সার্বভৌম গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর
সার্বভৌম গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর |
সার্বভৌম গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর
- অথবা, স্বাধীন গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠার বর্ণনা দাও ৷
- অথবা, শশাঙ্কের উত্থান ও রাজ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : শশাঙ্ক নিজ ক্ষমতা এবং যোগ্যতা বলে ৭ম শতকে বাংলার ইতিহাসকে সাফল্যমণ্ডিত করেন। তিনিই প্রথম পরবর্তী গুপ্ত বংশীয় রাজাদের হাত থেকে গৌড় রাজ্যকে স্বাধীন করেন এবং ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের সিংহাসনে বসেন।
এজন্যই শশাঙ্ককে বলা হয় বাংলার প্রাচীন যুগের সার্বভৌম রাজা। তিনি শুধু গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেননি বরং এ সাম্রাজ্যের বৃদ্ধিতে মগধ ও উত্তরাঞ্চলে বৃদ্ধি করেন। তিনি উত্তর ভারতীয় সমবেত শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে নিজ রাজ্য সংহতি বিধান করেন।
→ সার্বভৌম গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠার পটভূমি : শশাঙ্ক কখন কিভাবে গৌড়দেশে সার্বভৌম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়না।
তবে যে সকল বিষয়ের প্রতিলক্ষ রেখে শশাঙ্কের সিংহাসন আরোহণ সম্পর্কে অনুমান করা হয় সেগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. মৌখরি রাজ বংশ ও পরবর্তী গুপ্ত রাজাদের দ্বন্দ্ব : মৌখরি রাজাগণ ও পরবর্তী গুপ্ত বংশের রাজাদের মধ্যে পুরুষান্তক্রমিক দ্বন্দ্ব চলছিল। ফলে এ দ্বন্দ্ব শশাঙ্কের গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
২. চাণক্যরাজ কার্তিবর্মনের আক্রমণ : ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে পরবর্তী গুপ্ত বংশের রাজারা অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েন।
তার উপর চাণক্যরাজ কার্তিবর্মণ পরবর্তী গুপ্ত রাজাদের আক্রমণ করেন। ফলে গুপ্ত বংশের শাসকদের ভীত একেবারে নড়বড়ে হয়ে যায় । শশাঙ্ক এ সুযোগ গ্রহণ করে ।
৩. তিব্বতি রাজা শ্রংসান এর আক্রমণ : রাজা শংসান উত্তর দিক হতে পরবর্তী গুপ্ত রাজাদের আক্রমণ করেন। ফলে পরবর্তী গুপ্ত বংশের রাজত্বের বিলুপ্তির পথ সুগম হয়। এই অবস্থার পূর্ণসুযোগ গ্রহণ করেছিলেন শশাঙ্ক ।
৪. রাজা মহাসেন গুপ্তের পরাজয় এবং শশাঙ্কের গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা : পরবর্তী গুপ্ত বংশীয় রাজা মহাসেন গুপ্তের বোন মহাসেন গুপ্তস্থ পরবর্তী গুপ্ত ছিলেন প্রভাকরবর্ধনের জননী।
কলচুরি রাজা সংকরগণের আক্রমণে পরাজিত হয়ে ৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দে মহাসেন গুপ্ত তার পুত্রসহ ভাগ্নে প্রভাকরবর্ধনের রাজসভায় আশ্রয় নেন।
যার কারণে বঙ্গ ও মগধে পরবর্তী গুপ্ত সাম্রাজ্যের অবস্থান ঘটে। এবং সে সুযোগে শশাঙ্ক ৭ম শতকের প্রারম্ভে কোনো এক সময় স্বাধীন গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার শশাঙ্কের গৌড় রাজ্যকে সবাই চিনত এক নামেই। তাঁর সময়ই গৌড় সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করে। সর্বোপরি তিনি গৌড় রাজ্যের শুধু অধিপতিই ছিলেন না সেখানকার যোগ্য শাসক ছিলেন।