বাংলায় শিক্ষাক্ষেত্রে চার্লস উড এর ডেসপ্যাচের বিবরণ দাও
বাংলায় শিক্ষাক্ষেত্রে চার্লস উড এর ডেসপ্যাচের বিবরণ দাও |
বাংলায় শিক্ষাক্ষেত্রে চার্লস উড এর ডেসপ্যাচের বিবরণ দাও
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন ভারতে শিক্ষাদীক্ষার তেমন কোনো সুযোগ ছিল না বললেই চলে। সমাজে গতানুগতিক ধারার শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। সাধারণত ধর্মীয় বিষয়ে মানুষ জ্ঞানার্জন করতো।
তবে ব্রিটিশ প্রবর্তিত পাশ্চাত্য শিক্ষা সমাজে প্রভূত পরিবর্তন আনয়ন করে। তাই শিক্ষার উন্নতি ও প্রসারের জন্য চার্লস উড কিছু সুপারিশ করে যা উডের ডেসপ্যাচ নামে পরিচিত।
- চার্লস উড ডেসপ্যাচ-এর শিক্ষানীতির সুপারিশ : নিম্নে চার্লস উড ডেসপ্যাচ-এর শিক্ষানীতির সুপারিশগুলো আলোচনা করা হলো :
১. জনশিক্ষা বিভাগ : চার্লস উডের নতুন পরিকল্পনার সুপারিশে নতুন জনশিক্ষা বিভাগ গঠন করার কথা বলা হয়। এটা একটা সম্পূর্ণ পৃথক বিভাগ হবে। আর যার পরিচালনা করবেন একজন পরিচালক।
তার অধীনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা থাকবে। আর প্রতি বছর এই পরিচালক নিজ নিজ প্রদেশের শিক্ষার অগ্রগতির রিপোর্ট সরকারকে পেশ করবেন।
২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : উড তার ডেসপ্যাচে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সুপারিশ করেন। আর তা হলো কলকাতা মাদ্রাসা ও মুম্বাইয়ে বেশি বেশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
যা ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে পরিচালিত হবে। যেখানে একজন চ্যান্সেলর থাকবে। সিনেট কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হবে।
এই সিনেট গঠিত হবে কেলোদের নিয়ে। পরীক্ষা পরিচালনা ও ডিগ্রি প্রদান হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ ।
৩. শিক্ষার স্তরবিন্যাস : উড তার সুপারিশে শিক্ষার স্তরবিন্যাস করার কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হবে সর্বোচ্চ শিক্ষার স্তর। এছাড়া মাধ্যমিক স্তরে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
আর শিক্ষার সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষা। এছাড়া তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোতে কলা ও বিজ্ঞানের বিষয় পাঠদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৪. সরকারি অনুদান : উষ্ণ তার সুপারিশে শিক্ষা বিস্তারে সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা দিতে হবে।
উত্তম পরিচালনার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সরকারি কর্মচারী নিয়ে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাজ থেকেও কিছু বেতন নিতে হবে।
৫. শিক্ষক প্রশিক্ষণ : শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। তাদের বেশি বেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতন ও বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তারা শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়।
৬. নারী শিক্ষার প্রসার : উড তার ডেসপ্যাচে নারী শিক্ষার প্রসারে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। হিন্দু-মুসলিম সকল সমাজে নারী শিক্ষার আরও বেশি প্রসারের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সমাজ সচেতনতার সৃষ্টি করতে হবে।
৭. বৃত্তিমূলক শিক্ষা : এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন। এসব কলেজে সাধারণ ও পাশ্চাত্য শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। আইন, চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারের সুপারিশে ডেসপ্যাচে ছিল।
— চার্লস উড ডেসপ্যাচ ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার : ১৮৫৪ সালে বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ভারতীয় শিক্ষা নীতির উপর একটা ডেসপ্যাচ পাঠান। আর এতে তিনি উল্লেখ করেন ভারতীয়দের শিক্ষিত করা আমাদের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, শিক্ষা বিস্তারের কাজ হলো সংস্কারের কাজ। তাই তত্ত্বের উপর নির্ভর না করে শিক্ষা বিস্তারে তিনি সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথা বলেন। এজন্য তিনি এক গুচ্ছ সুপারিশ করেন। তার সুপারিশকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(i) পুরাতন দ্বন্দ্ব নিরসন ও
(ii) নতুন পরিকল্পনা ।
(i) পুরাতন দ্বন্দ্ব নিরসনে তার সুপারিশসমূহ :
(ক) ভারতীয় শিক্ষানীতির লক্ষ্য :
১. ভারতীয়দের শিক্ষিত করা কোম্পানির নৈতিক দায়িত্ব।
২. ভারতবর্ষে শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অধস্তন দক্ষ ও বিশ্বস্ত সরকারি কর্মচারী পাওয়া যাবে।
৩. ভারতীয়দের শিক্ষা বিস্তারে শুধু তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে না। এখানে ইংল্যান্ডের স্বার্থ জড়িত থাকবে।
(খ) শিক্ষাবিস্তারের ভাষা হবে দেশীয় এবং ইংরেজি
(গ) হিন্দু-মুসলিম আইন ও ভাষা শিক্ষার জন্য প্রাচ্য এবং জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষা দরকার।
(ii) নতুন পরিকল্পনা প্রণয়নে তার সুপারিশ :
১. জনশিক্ষা বিভাগ : চার্লস উডের নতুন পরিকল্পনার সুপারিশে নতুন জনশিক্ষা বিভাগ গঠন করার কথা বলা হয়। এটা একটা সম্পূর্ণ পৃথক বিভাগ হবে। আর যার পরিচালনা করবেন একজন পরিচালক।
তার অধীনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা থাকবে। আর প্রতি বছর এই পরিচালক নিজ নিজ প্রদেশের শিক্ষার অগ্রগতির রিপোর্ট সরকারকে পেশ করবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : উত্ত তার ডেসপ্যাচে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সুপারিশ করেন। আর তা হলো কলকাতা মাদ্রাসা ও মুম্বাইয়ে বেশি বেশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
যা ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে পরিচালিত হবে। যেখানে একজন চ্যান্সেলর থাকবে। সিনেট কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হবে। এই সিনেট গঠিত হবে কেলোদের নিয়ে। পরীক্ষা পরিচালনা ও ডিগ্রি প্রদান হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কা
৩. শিক্ষার স্তরবিন্যাস : উত তার সুপারিশে শিক্ষার স্তরবিন্যাস করার কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হবে। সর্বোচ্চ শিক্ষার স্তর। এছাড়া মাধ্যমিক স্তরে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
আর শিক্ষার সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষা। এছাড়াও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোতে কলা ও বিজ্ঞানের বিষয় পাঠদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৪. সরকারি অনুদান : উদ্ভ তার সুপারিশে শিক্ষা বিস্তারে সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা দিতে হবে।
উত্তম পরিচালনার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সরকারি কর্মচারী দিয়ে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাজ থেকেও কিছু বেতন নিতে হবে।
৫. শিক্ষক প্রশিক্ষণ : শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। তাদের বেশি বেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতন ও বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তারা শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়।
৬. নারী শিক্ষার প্রসার : উড তার ডেসপ্যাচে নারী শিক্ষার প্রসারে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। হিন্দু-মুসলিম সকল সমাজে নারী শিক্ষায় আরও বেশি প্রসারের ব্যবস্থা করতে | হবে। এজন্য সমাজ সচেতনতার সৃষ্টি করতে হবে।
৭. বৃত্তিমূলক শিক্ষা : এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন। এসব কলেজে সাধারণ ও পাশ্চাত্য শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। আইন, চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারের সুপারিশ তার ডেসপ্যাচে ছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্লস উড তার ডেসপ্যাচে যে সকল সুপারিশের কথা বলেন তার বিবেচনায় তার এই ডেসপ্যাচকে ভারতে শিক্ষাক্ষেত্রে ম্যাগনাকার্টার সাথে তুলনা করা হয়।
ভারতে পাশ্চাত্য ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিস্তারে তিনি যে সুপারিশ করেন পরবর্তীতে তা অনুসরণ করেই ভারতে শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ নেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উন্নত এবং আধুনিক শিক্ষা প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যদিও ভারতে শিক্ষা বিস্তারের ফলে কোম্পানি লাভবান হয়েছিল কিন্তু ভারতীয়দের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। তারা জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত হয়ে উঠে।