সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ইতিহাসে এত বিখ্যাত কেন

সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ইতিহাসে এত বিখ্যাত কেন
সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ইতিহাসে এত বিখ্যাত কেন

সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ইতিহাসে এত বিখ্যাত কেন

  • অথবা, সালাউদ্দিন আইয়ুবীর ইতিহাসের প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণ বর্ণনা কর ।

উত্তর : প্রায় দুইশত বছর ধরে খ্রিস্টান ক্রুসেডাদের আক্রমণের ফলে পশ্চিম এশিয়া থেকে ইসলামের রাজনৈতিক শক্তি একবারে নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয় তখন সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদ স্বরূপ সালাউদ্দিন আইয়ুবী নামক বীর যোদ্ধার আবির্ভাব ঘটে। 

তিনি অসাধারণ দক্ষতা এবং সাহসীকতা দিয়ে মুসলমানদের শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। মুসলমানগণ তাদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় শক্তি পুনরায় ফিরে পায়।

→ নিম্নে সালাউদ্দিন আইয়ুবীর বিখ্যাত হওয়ার কারণ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

১. মিশরে সুন্নি শাসন প্রতিষ্ঠা : মিশরে ফাতেমীয়দের দ্বারা দীর্ঘদিন শিয়া শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। সালাউদ্দিন মিশরের কর্তৃত্ব অর্জনের পর মিশরে শিয়া শাসনের পরিবর্তে সুন্নী ইসলামি শাসন কায়েম করেন ।

২. আইয়ুবী বংশের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা : স্বীয় প্রতিভাবলে সালাউদ্দিন সামান্য অবস্থা থেকে মিশরের কর্তত্ব অর্জন করেন। মূলত তিনি নিজেকে নুরুউদ্দিন জঙ্গীর জহিরের প্রতিনিধি মনে করতেন।

নুরুদ্দীনের মৃত্যুর পর সালাউদ্দিন আইয়ুবী ১১৭৪ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে আইয়ুবী বংশের কর্তত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩. গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়কে দমন : গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়কে দমন করেন সালাউদ্দিন খ্যাতি লাভ করেন। হাসান বিন সাবার যোগ্য উত্তরসরী রশিদ বিন মিনান এবং তার বাহিনীর তন্ত্রে পশ্চিম এশিয়ার রাজ্যবর্গ এমনকি ইউরোপের ক্রুসেডার ও সংকীর্ণ থাকত। হাসান বিন সাবাহর সদর দপ্তর আক্রমণ করে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়কে দমন করেন।

৪. ফিলিস্তিন অভিযান : ফিলিস্তিনে অবস্থানরত খ্রিস্টানরা লোহিত সাগরে প্রবেশ করে হজযাত্রীদের উপর আক্রমণ করে অনেককে নিহত করে এবং পৃষ্ঠন করে। তাই সালাউদ্দিন আইয়ুব তাদের দমনের জন্য অভিযান করে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

৫. হিত্তিনের যুদ্ধে সফলতা : সালাউদ্দিন ১১৮৭ সালে হিত্তিনের যুদ্ধে সম্মিলিত ফ্রান্স ও ইউরোপীয় খ্রিস্টান বাহিনীর অধিনায়ক গাইডি লুসিগগনালকে চরমভাবে পরাজিত করেন। 

এই যুদ্ধে দশ হাজার ক্রুসেডার নিহত হয় এবং অনেকে বন্দি হয়। এই যুদ্ধের জয়ের ফলে সালাউদ্দিন খ্যাতি বৃদ্ধি পান।

৬. জেরুজালেম পুনরুদ্ধার : রেজিন্যান্ড বার বার সন্ধি ভঙ্গ করে মুসলমানদের উপর অত্যাচার করলে সালাউদ্দিন জেরুজালেম অবরোধ করেন। তিনি সাফল্যের সাথে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।

৭. তৃতীয় ক্রসেডে সাফল্য : সালাহউদ্দিন জেরুজালেমের অবরোধ করার ফলে ফ্রান্সের সম্রাট ফ্রোডারিক বারারোসা, ফ্রান্সের রাজ্য ফিলিপ অগাস্টাস এবং ইংল্যান্ডের রাজ্য রিচার্ড প্রমূখ সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে তৃতীয় ক্রসেড ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধে সালাউদ্দিন বীর বিক্রমে ক্রুসেডারদের পরাজিত করেন।

৮. ড্যাক্তা অবরোধ : ফ্রান্সের ক্রুসেডারগণ ফিলিপ অগাস্টাসের নেতৃত্বে একত্রে হানা দেয়। কাউন্ট হ্যানরির নেতৃত্বে একত্রে ছানা দেয়। একর অধিকার করে ক্রসেডাররা বহু মুসলমানকে হত্যা করে।

অপর দিকে সালাউদ্দিন কঠোরভাবে ড্যাক্তা আক্রমণ করলে রিচার্ড সহ পুরো ক্রসেডার বাহিনীর কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

৯. রামালার সন্ধি : অবশেষে ইংল্যান্ডের নেতৃত্বধীন বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়লে রাজা সালাউদ্দিনের ভাই মালিক আল আদিলের সাথে তার ভাগ্নিকে বিয়ে দিয়ে জেরুজালেমকে যৌতুক হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব করে শান্তি চুক্তি সম্প্রদানের কথা উপস্থাপন করেন। ১১৯২ সালের ২ সেপ্টেম্বর রামালায় দুটি সাধারণ সন্ধি সাক্ষরিত হয়। এটি রামালার সন্ধি নামে পরিচিত।

১০. জনহিতকর কার্যাবলি : সুলতান সালাউদ্দিন সম্রাজ্যের সবর স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। তিনি জ্ঞানী গুণী এবং ধার্মিকদের সমাদর করতেন। 

স্থাপত্য শিল্পেও তিনি অবদান রাখেন। তিনি একজন প্রজাহিতৈষী শাসক ও দরিদ্র জনগণের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামি বিশ্বের অন্যতম সাহসী সৈনিক গাজী সালাউদ্দিন মুসলিম বিশ্বকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন। 

তিনি একজন সাধারণ পরিবারের সন্তান হয়েও স্বীয় দক্ষতা যোগ্যতা ও প্রতিভার কারণে মিশরে আইয়ুবী বংশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার প্রচেষ্টার মুসলিম। বিশ্বের এক স্মরণীয় ঐকের সৃষ্টি হয়েছিল।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ