কেন বক্সারের যুদ্ধকে বাংলার শেষ প্রতিরোধ আন্দোলন বলা হয়

কেন বক্সারের যুদ্ধকে বাংলার শেষ প্রতিরোধ আন্দোলন বলা হয়
কেন বক্সারের যুদ্ধকে বাংলার শেষ প্রতিরোধ আন্দোলন বলা হয়

কেন বক্সারের যুদ্ধকে বাংলার শেষ প্রতিরোধ আন্দোলন বলা হয়

  • অথবা, বক্সারের যুদ্ধকে বাংলার শেষ প্রতিরোধ আন্দোলন বলার কারণ কি?

উত্তর : ভূমিকা : বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নবাব মীর কাসিম ১৭৬০ সালে বাংলা ও বিহারের মসনদে বসেন। তিনি তার সংগ্রামী জীবনে ইংরেজদের সাথে একাধিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। 

মীর কাসিমের স্বাধীনচেতা মনোভাব এবং শুল্ক নিয়ে বিরোধের কারণেই বক্সারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজরা মীর কাসিমকে পরাজিত করে বাংলার শাসন ক্ষমতার অধিকারী হয়।

বক্সারের যুদ্ধকে শেষ প্রতিরোধ আন্দোলন বলার কারণ : নিম্নে বক্সারের যুদ্ধকে কেন বাংলার শেষ প্রতিরোধ বলা হয় তা তুলে ধরা হলো :

১. সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে : পলাশির যুদ্ধে ইংরেজরা বাংলার সার্বভৌমত্বের অধিকারী হয়েছিল এটা যুক্তিযুক্ত নয়। বক্সারের যুদ্ধের পর বাংলা তথা ক্রমান্বয়ে সমগ্র ভারতের সার্বভৌমত্ব ইংরেজদের হাতে চলে যায়। এ যুদ্ধে মীর কাসিমের পরাজয়ের ফলে বাংলার মাটিতে ইংরেজ শক্তি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

২. উত্তর পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তা দূর : পলাশির যুদ্ধ ইংরেজদের বাংলার প্রভুত্ব বিস্তারে সাহায্য করলেও উত্তর পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তা বিধান করেনি। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ইংরেজদের সকল বিপদ দূরীভূত হয়।

৩. প্রতিদ্বন্দ্বীর অবসান : পলাশির যুদ্ধের পর বাংলা তথা ভারতবর্ষে ইংরেজদের প্রতিদ্বন্দ্বী আরও অনেক ইউরোপীয় বাণিজ্যিক কোম্পানির তৎপরতা ছিল। 

কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে মীর কাসিমের পরাজয়ের ফলে বাংলা হতে দিল্লি পর্যন্ত দেশি বা বিদেশি কোন প্রতিদ্বন্দ্বীই ইংরেজদের সামনে রইল না।

৪. নবাবের সৈন্য সংখ্যা হ্রাস : পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার সৈন্যবাহিনীর উপর হস্তক্ষেপ করার সাহস ইংরেজরা পায়নি। পক্ষান্তরে বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজরা নবাবকে দিয়ে বাংলার সৈন্য সংখ্যা হ্রাস করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

৫. অর্থনীতি হস্তগত : পলাশির যুদ্ধের পর ইংরেজরা বাংলার নবাবের নিকট থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করে নিয়েছিল। কিন্তু এদেশের অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। 

তবে বক্সারের যুদ্ধে বাংলার নবাব মীর কাসিমের পরাজয়ের ফলে ইংরেজরা ভারতবর্ষের সবচেয়ে ধনৈশ্বর্যশালী এলাকা বাংলার অর্থনীতির মালিক ও নিয়ন্ত্রক হয়ে যায়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ফলে বাংলার স্বাধীনতা চূড়ান্তভাবে ইংরেজদের হাতে চলে যায় এবং পরবর্তীতে প্রায় ২০০ বছর তাদের প্রভুত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়। সুতরাং একথা সহজেই বলা যায়, বক্সারের যুদ্ধই হলো বাংলার সর্বশেষ প্রতিরোধ সংগ্রাম ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ