প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর পরিচিত স্থান পর্যালোচনা কর

প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর পরিচিত স্থান পর্যালোচনা কর
প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর পরিচিত স্থান পর্যালোচনা কর

প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর পরিচিত স্থান পর্যালোচনা কর

  • অথবা, প্রাচীন বাংলার জনপদসমূহের পরিচিত স্থান সম্পর্কে বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার পুরো বাংলা জুড়ে একক কোনো রাষ্ট্র গড়ে উঠেনি। অর্থাৎ বাংলাদেশ বলতে একক কোনো জনবসতির নামাঞ্চল তখন ছিল না। 

তাই বাংলা বা বাংলাদেশ নামে এখন যে এলাকা বা অঞ্চলটিকে বুঝায়, তেমন কোনো স্বাধীন বা সার্বভৌম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব তখন ছিল না। 

এখানে ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চল বা রাজ্য। প্রতিটি অঞ্চলের শাসকগণ যে যার মতো শাসক করতো। তবে শাসকগণ যে রাজ্য বা এলাকা শাসন করেছিল সে সময়ে এগুলোর নাম ছিল জনপদ।

প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর পরিচিত স্থান : প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে ছিল পুত্র, গৌড়, রাঢ়, সমতট, হরিকেল, বরেন্দ্র প্রভৃতি। বিভিন্ন সময়ে এসব জনপদের সীমানা ও বিস্তৃতি পরিবর্তিত আকার বা আয়তনে রূপান্তরিত হয়েছিল। 

ড. মজুমদার বলেছেন, "প্রাচীন যুগ থেকে বাংলা চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত ছিল।" 

নিচে প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর পরিচিত স্থান তুলে ধরা হলো :

১. পুণ্ড্রবর্ধন : পুঞ্জকে মূলত একটি জাতি হিসেবে বলা হতো। প্রাচীন বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনপন হলো পুণ্ড্র। পুণ্ড্ররা এ জনপদটি গড়ে তোলে। 

বৃহত্তর রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, ভারতের কুচবিহার অঞ্চল নিয়ে এ পুত্র জনপদটি সৃষ্টি হয়েছে। পাথরের চাকতিতে খোদাই করা বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় পাওয়া যায়।

২. রাড় : রাড় জনপদটি গড়ে উঠেছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে। রাঢ় এলাকার দক্ষিণে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার তামলিপ্ত ও পথভুক্তি নামের দুটি স্বাধীন দেশ ছিল, যা অনেক সময় বঙ্গ অথবা রাঢ় এলাকার অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়।

৩. বঙ্গ : প্রাচীন বঙ্গ জনপদ ছিল খুবই শক্তিশালী অঞ্চল । বঙ্গ জনপদটি বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ঢাকা, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ জেলার এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল। 

অনুমান করা হয় যে, বঙ্গ নামে একটি জাতি ছিল এবং তারাই বঙ্গ জনপদটির সৃষ্টি করে। তবে এ সত্য অনেকটা নিশ্চিত যে, পশ্চিমে ভাগীরথী ও পূর্বে পদ্মা এবং নিম্ন ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের নাম ছিল বঙ্গ বা গঙ্গানদী।

৪. সমতট : সমতট ছিল মেঘনার পূর্বদিক। দক্ষিণ বাংলা ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম বিভাগকে নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত হয়। চীন দেশীয় পর্যটক হিউয়েন সাং সপ্তম শতকের মাঝামাঝিতে সমতট ভ্রমণ করে একটি বিবরণ লিখেছেন। 

হিউয়েন সাং বলেছেন, সমতট আসলে প্রাচীন বঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি নতুন রাজ্যের নাম।

৫. তাম্রলিপ্ত : তাম্রলিপ্ত পশ্চিম বাংলার মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত। প্রাচীন যুগে এটি ছিল মূলত বাংলার বন্দর।

৬. হরিকেল : হরিকেল রাজ্যের জনপদের বর্ণনা দিয়েছেন হেমচন্দ্র ও হিউয়েন সাং। তারা বলেছেন বাকেরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও শ্রীহট্ট নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত ছিল। 

অনেকে মনে করেন সিলেট বা শ্রীহট্ট জেলার নাম ছিল হরিকেল। হরিকেল রাজ্যটি শ্রীহট্ট পর্যন্ত বিস্তার লাভ করলেও অনেকেই মনে করে যে, হরিকেল আলাদা কোনো জনপদ নয়।

৭. চন্দ্রদ্বীপ : চন্দ্রদ্বীপ বর্তমান বাংলাদেশের বরিশাল জেলার অংশবিশেষের মধ্যে সীমাবদ্ধ। চন্দ্রদ্বীপ ছিল একটি উল্লেখ্যযোগ্য স্থানের নাম।

৮. গৌড় : গৌড় অঞ্চল নিয়ে সঠিকভাবে জানা যায় নি। তবে উত্তর ও পশ্চিম বাংলার কিছু অংশ নিয়ে এ জনপদ গড়ে উঠেছিল বলে অনেকে মনে করেন। পাল যুগে এ গৌড় জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়। পাল ও সেন রাজাদের উপাধি ছিল গৌড়েশ্বর।

৯. বরেন্দ্র : প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে বরেন্দ্র ভূমি নামে আরো একটি জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়। অনেকে মনে করেন এটি পুণ্ড্র জনপদেরই অংশবিশেষ। গঙ্গা ও করতোয়া নদীর মধ্যভাগের উচ্চভূমি বরেন্দ্র নামে পরিচিত ছিল।

১০. বঙ্গাল : বঙ্গ এবং বঙ্গাল এই দুটি জনপদের নাম আলাদা হিসেবে মত দিয়েছেন তারিখ-ই-ফিরোজশাহী গ্রন্থ সম্ভবত এ বঙ্গাল থেকেই মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনের সমগ্র বঙ্গ সুবাহ বা সুবা বাঙ্গালা ।।

উপসংহার : প্রাচীনকালে এ বাংলা বিভিন্ন জনপদে বিভক্ত ছিল। সে সময় বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জনপদ গড়ে উঠেছিল। এসব জনপদগুলো বিভিন্ন শাসকগণ করেছিলো। 

বঙ্গের বাইরে বাঙালি বলতে গৌড়িয়া বা গৌড় দেশকে বুঝতে। পরবর্তীকালে বাংলার বিভিন্ন জনপদ তারা পুরাতন ভূরাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় স্বাতন্ত্রের বিলোপ সাধন করে বঙ্গের সাথে একীভূত হয় এবং বঙ্গ বা বাংলা নামের পরিচিতি শাসন লাভ করে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ