ফাতেমীয় শাসনামলে মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি বিবরণ দাও

ফাতেমীয় শাসনামলে মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি বিবরণ দাও
ফাতেমীয় শাসনামলে মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি বিবরণ দাও

ফাতেমীয় শাসনামলে মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি বিবরণ দাও

  • অথবা, ফাতেমীয় শাসনামলে মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ভূমিকা : মিশরের ইতিহাস ফাতেমীয় বংশের শাসন একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ৯০৯ সালে ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী ফাতেমীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মিশরে ফাতেমীয় শাসন ঠিক ছিল। 

মিশরে ফাতেমীয় শাসনের শুরুর দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা ও দুর্ভিক্ষ হলেও খলিফা আল মুইজের সময় মিশরে অর্থনীতিতে উন্নতির হাওয়া লাগে। কিন্তু পরবর্তীতে খলিফা আল মুসতানসিরের শাসনামলে মিশরের অর্থনীতি আবার সংকটে পড়ে।O 

ফাতেমীয় শাসনামলের মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থান : ফাতেমীয় শাসনামলে মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থান নিয়ে আলোকপাত করা হলো :

১. কৃষিব্যবস্থা : মিশর একটি কৃষি প্রধান দেশ। এজন্য ফাতেমীয় খলিফাগণ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের লক্ষ্য কৃষির প্রতি নজর দেন। 

ফাতেমীয় উজির আফজল অসংখ্য খাল খনন করেছিল যাতে সেচ ব্যবস্থা সহজ হয়। এছাড়াও খলিফা আল মুইজ ও কৃষি সেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ৭৩,০০০ ী দীর্ঘ খাল খনন করেছিল।

২. মুদ্রা ব্যবস্থা : ফাতেমীয় শাসনামলের সময় আব্বাসীয় মুদ্রা প্রচলিত থাকলেও খলিফা আল মুইজের সময়কালে ইয়াকুব- বিন-কিসি কর্তৃক নতুন মুদ্রা প্রবর্তন করা হয়। যা ফাতেমীয় মুদ্রা নামে পরিচিত। ফাতেমীয় মুদ্রার মান ছিল ১৫.৫০ দিরহাম।

৩. রাজস্ব ব্যবস্থা : ফাতেমীয় আমলে রাজস্ব ব্যবস্থা পুনর্গঠন হয় 'আল মুইজের সময়ে। খলিফা আল মুইজের অর্থব্যবস্থাপক ইয়াকুব বিন কিসি রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার করে, রাষ্ট্রে আয়-ব্যয়, সৈন্যবাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ভাতার ব্যয় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করতেন। এই সময়ে রাজ্যের আমদানি ও রপ্তানি মূল্য নির্ধারিত ছিল।

৪. ব্যবসা-বাণিজ্য : ফাতেমীয় শাসনামলে মিশরে ব্যবসা- বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভূত সাফল্য দেখা যায়। এই সময়ে জল ও স্থল উভয় পথে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। আন্তর্জাতিকভাবে ফাতেমীয়রা আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতবর্ষের সাথে ব্যবসায়িক বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।

৫. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ : ফাতেমীয় খলিফা আল মুইজের সময় অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেয়া হয়। এই সময় মিশরের অর্থনৈতিক সংকট দূরীকরণ ও পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের মান ও দাম নির্ধারণ করে খাদ্য গুদামজাত না করার জন্য কঠোর হুশিয়ারি জারি করেন এবং যে অন্যায়ভাবে ব্যবসা ও খাদ্য গুদগামজাত করবে তাকে কঠোর শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

৬. শিল্পকারখানা : ফাতেমীয় শাসনামলে শিল্প ক্ষেত্রেও উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল। তখন নীলনদের তীরে বহু সংখ্যক কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে মিশর খ্যাতি অর্জন ও মিশরের বস্ত্র বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছিল।

৭. ঘুষ-জুয়া নিষেধ : ফাতেমীয় শাসনামলে ঘুষ প্রদান ও জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। খলিফা আল আজিজ ঘুষের লেনদেন ও জুয়ার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন নিষিদ্ধ করেন এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রদানের হুঁশিয়ার করে দেন।

৮. ইজারা ও খাজনা : ফাতেমীয় শাসন আমলে খলিফা আল মুইজ ইজারাদারের অর্ধেক আয় বন্ধ করে রাজ্য রাজস্ব ব্যবস্থাকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এর ফলে মিশরের রাজস্ব আয় বহুতণ বেড়ে গিয়েছিল। মিশরের ফুসতাতে প্রতিদিন ৫০ হাজার কর আদায় হতো।

৯. প্রজাবান্ধব খলিফা : ফাতেমীয় খলিফাগণ বিশেষভাবে আল মুইজ প্রজাদের প্রত্যেক কথা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শুনতেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতেন। প্রজারা যাতে কোন ধরনের শোষণের স্বীকার না হয় সেজন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতেন।

১০. বহিঃদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক : ফাতেমীয় শাসনামলে বিশেষ করে খলিফা আল মুইজের শাসনামলে ব্যবসা বাণিজ্যের চরম উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ এর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। যেমন- জর্ডান, প্যালেস্টাইন, সিরিয়া, মরক্কো ও ভারতবর্ষ ইত্যাদি।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মিশরের খলিফাগণ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপন করতেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষের পরও মিশরের অর্থনীেিত প্রভূত সাফল্য সাধিত হয়েছিল। 

কিন্তু খলিফা আল মুসতানসিবের শাসনামলে মিশরের অর্থনীতিতে সংকট শুরু হয়। যার ফলে মিশরের অবস্থা শোচনীয় হতে থাকে। তারপরও মিশরের অর্থনীতিতে যে অবদান রেখেছে তারা তার জন্য ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ