আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইব্রাহীম বিন আখলাকের কৃতিত্ব নিরূপণ কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইব্রাহীম বিন আখলাকের কৃতিত্ব নিরূপণ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইব্রাহীম বিন আখলাকের কৃতিত্ব নিরূপণ কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইব্রাহীম বিন আখলাকের কৃতিত্ব নিরূপণ কর
আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইব্রাহীম বিন আখলাকের কৃতিত্ব নিরূপণ কর

আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইব্রাহীম বিন আখলাকের কৃতিত্ব নিরূপণ কর

  • অথবা, আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইব্রাহীম বিন আখলাকের মূল্যায়ন কর।

উত্তর : ভূমিকা : উত্তর আফ্রিকায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় আব্বাসীয় গভর্নর ইয়াজিদ বিন হাতিমের মৃত্যুর পরপরই। যার ফলে খলিফাগণ স্থানীয় শাসকদের শরণাপন্ন হন। 

এর ফলে খিলাফতের পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন রাজবংশের উদ্ভব হয় যার মধ্যে আঘলাবী রাজবংশ ছিল অন্যতম। এদের উত্থান মূলত অষ্টম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ইফ্রিকীয় উইলিয়াতে। 

আব্বাসীয় প্রতিনিধি ইব্রাহিম বিন আঘলারী আরবদের আধিপত্য ও প্রভুত্বের অবসান ঘটিয়ে ইফ্রিকিয়াতে খিলাফতের কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। ৮০০ খ্রিস্টাব্দে আঘলাবী শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।

আঘলাবী বংশের পরিচয় : আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ইব্রাহিম বিন আঘলাবী। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল ইবরাহিম ইবনুল আগলাব ইবনে সালিম ইবনে ইকলে আব্বু-তামীমী। তিনি ৮০০ সালে তার নিজ নামে আফ্রিকার পশ্চিম অঞ্চলে যে রাজবংশ প্রতিষ্ঠা। 

করেন ইতিহাসে সেই রাজবংশটি আঘলাী রাজবংশ নামে পরিচিত। তার পিতার নাম আল আগলাব। তিনি ছিলেন আব্বাসীয় খিলাফতের আঞ্চলিক শাসনকর্তা আবু মুসলিমের একজন সহচর। 

ইফ্রিকিয়াতে প্রেরিত আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুরের শাসনামলে খুরাসানি বাহিনীর অন্যতম সেনাপত্তি ছিলেন। ৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে ইবনুল আস-এর স্থলে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিযুক্ত হন তিনি। 

৭৬৭ সালে আল হাসান ইবনে হারব-এর বিদ্রোহকালে তিনি নিহত হন। দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর ৭৯৫ সালে খলিফা হারুন-অর- রশীদ আল আগলাবের পুত্র ইব্রাহীমকে জাব-এর শাসক নিযুক্ত করেন।

শাসক নিযুক্তির পর ইবনে মুকাভিলের বিদ্রোহ দমনে পুরস্কার হিসেবে বার্ষিক ৪০,০০০ দিনার কর প্রদানের শর্তে ইব্রাহীমকে এই প্রদেশের বংশানুক্রমিক শাসনাধিকার প্রদান করেন ১৯০৯ সাল পর্যন্ত স্থায়ী আঘলাবী বংশ কায়রোয়ানের নিকটবর্তী আব্বাসীয় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করে তাদের শাসন কার্য পরিচালনা করেন সাফল্যের সাথে ।

ইব্রাহীম বিন আমলাব তিনি আরব গোত্রের সদস্য ছিলেন। মিশর ও ইঞ্জিকিয়াতে প্রভুত্ব অর্জন করেন তিনি। আঘলাব ছিলেন তাঁর পারিবারিক পদবি। 

তাঁর এই নামানুসারে এই বংশের পরবর্তী শাসকদের নামকরণ করা হয়। ইব্রাহীম শৈশবকাল মিশরে কাটে এবং তিনি Jund বাহিনীতে যোগদান করেন। 

যোগ্যতা ও স্বাতন্ত্রের পরিচয় প্রদান করার জন্য তাকে ৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে Wilaya জান-এর Sub-govornor নিযুক্ত হন। যার ফলে ৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে কায়রোয়ানে প্রবেশ করে বিদ্রোহী বাহিনী Jund-কে দমন করেন যার ফলে খলিফার বিশ্বস্ততা অর্জন করে এবং স্থানীয় সমর্থন নিয়ে আঘলাবী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।

এ সম্পর্কে Sir T. W. Amold বলেছেন, "And North Africa from 800 partically became an independece kingdom under the governor who founded the Aghlabid dynasty and made his post hereditary in his family." (The Caliphate-P-57)

ইব্রাহীমের শাসনকাল। ইব্রাহীমের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ করেন ৮০২ খ্রিস্টাব্দে হামিদসের নেতৃত্বে বাবারবা। 

এই বিদ্রোহে ৩০,০০০-এর অধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে। শেষ পর্যন্ত ইব্রাহীম এই বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হন। ত্রিপোলীতে বিদ্রোহ সমন হামিনসের বিদ্রোহ দমন করার পর [ ৮০৫ খ্রি: ত্রিপোলীতে বিদ্রোহ দেখা দিলে তিনি তা দমন করেন।

তিউনিস ও কায়রো দখল ৮১১ খ্রিস্টাব্দে ইমরান মুজাহিদ রাবিয়ার নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা তিউনিস ও কায়রো দখল করে নেয়। পরে আব্বাসীয় খলিফার প্রেরিত সৈন্যবাহিনীর সহায়তায় এ বিদ্রোহ দমন সম্ভবপর হয়। 

অত্যন্ত বিচক্ষণ ও চারিত্রিক দৃঢ়তার অধিকারী ইব্রাহীম তার আবাস আল কায়রোয়ান থেকে সরিয়ে নৱনিৰ্মিত আল আব্বাসিয়া নগরীতে নিয়ে যান। তাঁর বারো বছরের রাজত্বকাল আব্বাসীয় খলিফার কর্তৃত্ব ছিল নামেমাত্র। তিনি কেন্দ্রীয় খিলাফতে নিয়মিত রাজস্ব প্রদান করতেন।

P.K. Hird-এর মতে, "The-al-Aghlab (800-811) ruled as an Independent Soverign and after the year of his appointment no Abbasid Caliph exercise outhority beyond the westem frontier of Egypt (History of the Arabs P-451)

আশারী বশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইব্রাহীম বিন আপনাদের কৃতিত্ব : একজন দক্ষ, বিচক্ষণ ও একটি ক্ষুদ্র রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি যেসব কৃতিত্ব রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন তা নিয়ে তুলে ধরা হলো :

১. সামরিক দুর্গ নির্মাণ : একজন শ্রেষ্ঠ সমরবিদ হিসেবে ইব্রাহীম বিন আখলাব ইফ্রিকিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্গ ও ঘাঁটি নির্মাণ করেন। তার এই পরিকল্পনাকে পরিপূর্ণ করেন পরবর্তী শাসক আৰু ইব্রাহিম আহমদ। 

তিনি আফ্রিকাতে প্রায় ১০,০০০ দুর্গ নির্মাণ করেন। এই দুর্গগুলো পাথর, চুন-সুরকির তৈরি ও লৌহ ফটক দ্বারা সুরক্ষিত ছিল।

২. পরিশ্রমী ও আত্মপ্রত্যয়ী : তিনি ছিলেন একজন পরিশ্রমী ও আত্মপ্রত্যয়ী শাসক। আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের আলজেরিয়ার জাব অঞ্চলটি ছিল দুর্গম ও প্রতিকূল পরিবেশে অবস্থিত। 

যার জন্য এই অঞ্চলে খারিজি বিদ্রোহ দেখা যায়। হারুন অর-রশিদ এর সময় তিনি এই সকল বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেন।

৩. স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা : ইব্রাহিম বিন আঘলাব ছিলেন স্থাপত্য শিল্পের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক। তার পরবর্তী শাসকগণ। তাকে অনুসরণ করেন স্থাপত্য শিল্পে। 

তিনি আল-কায়রোয়ানের বড় মসজিদ সংস্কার সাধন, মুসাতে আবু ফাতওয়া নামক একটি মসজিদ নির্মাণ, তিউনিশিয়ার বড় জামে মসজিদ নির্মাণসহ আরো কতিপয় ছোট মসজিদ নির্মাণ করেন।

৪. জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা : উত্তম বাগ্মী ও কবি হিসেবে সুপরিচিত ইব্রাহীম জ্ঞান-বিজ্ঞানেরও একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতা ছিলেন। আব্বাসীয় যুগ জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করেন। 

এই সময় কায়রোয়ান ধর্মীয় জীবনযাপন, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় ও সাহিত্য চর্চার একটি বিরাট কেন্দ্রে পরিণত হয়। 

এই যুগের ফিকহশাস্ত্রের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের নাম হলো : আসাদ, ইবনুল, ফুরাত, সাহনুন, ইউসুফ ইবনে ইয়াহইয়া, আৰু ফকারিয়া, ইহাহইয়া ইবনে উমার-আল কিনানী, ইসা ইবনে মিসকীন ইত্যাদি। সমস্ত ধর্মীয় গ্রন্থ কায়রোয়ানের বড় মসজিদ গ্রন্থাগারে রক্ষিত আছে।

৫. সাহসী যোদ্ধা ও কুশলী কুটনীতিক : আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে যখন খারিজী বিদ্রোহ দেখা দেয় সেই সাথে আলজেরিয়ার জাব অঞ্চলে যে বিদ্রোহ দেখা যায় তখন ইব্রাহীমকে জাব অঞ্চলের শাসনকর্তা নিয়োগ করা হলে তিনি বিদ্রোহ দমন করে কূটনৈতিকতার পরিচয় দান করেন।

৬. জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি : মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন শাসক ইব্রাহীম বিন আঘলাব তাঁর শাসনামলে জনগণের প্রদত্ত কর রাজ্যের নানাবিধ কল্যাণে ব্যয় করেন। 

তিনি সেখানে নবজাগরণের সূচনা করেন। যার মধ্যে অন্যতম পানি সেচ প্রকল্প । তিউনিশিয়ার দক্ষিণ দিকের শুষ্ক এলাকায় অবাধ পানি প্রবাহ সৃষ্টির মাধ্যমে সমৃদ্ধি আনয়ন করা হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ৮০০ খ্রিস্টাব্দে ইব্রাহিম বিন আঘলাব আঘলাবী রাজবংশের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উত্তর আফ্রিকার শাসনভার গ্রহণ করেন। 

এই তিনি আব্বাসীয় খলিফার আনুগত্য থেকে শাসনকার্য পরিচালনা করেন যার ফলে আব্বাসীয় খিলাফতকে স্বর্ণ যুগে পৌঁছে দিতে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইব্রাহীম বিন আখলাকের কৃতিত্ব নিরূপণ কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইব্রাহীম বিন আখলাকের কৃতিত্ব নিরূপণ কর। যদি তোমাদের আজকের আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইব্রাহীম বিন আখলাকের কৃতিত্ব নিরূপণ কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ