পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা করো

পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা করো
পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা করো

পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা করো

  • অথবা, পলাশির যুদ্ধের উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর। 

উত্তর : ভূমিকা : ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর তরুণ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর আরোহণের অল্পদিনের মধ্যেই ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে তার বিরোধের সৃষ্টি হয়। 

এই বিরোধের চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ। এ যুদ্ধ নিছক একটি যুদ্ধ ছিল না। এ যুদ্ধ ছিল একটি যুগান্তরকারী ঐতিহাসিক ঘটনা। 

পলাশির যুদ্ধের পটভূমি : নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার শাসনকালের অল্প কিছুদিনের মধ্যে ইংরেজ কোম্পানির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির আম্রকাননে ইংরেজ কোম্পানি ও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাই ইতিহাসে পলাশির যুদ্ধ নামে খ্যাত। 

নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো :

বহুবিধ কারণ ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ সংঘটনে ভূমিকা রেখেছিল।

প্রথমত, সিরাজ-উদ-দৌলা যখন বাংলার নবাব হন তখন মুঘল ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুসারে ফরাসি, ডাচ কোম্পানি এবং বাংলার জমিদাররা নতুন নবাবকে উপহার-উপঢৌকন নিয়ে অভিনন্দন জ্ঞাপন করে; কিন্তু কলকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষ তা করেনি।

দ্বিতীয়ত, জাহাঙ্গীনগরের নিউয়ান রাজবহুতের পুত্র কৃষ্ণদাস সরকারি কোষাগার থেকে ৫৩ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে কলকাতায় পালিয়ে গিয়ে ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করে। 

১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল সিরাজ কৃষ্ণদাসকে তার হাতে অর্পণ করার জন্য কলকাতার ইংরেজ গভর্নর ড্রেককে নির্দেশ দেন। কিন্তু ড্রেক নবাবের আদেশ অমান্য করে।

তৃতীয়ত, নবাব আলীবর্দী খান ইউরোপীয় বণিকদেরকে তার রাজ্যে দুর্গ নির্মাণ করতে অনুমতি দেননি। আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর ইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের আশঙ্কায় নবাবের বিনা অনুমতিতে ইংরেজরা ও ফরাসিরা চন্দননগরে দুর্গ নির্মাণ করতে শুরু করে। 

নবাব অবিলম্বে ইংরেজ ও ফরাসিসের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ফরাসিরা নবাবের আদেশ মানলেও কলকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষ নবাবের আদেশ অমান্য করে এবং ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নতুনভাবে নির্মাণ করে।

চতুর্থত, মুঘল সম্রাট ফররুখশিয়ার ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে এক ফরমান দ্বারা ইংরেজ কোম্পানিকে বিনা শুল্কে সমগ্র ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অধিকার প্রদান করেন। 

বিমাতঙ্কে আমদানি-রপ্তানির সুবিধার জন্য কোম্পানিকে যে ছাড়পত্র দেওয়া- হয়েছিল তা দত্তক নামে পরিচিত। নবাব সিরাজের সময়ও এ ব্যবস্থা বহাল ছিল। 

কিন্তু সিরাজ লক্ষ করলেন, কোম্পানির কর্মচারীরা বোঝাপড়ার শর্ত অমান্য করে ব্যক্তিগত ব্যবসা করছে এবং কর ফাঁকি দিচ্ছে। 

এর ফলে নবাবের রাজকোষের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। নবাব ইংরেজ গভর্নর ড্রেককে দন্তকের অপব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। 

কিন্তু ড্রেক তা অগ্রাহ্য করেন। এর ফলে নবাব ইংরেজদের প্রতি ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হন। যার পরিণতিতে ১৭৫৭ সালে সংঘটিত হয় পলাশির যুদ্ধ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজের সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়ে যে সংঘাতের সূচনা হয়েছিল তা ইংরেজনের চরম উদ্ধত্যতার জন্য একসময় প্রকট আকার ধারণ করে এবং এর ফলশ্রুতিতে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন এ দুপক্ষের মধ্যে সংঘটিত হয় পলাশির যুদ্ধ। 

যুদ্ধে নবাবের পরাজয় আর কোম্পানির জয় হয়। যার ফলে বাংলায় স্বাধীন সূর্য অস্তমিত হয়। এ যুদ্ধের ফলে বাংলায় দুশো বছরব্যাপী ইংরেজ শাসনের সূত্রপাত হয় এবং বাংলার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ইংরেজ অধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। 

ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার লিখেছেন, “১৭৫৭ সালের ২৩ জুন তারিখে ভারতবর্ষে মধ্যযুগের অবসান হয়ে আধুনিক যুগের পত্তন হয়েছিল।”

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ