১৭৬৫ সালে রবার্ট ক্লাইভ দ্বিতীয়বারের মত বাংলার গভর্নর হয়ে আসেন। এবার এসে তিনি বাংলার শাসনব্যবস্থায় কিছু গুণগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। 

তার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই পরিবর্তন ও সংস্কারের মাধ্যমে ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসনের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা এই উদ্দেশ্য তিনি ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি ব্যবস্থা চালু করেন।

→ দেওয়ানি লাভ : দিওয়ান একটি আরবি শব্দ। বাংলায় ভাষায় এর অর্থ দাঁড়ায় রাজস্ব শাসন বা আদায়ের অধিকার। ইংরেজিতে দেওয়ানি বলতে বুঝায় Revenue administration. ১৬০১ সালে ব্রিটিশরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্যার জেমস লেনক্যাসটারের নেতৃত্বে প্রথম ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং ধীরে ধীরে তারা অত্র অঞ্চলে নিজেদের বাণিজ্যিক ঘাঁটি স্থাপন করতে সক্ষম হন। 

পরে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তারা এখানে একটি শক্তিশালী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে বাংলার নবাবের পরাজয়ের পর ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে নবাব মীর কাশিমকে পরাজিত করে কোম্পানি বাংলার শাসন ক্ষমতার মূল নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। 

এবার রবার্ট ক্লাইভ ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার গভর্নর হয়ে এসে বাংলায় কোম্পানির শাসনের ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং কোম্পানির রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য সুকৌশলে বাংলার নাবালক নবাব নাজিম উদ্দিনের সাথে বার্ষিক ৫৩,১৬.১৩১ লক্ষ টাকা আর মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সাথে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকার চুক্তিতে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেন। 

কিন্তু ধূর্ত ও চতুর ক্লাইভ দেশি-বিদেশি বণিকদের সমালোচনা ও বিরোধিতা থেকে মুক্তি, তাছাড়া রাজস্ব আদায়ের জটিলতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য কৌশলে রেজা খানের উপর বাংলা আর সিতাব রায়ের উপর উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব অর্পণ করেন। 

ফলে রেজা খান ও সিতাব রায় কোম্পানি বাহাদুরকে সন্তুষ্ট রাখার মাধ্যমে নিজেদের জমিদার দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রজাসাধারণের উপর জুলুম নির্যাতন শুরু করেন।

 কোম্পানি এই দেওয়ানি লাভের পরোক্ষভাবে তারা শাসন ক্ষমতাও দখল করে নেয়। কারণ এ ব্যবস্থার ফলে বাংলার নবাব এখন ক্ষমতাহীন পোষণযুক্ত হয়ে পড়েন। 

আর প্রকৃত ক্ষমতা চলে যায় ইংরেজদের হাতে। ফলে তারা নবাব ও সম্রাটকে প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধ করে বাকি উদ্বৃত্ত অর্থ তাদের বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করে।

→ দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব : কোম্পানির দেওয়ানি লাভ শুধু বাংলা ইতিহাস পুরো ভারতবর্ষের ইতিহাস একটা আলোচিত ঘটনা। নিম্নে এর গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :

(ক) কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের মর্যাদা : কোম্পানি দেওয়ানি লাভের পূর্বে ছিল শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যে প্রতিনিধি দল। কিন্তু তারা দেওয়ানি লাভ করায় তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায় ৷

(খ) বিচারিক ক্ষমতা : কোম্পানি যেহেতু চুক্তি মোতাবেক রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে সেজন্য এই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিচারক ক্ষমতাও তারা লাভ করে। ফলে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ৷

(গ) নবাবের ক্ষমতা হ্রাস : ১৭৬৫ সালে কোম্পানি দেওয়ানি আদায়ের অধিকার লাভের ফলে বাংলার নবাব হয়ে পড়েন ক্ষমতাহীন। তার নিজস্ব কোনো সাময়িক বাহিনীও ছিল। না। শুধুমাত্র বাৎসরিক খরচ নির্বাহের জন্য তাকে ৫৩,৮৬,১৩১ লক্ষ টাকা দেওয়া হতো ।

(ঘ) কোম্পানির আর্থিক সমৃদ্ধি : দেওয়ানি লাভের ফলে কোম্পানির আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। কারণ নবাব ও সম্রাটের প্রতিশ্রুতি অর্থ পরিশোধের উদ্বৃত্ত রাজস্ব তারা নিজেদের বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করে।

(ঙ) আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি : কোম্পানি এতদিন বাংলার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য ইউরোপ থেকে সোনা আমদানি করতে হতো। কিন্তু দেওয়ানি লাভের ফলে তাদের এই উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে তারা পণ্য দ্রব্য আমদানি রপ্তানি করতে পারত। ফলে | ইউরোপ থেকে সোনা আমদানির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, দেওয়ানি লাভ ছিল লর্ড ক্লাইভের একটি রাজনৈতিক কূটকৌশল। এই কৌশলে সে বাংলার রাজস্ব আদায়ের অধিকার হস্তগত করার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে শাসন ক্ষমতাই দখল করে নেয় আর রাজস্বের উদ্বৃত্ত অর্থ পরে ব্রিটিশরা বাণিজ্য বিনিয়োগের মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করে। মূলত কোম্পানির দেওয়ানি লাভের ফলে বাংলায় ভাগ্যে অভিশাপ নেমে আসে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ সম্পর্কে আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ সম্পর্কে আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ সম্পর্কে আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ