আল হাকিম এর পরবর্তী ফাতেমীয় খলিফাদের শাসন ব্যবস্থার বিবরণ দাও

আল হাকিম এর পরবর্তী ফাতেমীয় খলিফাদের শাসন ব্যবস্থার বিবরণ দাও
আল হাকিম এর পরবর্তী ফাতেমীয় খলিফাদের শাসন ব্যবস্থার বিবরণ দাও

আল হাকিম এর পরবর্তী ফাতেমীয় খলিফাদের শাসন ব্যবস্থার বিবরণ দাও

উত্তর : ইসলামের ইতিহাস পঠন-পাঠনে যে সকল বিষয় খুবই গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়, তার মধ্যে উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমীয় খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা অন্যতম। 

ইহা এমন একটি রাজনৈতিক বিষয় যা বিশ্বজীন এক ঘটনা। এ খিলাফতের কেজন বিতর্কিত শাসক ছিলেন খলিফা আল হাকিম। তবে তিনি বিতর্কিত শাসক হলেও তার সময়ে ফাতেমীয় সিংহাসন ছিল শক্তিশালী। 

তার মৃত্যুর পর বাকি খলিফাগণ নিয়ম রক্ষার্থে শুধু শাসন পরিচালিত করে গিয়েছেন। মূলত আল হাকিমের মৃত্যুর পর থেকেই এ খিলাফতের পতন শুরু হয়।

আল হাকিমের পরবর্তী ফাতেমীয় খলিফাদের শাসন প্রণালি : নিয়ে আল হাকিমের পরবর্তী ফাতেমীয় খলিফাদের শাসনপ্রণালী আলোচনা করা হলো।

১. আল জহির (১০২১-১০৩৬) : আবুল হাসান আলী, তার পিতা আল হাকিমের মৃত্যুর পর আল জহির উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে আরোহন করলেন। 

নতুন খলিফার বয়স মাত্র ১৬ বছর হওয়ার তার ফুফু সও উল মূলক চার বছর পর্যন্ত তাঁর নামে রাজ্যশাসন করেন। 

সুন্নিদেরকে তাদের ধর্মপালনে বাধা দেয়া হত না। আল জাহির-পিতার মত যেমন ছিলেন নিষ্ঠুর তেমনি ছিলেন বিলাসী।

২. আল মুনতাসির (১০৩৫-১০৯৪) : আল জাহিরের মৃত্যুর পর তার সাত বছর বয়স্ক পুত্র আল মুনতাসির সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং গ্রিকদের সাথে পূর্ব সন্ধি নতুন করে করেন এবং শর্ত মোতাবেক গ্রিক সম্রাট ৫,০০০ বন্দী মুসলমানকে মুক্তিদান করেন। 

এর পর আল মুনতাসির নিশ্চিত মনে এক বিরাট বাহিনী নিয়ে আলেপ্পো উদ্ধারে যাত্রা করলেন এবং নানারকম বাধা অতিক্রম করে ১০৩৮ খ্রিস্টাব্দে আলেপ্পো পুনরাধিকার করেন। 

বাসাসিরদের বিদ্রোহ এবং আব্বাসীয় শাসনকর্তা আল কাইমের সঙ্গে যুদ্ধের ফলে আল মুনতাসির অলপকালের জন্য ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। 

কিন্তু পশ্চিম এশিয়ার আব্বাসীয় শাসনের প্রবর্তক তুঘরিলের আগমনের ফলে তার সকল ক্ষমতার অবসান পটে। খলিফা আল মুনতাসিরের শাসনামলের শেষ দিকটা ছিল বিশৃঙ্খলাপূর্ণ।

৩. আল মুসতালী (১০৯৪-১১০১ খ্রিঃ) : খলিফা আল মুসতানসিরের মৃত্যুর পর তার পুত্রদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ভাই নাজ্জারকে ক্ষমতাচুত করে আল মুসতালি জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করেন।

১০৯৯ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টানরা ৪০ দিন ধরে বায়তুল মুকাদ্দাস অবরোধ করে দখল করে এবং ৭০ হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হয়। খলিফা আল মুসতালি বায়তুল মুকাদ্দাস পুনঃদখলে ব্যর্থ হন।

৪. আৰু আমির আলী (১১০১-১১৩০ খ্রিঃ) : ১১০১ খ্রিস্টাব্দে খলিফার মৃত্যু হলে তার ৫ বছর বয়সী পুত্র আবু আমির আলী সিংহাসনে উপবিষ্ট হন। বায়তুল মুকাদ্দাস দখলে ব্যর্থ হওয়ায় ১১২১ খ্রিস্টাব্দে আৰু আমির আলী তার প্রধানমন্ত্রী ও অভিভাবক মালিক শাহকে হত্যা করেন।

৫. আল হাফিজ (১১৩০-১১৪৯ খ্রিঃ) : খলিফা আল হাফিজ একটু ক্ষণপাটে স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কয়েকজন মন্ত্রীকে হত্যা করেন এবং নিজ পুত্রকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। 

পরে তার পুত্রকে সরিয়ে সুন্নি মতাবলম্বী রেজওয়ানকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। এ সময় শিয়া- সুন্নি দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ১১৪৯ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।

৬. আল জাফির বিল্লাহ (১১৪৯-১১৫৪ খ্রিঃ) : পিতা আল হাফিজের মৃত্যুর পর তার পুত্র আল জাফির বিল্লাহ সিংহাসনে বসেন। তিনি আদিল নামের ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। 

খলিফা তার উপর সব প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ছেড়ে দিয়ে দাবা খেলায় মত্ত হয়ে পড়েন। ১১৫৩-১১৫৪ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টানরা আসকালান দখল করে নেয় ।

৭. আল ফাহিজ নাসারিল্লাহ (১১৫৪-১১৬০ খ্রিঃ) : খলিফা আল জাফির বিল্লাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র আল ফায়িজ নাসারিল্লাহকে প্রধানমন্ত্রী আব্বাস ক্ষমতায় বসায়। 

নাফসার শাসনকর্তা সালিহ ইবনে যুবায়ের রাজ পরিবারের সাহায্যে স্বসৈন্য রাজধানী কায়রো এলে প্রধানমন্ত্রী আব্বাসও সপরিবারে পালিয়ে যান। 

আস সালিহ প্রভাবশালী বিদ্রোহী কর্মকর্তাদের হত্যার আদেশ দিলে তারা কায়রো থেকে পালিয়ে যান। এমনকি রাজপ্রাসাদের দারোয়ান, খাদেমসহ সব কর্মচারীদেরকে বরখাস্ত করা হয় ।

৮. আল আদিদ ( ১১৬০-১১৭১ খ্রিঃ) : খলিফা আল ফায়িজের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী সালিহ আল আদিদকে সিংহাসনে বসান। আল আদিদ ক্ষমতায় বসলেও প্রধানমন্ত্রী সালিহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। 

খলিফা আল আদিদের ছোট ফুফুর ষড়যন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী আস সালিহ নিহত হন। এ সময় অভ্যরীণ ও বহিঃশত্রুর উত্থান ঘটে। এর ফলে ১১৭১ খ্রিস্টাব্দে ফাতেমীয় খিলাফতের পতন ঘটে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উত্তর আফ্রিকায় যে উদ্দেশ্য নিয়ে ফাতেমীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো তা অনেকটাই মলীন হয় খলিফা আল হাকিমের মৃত্যুর মাধ্যমে। 

তার মৃত্যুর পর কোন যোগ্য শাসক ছিলেন না। ফলে বিভিন্ন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় এ খিলাফত। 

তথাপি এ খিলাফতের সর্বশেষের দিকে শাসকগণ ক্ষুদ্রভাবে হলেও, তাদের কার্যের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে আছেন ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ