কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব আলোচনা কর

কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব আলোচনা কর
কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব আলোচনা কর

কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব আলোচনা কর

  • অথবা, কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব লিখ। 
  • অথবা, কোম্পানির দেওয়ানি গুরুত্ব আলোচনা কর। 

উত্তর : ভূমিকা : বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইংরেজ প্রত্নত্ব স্থাপনের ইতিহাসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ঘটনা। 

এই দেওয়ানি লাভের মাধ্যমেই এদেশে কোম্পানির আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার সূত্রপাত হয় এবং বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির বাংলা ও ভারতে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার পথ সুপ্রশস্ত হয়।

→ কোম্পানির দেওয়ানি : ১৭৬৪ সালে বাংলার নবাব মীর কাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মুঘল সম্রাট ২য় শাহআলমের যৌথবীহিনী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর অত্র অঞ্চলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যায়। 

ফলে কোম্পানির গভর্নর লর্ড ক্লাইভ এক সন্ধির মাধ্যমে মুঘল সম্রাটকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা এবং বাংলার নবাবকে বার্ষিক ৫৩,৮৬,১৩১ টাকা কর বা রাজস্ব প্রদানের বিনিময়ে ১৭৬৫ সালে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে। 

এক কথায় ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্ব আনায়ের অধিকারই দেওয়ানি নামে পরিচিত।

→ দেওয়ানির গুরুত্ব : বাংলা তথা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় দেওয়ানির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। দেওয়ানি লাভের ফলে ইংরেজদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

(ক) রাজনৈতিক গুরুত্ব : কোম্পানির ইতিহাসে বাংলার দেওয়ানি লাভ একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ঘটনা। কিন্তু কৌশলগত কারণে কোম্পানি শাসন ক্ষমতা সরাসরি হাতে তুলে না নিয়ে সম্রাটের কাছ থেকে দেওয়ানি আদায়ের অধিকার লাভ করেন। 

এই দেওয়ানি লাভের ফলে বাধ্যত সম্রাট এখন কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারীতে পরিণত হয়। নবাবের . সম্মানজনক পদ থাকলেও তার কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা ছিল না। 

নবাবের সামরিক ক্ষমতা চলে যায় কোম্পানির হাতে এবং নবাব কোম্পানির নিযুক্ত নায়েব সুবা মুহাম্মদ রেজা খার হাতে নিয়ামতের যাবতীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। 

আর এর মাধ্যমে কোম্পানি অপ্রত্যক্ষভাবে নিয়ামতের উপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। আর এভাবে কোম্পানি বাংলার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকার হয়ে পড়ে।

(খ) অর্থনৈতিক গুরুত্ব : কোম্পানির দেওয়ানি লাভের রাজনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি এর অর্থনৈতিক গুরুত্বও ছিল অপরিসীম। মুঘল সম্রাট ও বাংলার নবাবকে চুক্তিবদ্ধ টাকা দেওয়ার পর উপকৃত রাজস্ব কোম্পানি তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহারের সুযোগ লাভ করে বাংলায় কোম্পানির বাৎসরিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ও নতুন যুগের অভ্যুত্থান ঘটে। 

দেওয়ানি লাভের ফলে কোম্পানির আমদানি-রপ্তানির জন্য ইউরোপ থেকে সোনা আনার প্রয়োজনও প্রায় হ্রাস পায়। কেননা বাংলা থেকে সংগৃহীত কোম্পানির উদ্বৃত্ত অর্থই কোম্পানির আর্থিক স্বচ্ছলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করে। 

এর ফলে কোম্পানি একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনীও গঠন করতে সক্ষম হয়। ফলে কোম্পানির পক্ষে অত্র অঞ্চলে বাণিজ্যিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়ে যায় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কোম্পানির দস্তক লাভের মতোই তাদের দেওয়ানি লাভ ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসনের ইতিহাসে এক নব যুগের সূচনা ঘটায়। 

দস্তকের অপব্যবহার করে কোম্পানি একদিকে প্রভুত আর্থিক সাফল্য লাভ করে, আর বাংলার দেওয়ানি লাভের ফলে কোম্পানি অঘোষিত ভাবে বাংলার শাসন ক্ষমতার কর্তৃত্ব লাভ করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ