ক্রুসেডের সামাজিক কারণ কী ছিল

ক্রুসেডের সামাজিক কারণ কী ছিল
ক্রুসেডের সামাজিক কারণ কী ছিল

ক্রুসেডের সামাজিক কারণ কী ছিল

উত্তর : ভূমিকা : প্রায় ২০০ বছর ধরে সমগ্র ইউরোপে স্বার্থান্বেষী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে এশিয়া আফ্রিকার মুসলমানদের যে ধর্মযুদ্ধ সংঘটিত হয় তা ছিল মর্মান্তিক। নিম্নে ক্রুসেডের কয়েকটি সামাজিক কারণ সম্পর্কে জানা যাবে।

→ ক্রসেডের সামাজিক কারণ : নিম্নে ক্রুসেডের সামাজিক কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. সামস্তপ্রভুদের স্বার্থ : ইউরোপে যখন সামন্ত প্রথার প্রচলন শুরু হয় তখন সামন্তপ্রভুরা নানাভাবে নিজস্বার্থ হাসিলের জন্য এ যুদ্ধকে উৎসাহিত করে। 

যেখানে পোপ ও সামন্তপ্রভুদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় যুদ্ধে আহ্বান ও অংশগ্রহণ করা হয়। আর এ আহ্বানের কারণেই সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ক্রুসেডের দামামা বেজে উঠে।

২. কর্মসংস্থানের আশ্বাস : সামন্ত প্রভুরা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার এবং বিষাদগ্রস্ত লোকদের কর্মসংস্থান বা কাজের নিশ্চয়তা দেওয়ার অবিশ্বাস প্রদানের মাধ্যমে ক্রুসেডে অংশ নিতে বলে। আর এভাবে ইউরোপের যুব শক্তির অধিকাংশই ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করে ।

৩. জনসংখ্যা ক্রমবৃদ্ধি : মধ্যযুগে চাষযোগ্য জমির থেকে কৃষকের সংখ্যা ছিল বেশি। ফলে অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্যে কৃষিকাজ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করতে না পেরে পোপ ক্রুসেডে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ক্রুসেডের অন্যান্য প্রভাব থেকে অনন্য প্রভাব ফেলতে বাধ্য হয়।

৪. উত্তরাধিকার আইন : পশ্চিম ইউরোপে ভূসম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে জ্যোষ্ঠ পুত্রকেই মনোনয়ন দেওয়ার আইন ছিল। 

ফলে অন্য পুত্র বা উত্তারাধিকারীরা আলাদা বসবাসের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। আর এভাবে সম্পত্তির ভাগ বাটায়ারা নিরূপিত হতে শুরু করে।

৫. প্রভাব প্রতিপত্তি : ক্রুসেডের সামাজিক প্রভাব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে মধ্যবিত্তের অনুপস্থিতে সামন্ত শ্রেণির মানুষ একচ্ছত্র প্রভাব ফেলতে শুরু করে। সামাজিক বিভিন্ন কারণে মানুষ ক্রুসেডে অংশ নিতে শুরু করে। 

ধর্মীয় যাজকদের আদেশ নির্দেশে সমাজে বসবাসকারী বহু মানুষ ক্রুসেডে অংশ নিতে বাধ্য হয়। কর্মসংস্থান, জমি-সম্পত্তির লাভের আশায় মানুষ ক্রুসেডে অংশ নেয় ।

৬. যুব শক্তির প্রতিক্রিয়া : ক্রুসেডের সামাজিক কারণসমূহের মধ্যে পোপ কর্তৃক সমাজের যুব সম্প্রদায়কে ক্রুসেডে অংশ নেওয়ায় বাধ্য করা হয়।

যুবকদের পোপ বা ধর্মযাজকেরা ক্রুসেডে অংশ নেওয়ার জন্যে ধর্মীয় কর্তৃব্য ও দায়িত্ব বলে নানাভাবে প্ররোচিত করে। 

ফলে সমাজের অধিকাংশ যুব শক্তিই ক্রুসেডে অংশ নিতে বাধ্য হয়। এভাবে সমাজ থেকে যুবশক্তির ক্রমশ হ্রাস পেতে শুরু হয় ক্রুসেডের সময় ।

৭. কৃষক শ্রেণির ক্ষেত্রে : মধ্যযুগের জনসংখ্যা যখন ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন পোপ বা যাজক শ্রেণির কৃষকদের কৃষিকাজ এবং অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা শুরু করে। 

আর সেজন্যে তাদের ক্রুসেডে অংশ নেওয়ার জন্য প্রবৃত্ত করে। ফলে কৃষক সম্প্রদায় ন্যায্য শ্রমের মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। তাই সুবিধা লাভের আশায় ক্রুসেডে অংশ নেয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ক্রুসেডের নানাবিধ প্রভাব প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। সামাজিক বিভিন্ন কারণে ক্রুসেডে মানুষ অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হয়ে পড়ে। আর এভাবে ক্রুসেডের সময়কালকে তাৎপর্যমণ্ডিত করে তোলে মানুষ । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ