বাংলার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বাংলার জনগণ ও ইতিহাসের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলে তা ব্যাখ্যা কর

 

বাংলার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বাংলার জনগণ ও ইতিহাসের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলে তা ব্যাখ্যা কর
বাংলার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বাংলার জনগণ ও ইতিহাসের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলে তা ব্যাখ্যা কর

বাংলার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বাংলার জনগণ ও ইতিহাসের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলে তা ব্যাখ্যা কর

উত্তর : ভূমিকা : মানুষের জীবনযাত্রার সাথে ভৌগোলিক পরিবেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলা বলতে বিস্তৃত এক ভূখণ্ডকে বোঝাতো। 

প্রাথমিক পর্যায়ে তাই ভূখণ্ডের মধ্যে বিভিন্ন ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যামান ছিল। এ বৈশিষ্ট্য মানুষের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলে। 

ভূগোল ও ইতিহাসের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। মানুষের কর্মকাও এক বিশেষ ভৌগোলিক পরিবেশে সংঘটিত হয়। তাই ভূগোলই ইতিহাসের ভিত্তি। 

বাংলার জনগণ ও ইতিহাসের উপর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই ভূগোল জনগণ ও ইতিহাসের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।

বাংলার জনগণ ও ইতিহাসের উপর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যর প্রভাব : ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য বাংলার জনগণকে করেছে বীরের জাতি, ইতিহাসকে করেছে চিরস্মরণীয়। 

নিচে বাংলার জনগণ ও ইতিহাসের উপর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের প্রভাব বর্ণনা করা হলো :

১. নদ-নদীর প্রকৃতি : বাংলার ভূ-প্রকৃতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নদীর। বাংলার বিস্তৃত ভূ-ভাগ জুড়ে রয়েছে নদী। বাংলার মানুষকে সংগ্রামী করে তুলেছে নদী। 

নদীর সাথে যুদ্ধ করে তাই বাঙালি জাতি হয়েছে যোদ্ধাজাতি। নদীবর্তী এলাকার মানুষ অন্য এলাকার মানুষ হতে সাহসী, পরিশ্রমী, নির্ভীক হয়। 

নদী দ্বারা বেষ্টিত থাকায় বঙ্গবাসীরা নৌকা নির্মাণ ও পরিচালনায় দক্ষ হয়ে উঠে। এর ফলে শাসকরা নৌবাহিনী তৈরি করে। বাংলার ইতিহাসের উপর নদীর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। 

বাংলায় রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য নদী। এই নদ-নদীগুলোই বাংলার প্রাণ। বাংলার আকৃতি-প্রকৃতি নির্ণয় করছে যুগে যুগে, এখন ও করছে। 

বাংলার প্রধান নদীগুলোর স্রোতধারা বাংলাকে উত্তর পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব এ চার ভাগে বিভক্ত করেছে। বাংলার নদীর তীরে গড়ে ওঠেছে জনপদ, শহর, নগর ও বন্দর। 

এগুলো বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে। নদী বাংলার ভূমিকে উর্বর করেছে। ফলে নদীকে ঘিরে জনজীবন গড়ে উঠে।

২. পাহাড়ের প্রকৃতি : বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের অন্যতম দিক হলো পাহাড়। পাহাড় বাংলার জনগণ ও ইতিহাসের উপর প্রভাব ফেলে। 

পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী জনগণ খুব সাহসী ও পরিশ্রমী হয়। তারা পাহাড়কে কেন্দ্র করে বসবাস করে। পাহাড়ের পাদদেশে চাষাবাদ করে এসব পাহাড়ি মানুষ জীবনধারণ করে। 

পাহাড়ে মানুষ জীবনধারণ করে পাহাড়ের সাথে সংগ্রাম করে এসব মানুষ হয়েছে সংগ্রামী। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বাংলাদেশের বান্দরবান ও রাঙামাটি ইত্যাদি এলাকার পাহাড়ি মানুষ।

৩. বনভূমির প্রভাব : বাংলার অধিবাসী ও ইতিহাসের উপর বনভূমির প্রভাব অপরিসীম। চট্টগ্রামের পার্বত্য বনভূমি, সিলেটের পাহাড়ি বন, ময়মনসিংহের গজারি বন বাংলার ইতিহাসকে করেছে সমৃদ্ধ।

বনভূমি আর পার্শ্ববর্তী এলাকায় জনগণকে করেছে কর্মঠ, সাহসী। বাংলার আবহাওয়াকে করেছে সতেজ। আমরা আজ বনভূমির ফলে এ পৃথিবীতে টিকে আছি। 

যদি বনভূমি না থাকত তবে বাংলার মাটিতে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেত না। বনভূমির কারণে ইতিহাসের পাতায় বাংলাদেশের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। সুন্দরবন পৃথিবীর অন্যতম বন। যা বাংলার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করছে।

৪. সমুদ্র ও সাগরের প্রভাব : সমুদ্র ও সাগর বাংলাকে করেছে সোনার বাংলা। বাংলার মাটিকে করেছে উর্বর। যার ফ বিশাল জনগোষ্ঠী আজ বাংলার মাটিতে টিকে আছে। 

সাগরের বিশালতা মানুষের মনকে করেছে উদার। বাংলার সৌন্দর্য্যকে বহুগুণ বাড়িয়েছে। সমুদ্র সৈকত দেখার জন্য হাজার হাজার পর্যটক সমুদ্র উপকূলে আসে। 

এর ফলে সমুদ্রকে ঘিরে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক কেন্দ্র। কর্মঠ ও সাহসী ইতিহাসে পাহাড়ের প্রভাব রয়েছে। পাহাড় বাংলার সীমারেখা নির্ধারণ করেছে। বিদেশিদের কাছ থেকে দেশকে রেখেছে নিরাপদ। পাহাড়গুলো দেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।

৫. সীমান্ত প্রকৃতি : সীমান্ত প্রকৃতি বাংলার জনপদ ও ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে। বাংলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন, উত্তরে হিমালয়, পূর্বে আসাম ও ত্রিপুরার পর্বতমালা এবং পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড বনভূমি ছিল। 

যা বাংলাকে বিদেশিদের হাত থেকে রক্ষা করেছে। এ প্রকৃতি ঘেরা বাংলাকে আক্রমণ করতে বিদেশিরা সাহস করতো না।

৬. আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব : বাংলার জনগণ ও ইতিহাসের উপর আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষাকালে বন্যা, ঝড় ও নদীর ভাঙাপড়ার সাথে লড়াই করে এদেশের মানুষ হয়েছে সংগ্রামী। 

বাংলার উপর দিয়ে কর্কটক্রপ্তি রেখা অতিক্রম করেছে, ফলে এদেশের আবহাওয়া হয়েছে মৃদু ও নাতিশীতোষ্ণ। 

মৌসুমির বায়ুর প্রভাবে এদেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়। এর ফলে কৃষকেরা সহজে বৃষ্টির পানিতে চাষাবাদ করতে পারে। জলবায়ু এদেশের ইতিহাসের উপর প্রভাব ফেলে।

৭. পর্বত ও দ্বীপভূমির প্রভাব : বাংলার সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়েছে পবর্ত ও দ্বীপভূমি। বাংলার সমভূমি ও পর্বত বাংলার ভূমিকে করেছে উর্বর। 

বাংলা মূলত বদ্বীপ। যার ফলে বাংলা এত উর্বর। বাংলার মাটিতে যা উৎপন্ন হয় অন্য কোথাও তা উৎপন্ন হয় না। এ উর্বর ভূমিকে কেন্দ্র করে জনজীবন গড়ে উঠেছে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুজলা, সুফলা, শস্য- শ্যামলা এই বাংলার ভূ-প্রকৃতি বাংলাকে করেছে মহান। বাংলার জনগণ এ উর্বর ভূমি ব্যবহার করে জীবনধারণ করেছে। 

বাংলার এ ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য একদিকে যেমন বাংলাকে বৈদেশিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছে তেমনি অন্যদিকে বাংলার মানুষকে করেছে উদার, কর্মঠ, চরিত্রবান ও সংগ্রামী।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ