গৌড় রাজ্যের অবস্থান কোথায় ছিল
গৌড় রাজ্যের অবস্থান কোথায় ছিল |
গৌড় রাজ্যের অবস্থান কোথায় ছিল
- অথবা, শশাঙ্কের স্বাধীন গৌড়ের অবস্থান কোথায় ছিল লিখ?
উত্তর : ভূমিকা : শশাঙ্ক নামটি প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি নিজ ক্ষমতা ও যোগ্যতা বলে পরবর্তী গুপ্তবংশের শাসকদের অধীন থেকে গৌড়কে স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ে স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেছিলেন।
গৌড়ের স্বাধীন রাজা হিসেবে নিজেকে দেখতেই শুধু শশাঙ্ক পছন্দ করতেন না এজন্য তিনি মগধ ও কঙ্গোদ জয় করেন।
এছাড়া দক্ষিণের উড়িষ্যার চিল্কা হ্রদ পর্যন্ত তিনি রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হন এবং গৌড়ের রাজধানী বানান কর্ণসুবর্ণকে।
স্বাধীন গৌড়ের অবস্থান : গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে পরবর্তী গুপ্ত বংশ বলে পরিচিত গুপ্ত উপাধিধারী রাজাগণ বাংলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল মগধ পর্যন্ত ক্ষমতা বিস্তার করেছিল।
৬ষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এ অঞ্চলই গৌড় জনপদরূপে পরিচিত ছিল। গৌড়ের উপর গুপ্তদের অধিকার তখনও কায়েম ছিল।
৫৪৪ খ্রিষ্টাব্দের দামোদরপুর তাম্রশাসন থেকে প্রমাণিত হয় যে, উত্তর বাংলা ৫৪৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পরবর্তী গুপ্ত শাসকদের অধীনে ছিল।
আফসদ লেখ থেকে জানা যায়, পরবর্তী গুপ্ত বংশের অন্যতম রাজা মহাসেন গুপ্ত ব্রহ্মপুত্রের তীরে কামরূপের সুস্থিত বর্মণকে পরাজিত করেন।
তাই বলা যায়, ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ পরবর্তী গুপ্ত বংশের অধিকারে ছিল । আর গৌড় অধিপতি শশাঙ্ক এই মহাসেন পুত্রের মহাসামন্ত রূপে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন।
৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দের তাম্রশাসনে মৌখরি বংশীয় রাজা ঈশান বর্মণ দাবি করেন যে, শশাঙ্ক অন্ধ্রপ্রদেশ জয় এবং গৌড় জনপদকে সমুদ্রের দিকে পশ্চাদপসরণ করেছিলেন।
অতএব মনে করা হয় যে, যশোবর্মণের অগ্রগতির পর গৌড়ের উপর পরবর্তী গুপ্তদের প্রভুত্ব খর্ব হয়। পরবর্তী গুপ্ত বংশীয় রাজারা প্রত্যক্ষভাবে গৌড় অঞ্চল শাসন করতেন না।
তাদের প্রতি অনুগত স্থানীয় নৃপতিগণ এ রাজ্য শাসন করতেন। আর এ সুযোগে ৭ম শতাব্দীর প্রথম দিকে শশাঙ্কের নেতৃত্বে গৌড় একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে পরিণত হয়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, শশাঙ্কের মাধ্যমে সপ্তম শতাব্দীতে গৌড়ে রাজ্যের সৃষ্টি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
শশাঙ্ক গৌড়রাজ্যের শুধু উত্থান ঘটাননি বরং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এখানকার অধীশ্বর থেকে গেছেন। সর্বোপরি তাঁর সময় গৌড় নামক রাজ্যটি সবার পরিচিত ছিল। তাই ইতিহাসে গৌড় রাজ্যের গুরুত্ব সর্বাধিক।