হরিকেল জনপদ সম্পর্কে কি জান । হরিকেল জনপদ সম্পর্কে উল্লেখ কর
হরিকেল জনপদ সম্পর্কে কি জান । হরিকেল জনপদ সম্পর্কে উল্লেখ কর |
হরিকেল জনপদ সম্পর্কে কি জান । হরিকেল জনপদ সম্পর্কে উল্লেখ কর
- অথবা, হরিকেল জনপদের উপর টীকা লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমানকালের ন্যায় বাংলা একক কোন দেশ বিভক্ত ছিল না। বাংলা ছিল আলাদা আলাদা ভাবে বিভক্ত ।
এই আলাদা ভাগকে বলা হতো জনপদ। প্রাচীন বাংলায় যে কটি জনপদ ছিল তার মধ্যে হরিকেল জনপদ অন্যতম
→ হরিকেল জনপদ : হরিকেল জনপদ সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল নিয়ে গঠিত এ জনপদ। খ্রিষ্টীয় দশম শতকের গোড়ার দিকে রাজশেখর বসু প্রণীত কুরমঞ্জরী গ্রন্থে চম্পা, রাঢ়, কামরূপ প্রভৃতি পূর্বদেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে হরিকেল রাজ্যের নামোল্লেখ পাওয়া যায়।
প্রায় সমসাময়িককালে চন্দ্র বংশের রামপাল কর্তৃক উৎকীর্ণ তাম্রশাসন থেকে দেখা যায় চন্দ্রদ্বীপের রাজা তৈলোক্যচন্দ্র হরিকেল রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকের জৈনাচার হেমচন্দ্র সুরী প্রণীত অভিধান চিন্তামণিতে বঙ্গান্ত হরিকেলিয়া উল্লেখ করা হয়েছে।
নীহাররঞ্জন রায় মনে করেন, “হরিকেল সপ্তম-অষ্টম দশক হতে দশম-একাদশ পর্যন্ত বঙ্গ (চন্দ্রদ্বীপ ও বঙ্গ) এবং সমতটের সংলগ্ন কিন্তু স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল; কিন্তু ত্রৈলোক্যচন্দ্রের চন্দ্রদ্বীপ অধিকারের পর হতেই হরিকেলকে মোটামুটি বঙ্গের অন্ত র্ভুক্ত বলিয়া গণ্য করা হয়।”
হরিকেল প্রাচীন বঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ছিল। এ কথার প্রমাণাদি বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া গেলেও, এর প্রামাণ্য নমুনা খুব কম পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ অঞ্চলের খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে কান্দিদেবের মন্দিরে প্রাপ্ত অসম্পূর্ণ তাম্রলিপি থেকে জানা যায় মহারাজ কান্তিদেব হরিকেলের শাসক ছিলেন।
কিন্তু এ লেখা থেকে কান্তিদেব বা তাঁর রাজ্য সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। প্রাচীন পূর্ববঙ্গের একটি জনপদ।
বর্তমান চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ত্রিপুরার এবং তৎসংলগ্ন এলাকা হরিকলের অংশ ছিল বলে অনুমান করা হয়। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রাচীন ভারতীয় লেখকগণ পূর্ব ভারতীয় প্রান্তীয় অংশ অবস্থিত জনপদকে হরিকেলের নামে উল্লেখ করেছেন।
সপ্তম শতাব্দীর চৈনিক পরিব্রাজক ইৎসিং-এর অবস্থানকে 'পূর্ব ভারতের পূর্বসীমায় নির্দেশ করেন। এই পরিব্রাজক শ্রীলংকা থেকে সমুদ্রপথে উত্তর- পূর্ব দিকে যাত্রাকালে পূর্ব ভারতের পূর্ব সীমান্তের হরিকেল রাজ্যে অষ্টম শতকে রচিত আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থে বঙ্গ, সমতট ও হরিকেল প্রভৃতি পৃথক পৃথক রাজ্য ছিল বলে উল্লেখ আছে।
খ্রিষ্টীয় দশম-একাদশ শতাব্দীতে বঙ্গের চন্দ্রবংশীয় শাসকদের লেখাসমূহ থেকে তাদের আদি বাসভূমি হরিকেল সীমার মধ্যে ছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।
সে সময়ে এই রাজ্যটি সামন্ততান্ত্রিক অবস্থা থেকে রাজ্যের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছিল। এ বিষয়ে শ্রীচন্দ্রের বেশ কিছু ফলক থেকে জানা যায়, চন্দ্রবংশের প্রথম শাসক ত্রৈলোক্যচন্দ্র কার্যত এবং আইনত উভয় প্রকারেই হরিকেলের রাজা ছিলেন।
ত্রৈলোক্যচন্দ্র তাঁর পিতার কাছ থেকে হরিকেল রাজ্যের একজন সামন্তের মর্যাদা লাভ করেন এবং তিনিই শক্তি সঞ্চয় করে হরিকেল রাজার প্রধান সহায়ক শক্তিতে পরিণত হন।
পরবর্তী সময়ে সে অবস্থা থেকে তিনি একজন সার্বভৌম রাজা হন। ধারণা করা হয়, আরাকান সীমান্তবর্তী চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ রাজ্য অবস্থিত ছিল। ময়নামতিতে আবিষ্কৃত হরিকেল মুদ্রাসমূহে এই রাজ্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হরিকেল জনপদ প্রাচীন জনপদের মধ্যে অন্যতম। এ কথা স্পষ্ট যে, হরিকেল জনপদের সঠিক সীমারেখা নির্দেশ করা কঠিন। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ জনপদটির সীমা সংকোচন ও প্রসারিত দুটিই হয়েছে।