মারজ ই দাবিকের যুদ্ধের কারণগুলো কি ছিল

মারজ ই দাবিকের যুদ্ধের কারণগুলো কি ছিল
মারজ ই দাবিকের যুদ্ধের কারণগুলো কি ছিল

মারজ ই দাবিকের যুদ্ধের কারণগুলো কি ছিল

  • অথবা, মারজ-ই-দাবিকের যুদ্ধের প্রধান কারণসমূহ কি কি?

উত্তর : ভূমিকা : মানব সভ্যতার ইতিহাসে যতগুলো যুদ্ধ কোনো জাতির উত্থান বা পতনের কারণের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে ১৫১৬ সালে সংঘটিত ঐতিহাসিক মারজ-ই-দাবিকের যুদ্ধ তন্মধ্যে অন্যতম। 

এ যুদ্ধের মাধ্যমে মামলুক বংশের পতন ঘটিয়ে উত্থান ঘটে অটোমান সাম্রাজ্যের। আর এই ‘মারাজ-ই-দাবিক যুদ্ধের কারণগুলোও ছিল ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ।

মারা-ই-পাধিকের যুদ্ধের কারণ : মারজ-ই-দাবিকের মতো যুদ্ধের পেছনে একক কোনো কারণ সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী নয়, বরং এই যুদ্ধের পেছনে অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান ছিল। 

নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. সুলতান সেলিমের উচ্চাভিলাষ : অটোমান সুলতান সেলিমের ছিল উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। ১৫১২ সালে তিনি তুরস্কের ক্ষমতা গ্রহণের পর, মিশরের শিয়া মামলুকদের পতন ঘটিয়ে অটোমান খিলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। ফলে মার- ই-মানিকের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল।

২. আল ঘুরির চুক্তি ভঙ্গ : অটোমান সুলতান প্রথম সেলিমের পারস্য আক্রমণের সময় মামলুক সুলতান তাকে অস্ত্র ও সৈন্যবাহিনী দিয়ে সাহায্য করবেন। 

এমন চুক্তি থাকলেও ১৫১৫ সালে সেলিম পারস্য আক্রমণ করলে মামলুক সুলতান কানসু আল ঘুরী শর্ত মোতাবেক সৈন্যবাহিনী পাঠায়নি।

৩. বিদ্রোহী সুলতানকে আশ্রয়দান : আল মুরী পারস্যের পরাজিত শাসক শাহ ভাইমসকে তাঁর দরবারে আশ্রয়দান করেন। সুলতান সেলিম শাহকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানালে আল পুরী তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ফলে অটোমানদের সাথে মামলুকদের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।

৪. আহমদকে আশ্রয় দান : এ সময় অটোমান সুলতান সেলিমের ভাই তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে পরাজিত হয়ে ঘুরির দরবারে আশ্রয় লাভ করে। 

ফলে সুলতান সেলিম বিদ্রোহী ভ্রাতা আহমদকে ফিরিয়ে দিতে ঘুরির প্রতি অনুরোধ জানান। কিন্তু ঘুরি এবারও তাঁর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে যুদ্ধ তখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

৫. ঘুরির সৈন্য সমাবেশ : সুলতান সেলিম যখন ১৫১৫ সালে পারস্য আক্রমণ করেন তখন পারস্যের সীমান্তবর্তী মিশরের নিরাপত্তার জন্য মামলুক সুলতান কানুস আল ঘুরী তাঁর সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করেন। 

মামলুক সুলতানের এই সৈন্য সমাবেশকে প্রথম সেলিম ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। তাই সৈন্য সমাবেশের যথাযথ প্রতি উত্তর দানের জন্য তিনি মিশর আক্রমণ করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা জ্ঞাপন করেন।

৬. দুর্গ পুনরাধিকার : সুলতান সেলিম ক্ষমতায় আসীন হয়ে পূর্বপুরুষের ব্যর্থতার শোষ এবং হারানো দুর্গ ফিরে পাবার জন্য চেষ্টা শুরু করলে মামলুক ও অটোমানদের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।

৭. মক্কা-মদিনার উপর প্রাধান্য : মক্কা ও মদিনা মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র জায়গা আর এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব মামলুকদের উপর ছিল। 

সুলতান সেলিম মক্কা-মদিনার ওপর অটোমানদের প্রভাব বৃদ্ধির মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে অটোমানদের মর্যাদা বৃদ্ধি আর মামলুকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার প্রয়াস চালান। 

ফলে মক্কা ও মদিনার আধিপত্য লাভ করা নিয়ে মামলুক ও অটোমানদের মধ্যে ১৫১৬ সালের ২৪ আগস্ট মারজ-ই- দাবিকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মিশর ও মামলুকদের ইতিহাসে ১৫১৬ সালের মারজ-ই-দাবিকের যুদ্ধ এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। 

কারণ এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মিশরের মামলুক সালতানাতের পতন ঘটে এবং মিশর অটোমান সালতানাতের একটি ক্ষুদ্র উপনিবেশে পরিণত হয়। 

এই যুদ্ধের অনেকগুলো কারণ থাকলেও অটোমান সুলতান সেলিমের উচ্চাভিলাষ ও বুরুজি মামলুক সুলতান কানসু আল ঘুরীর অদূরদর্শিতাই প্রধান কারণ হিসেবে ইতিহাস স্বীকৃত। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ