চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপর বাংলার আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাখ্যা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপর বাংলার আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপর বাংলার আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাখ্যা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপর বাংলার আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাখ্যা কর
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপর বাংলার আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাখ্যা কর

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপর বাংলার আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাখ্যা কর

উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসনামলে যে কয়জন গভর্নর নিজেদের জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন গভর্নর ছিলেন লর্ড কর্ণওয়ালিশ। 

১৭৮৬ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশকে বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করেন। তিনি বাংলায় আসার পর বাংলার বিশৃঙ্খল ভূমি রাজস্বনীতির একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। 

পরে দীর্ঘ আলোচনা পর্যালোচনা পর ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যকর করা হয়। এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বাংলার সমাজ ও অর্থনীতির উপর একটা মারাত্মক প্রভাব পড়ে।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : ১৭৬৫ সালে কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করে দ্বৈত শাসনের প্রবর্তন করেন। কিন্তু দ্বৈত শাসনের ব্যর্থতার ফলে সমগ্র দেশে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দেখা দেয়। 

ফলে এই দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংসকে বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করে পাঠানো হয়। তিনি বাংলার এসে পঞ্চসালা বন্দোবস্ত করলে তা ব্যর্থ হয় এবং ১৭৮৬ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশকে বাংলার গভর্নর করে পাঠানো হয়। 

তিনি বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থা পর্যালোচনা করে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পক্ষেই রায় দেন। তিনি ১৭৯০ সালে দশসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করে বলেন যদি কোম্পানির ডাইরেক্টর সভা অনুমোদন দেন তবে এই দশসালাকেই তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রূপ দেবেন। 

অবশেষে ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ ডাইরেক্টরির অনুমোদনক্রমে তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দান করেন।

→ বাংলার অর্থনীতির উপর প্রভাব : বাংলার অর্থনীতির উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। 

নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :

১. কৃষি কাজের অবনতি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের একটি উদ্দেশ্যে ছিল জমিদারগণ জমিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন সাধন করবেন। কিন্তু পরে দেখা গেল কৃষির উন্নয়ন নয়, বরং অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনই ছিল জমিদারদের মূল লক্ষ্য, ফলে কৃষিকাজের চরম অবনতি ঘটে।

২. কৃষকরা অধিকার বঞ্চিত : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদার চিরস্থায়ীভাবে জমির মালিক হয় এবং আর সাধারণ কৃষকরা তাদের নিজেদের জমিতে ভাড়াটিয়াতে পরিণত হয়।

৩. সরকারের আর্থিক ক্ষতি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় সরকারের রাজস্ব নির্ধারণ করে নেয়া হয়। কিন্তু পরে জমির দাম বাড়লে সরকার আর জমির রাজস্ব বাড়াতে পারেনি। ফলে প্রতি বছর সরকার প্রচুর ভূমি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় ।

৪. অর্থনৈতিক বিকাশ ব্যাহত : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ব্যাহত হয়। কারণ জমিদাররা জমির চিরস্থায়ী মালিকানার কোনো গ্যারান্টি না থাকার কৃষকরা চাষাবাদের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন। ফলে অর্থনৈতিক বিকাশ দারুণভাবে ব্যাহত হয়।

৫. কৃষক নিপীড়ন : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তমতে জমিতে মোট উৎপাদনের ৪৫% সরকারের আর ১৫% জমিদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য নির্ধারিত। ফলে কৃষকদের জন্য থাকে মাত্র ৪০%। 

কিন্তু জমিলার ও তার কর্মচারী বিভিন্নভাবে জুলুম- নির্যাতন করে তার থেকেও হাতিয়ে নিতে থাকেন। ফলে কৃষক নির্যাতন-নিপীড়ন চলতেই থাকে।

সমাজ ব্যবস্থার উপর প্রভাব : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বাংলার অর্থনীতির পাশাপাশি এর সমাজ ব্যবস্থাও ক্ষতি হয়। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :

১. সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বাংলার সমাজ কাঠামোর আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। কেননা বাংলার সমাজ কাঠামোর যে ধারাবাহিকতা বজায় ছিল তা হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যায়।

২. পুরাতন জমিদারি ধ্বংস : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের একটি কুফল ছিল সূর্যান্ত আইন। আর এই আইনের ফাঁদে পড়ে অনেক প্রাচীন জমিদার পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়।

৩. মধ্যস্বত্ব ভোগীর সৃষ্টি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আরেকটি মারাত্মক কুফল ছিল মধ্যস্বত্বভোগীর সৃষ্টি। এই ব্যবস্থায় জমিদার চিরস্থায়ী জমির মালিকানা লাভ করায় তারা কলকাতা শহরে গিয়ে বিলাসী জীবনযাপন শুরু করে এবং জমিদারি দেখাশুনা জন্য কাউকে দায়িত্ব দেন। ফলে এখানে সৃষ্টি হয় একটি মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণিগোষ্ঠী।

৪. প্রজাদের উপর জুলুম : কোম্পানির নিযুক্ত জমিদাররা শহরে থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা শাসন পরিচালনা করতেন ফলে এই মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রজাদের থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের জন্য তাদের উপর জুলুম নির্যাতন চালাত।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, লর্ড কর্ণওয়ালিশ প্রবর্তিত | চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির মুনাফা নিশ্চিতকরণ ও ভূমি রাজস্ব সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হয়। আর বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থায় উপর এই বন্দোবস্তের প্রভাব ছিল সীমাহীন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপর বাংলার আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাখ্যা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপর বাংলার আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাখ্যা কর। যদি তোমাদের আজকের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপর বাংলার আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাখ্যা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ