মুঘল যুগের সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুঘল যুগের সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুঘল যুগের সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

মুঘল যুগের সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো
মুঘল যুগের সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো

মুঘল যুগের সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো

  • অথবা, মুঘল আমলে যে বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম বিকাশ লাভ করে, যে সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : মুঘল আমলে শিল্প সাহিত্য প্রভূত উন্নতি লাভ করে। মুঘল শাসকরাশ শিল্প সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন। কখনো প্রত্যক্ষ মুঘল শাসকবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায় আবার কখনো আঞ্চলিক পর্যায়ে ব্যক্তিবিশেষের নিজ উদ্যোগে সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। 

মুহুল শাসনামলে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক সহিত্যের বিকাশ ঘটে। মুঘল শাসকরা শিল্প সাহিত্যের প্রতি উদার হওয়ায় সাম্রাজ্যের সর্বত্র সকল বিষয়ের মতো শিল্প সাহিত্য বিকাশ লাভ করে।

মুঘল আমলে সুফিবাদের বিকাশ ঘটায় বিভিন্ন কবি লেখকরা ভক্তিমূলক গান ও সাহিত্যে রচনা করেন। যা ঐ সময়ে ভারতীয় সমাজকে একটা প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়।

মুঘল যুগের সাহিত্য নিয়ে মুঘল যুগের সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. শিখ ভক্তি সাহিত্য : মুঘল যুগে সুফিবাদের ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। আর এ সকল সুফিরা ইরাক, তুর্কি, আফগান প্রভৃতি অঞ্চল থেকে ভারতে আগমন করে। 

আর তাঁদের সবাই উত্তর ভারত হয়ে প্রথমে ভারতে পরে সেখান থেকে পুরো ভারতব তথা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সকল সুফিসাধক সুফিবাদের প্রচারে বিশেষ ভক্তিমূলক সাহিত্য ও গান রচনা করে। 

মুঘল আমলে পাঞ্জাবে শুরুভিত্তিক বিশেষ করে হিন্দু গুরুভিত্তিক ভক্তি গান এবং একেশ্বরবাদের ভক্তিগানের মিশ্রণে পাঞ্জাবে ভক্তিমূলক সাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটে।

২. হিন্দি ভক্তিসাহিত্য : মুঘল আমলে হিন্দিভাষায় বহুবিখ্যাত ভক্তি সাহিত্য, ভাবসাহিত্য, প্রেমমূলক রচনার প্রভূত উন্নতি ঘটে। সুলতানি আমলে হিন্দি সাহিত্যের প্রসার ঘটলেও মুঘল আমলে হিন্দি সাহিত্যের প্রসারের ব্যাপ্তি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ছিল। 

মূলত ব্রহ্মকে অবলম্বন করেই ভাব, প্রেম, ভালোবাসার কাব্য রচিত হয়। মালিক মুহাম্মদ জায়সীর পাদুমাবত, কুকুবানের মৃগবর্তী এবং মনজাহানের মধুমালতি ছিল এসব সাহিত্যের মধ্যে প্রধান।

৩. ব্রজবুলি সাহিত্য : মুঘল আমলে ভারতবর্ষে হিন্দি সাহিত্যের পাশাপাশি ব্রজবুলি সাহিত্যেরও ব্যাপক বিকাশ ঘটে। ব্রজবুলি ছিল একটা কৃত্রিম ভাষা। 

যা শুধুমাত্র সাহিত্য রচনায় ব্যবহার হতো। মিথিলার কবি বিদ্যাপতি ব্রজবুলি ভাষায় সাহিত্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। 

তিনি মূলত শ্রীকৃষ্ণের জীবন কাহিনি অবলম্বনে প্রেমমূলক সাহিত্য রচনা করেন। এছাড়া আরও কয়েকজন কবি ব্রজবুলি ভাষায় সাহিত্য রচনা করেন।

৪. উর্দু সাহিত্য : মুঘল শাসকগণ যেহেতু সবাই মুসলিম ছিলেন। আর তারা তুরস্ক থেকে আগমন করেন। তাই স্বভাবতই মুসলিম হওয়ায় উর্দু ভাষার প্রতি একটা দুর্বলতা তাদের ছিল। 

তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় মুঘল আমলে উর্দু সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। মূলত ভারতে চতুর্দশ শতক থেকে উর্দু একটা স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। 

খাড়ীবোলী বা জবান-ই-ডিলারী থেকে উর্দুর উদ্ভব হয়েছে। এ সময় বেশ কিছু নামি লেখকের মাধ্যমে উর্দু সাহিত্যের বিকাশ ঘটে।

৫. গুড়িয়া সাহিত্য : ভারতের সকল স্থানের মতো এবং সকল ভাষার ন্যায় উড়িয়া ভাষায় সাহিত্য রচিত হয়। মুঘল আমলে অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার ন্যায় উড়িয়া ভাষার সাহিত্যও বেশ খ্যাতি অর্জন করে।

উড়িয়া সাহিত্যের একজন খ্যাতনামা কবি ছিলেন উপেন্দ্র শুরু। তিনি মুঘল রাজসভা কবি ও ভাষার জাদুকর ছিলেন। তিনি ছাড়াও আরও কয়েকজন উড়িয়া ভাষায় সাহিত্য রচনা করেন

৬. বাংলা ভাষায় সাহিত্যে : মধ্যযুগে বিশেষ করে মুঘল আমলে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনায় আসে এক অন্যধারা। যা বাংলা ভাষায় সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ। 

বাঙালি কবি, লেখকরা এদেশ, মাটি, প্রকৃতি, মানুষের জীবনধারা নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গান, সাহিত্য রচনা করেন এবং তারা বাংলা সাহিত্যকে বিকশিত করেছেন। মুরারী ৩৪, নরহরি সরকার, বাসুদেব ঘোষ, রামানন্দ, লোচনদাস প্রমুখ কবি সাহিত্যিক বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করেন।

৭. অহমিয়া ও গুজরাটি সাহিত্য : মুঘল আমলে আঞ্চলিক | সাহিত্যের মধ্যে অহমিয়া সাহিত্য অন্যতম উচ্চতায় আসীন হয়। এসময় শংকর দেব, মাধব দেব এবং বৈষ্ণব ভক্তি গ্রন্থ কীৰ্ত্তনঘোষ রচিত হয়। 

আবার গুজরাটি সাহিত্য বিজয় সেনের রেবন্ত, পিরিদাস, শ্রীধরের রচনা রনমচন্দ্র উল্লেখ্য গুজরাটি আঞ্চলিক ভক্তিগীতি তখন বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

৮. মারাঠি সাহিত্য : মারাঠি সাহিত্য বিশেষ করে মারাঠি সাধন-ভজন ও আঞ্চলিক ফোকসাহিত্য তখন বিকাশ লাভ করে। ভুকারামের আভঙ্গ, ফাদার স্টিফেনসের রচনা কৃষ্ণপুরাণ, রামদাস ও বামন পণ্ডিতের রচনা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

৯. ফারসি সাহিত্য : মূলত আজকে যে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি, এতে আছে বহু ফারসি ভাষার শব্দ। ধারণা করা হয় ফারসি ভাষা তৎকালীন ভারতে তার সঙ্গীত ও সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে এতটাই বিস্তার লাভ করে যা ফারসি সাহিত্যকে ভারতবর্ষে অন্যতম উচ্চতার প্রতিষ্ঠা করে। মুঘল আমলে ফারসি ভাষায় বিশেষ বিকাশ ঘটে। ঐ সময় ফারসি ভাষায় বহু রচনা পাওয়া যায়।

১০. ঐতিহাসিক রচনা : মুঘল সম্রাট বাবর হতে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত আমরা বহু মুঘল শাসকের জীবনী গ্রন্থের সন্ধান পাই। আর এ সকল জীবনী গ্রন্থ রচনায় লেখকগণ তাদের ঐ সময়ের যুদ্ধ বিগ্রহ ও অন্যান্য বিষয় অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। যা ভারতে সাহিত্যের বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘল শাসনামলে ভারতবর্ষে শিল্প সাহিত্যের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। বিশেষ করে আঞ্চলিক সাহিত্য ঐ সময়ে অন্যতম উচ্চতায় আসীন হয়। 

আঞ্চলিক ভাষায় রচিত বিভিন্ন ভক্তিমূলক কবিতা ও গান সাহিত্যকে বিকশিত করতে সাহায্য করেছে। মুঘল আমলে সাহিত্যের উন্নতির পিছনে অন্যতম কারণ হলো মুঘল শাসকবর্গের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা এবং ঐ সময়ে কবি সাহিত্যিকদের বিশেষ কদর করা হতো। 

ফলে কবি-সাহিত্যিকরা সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন এবং সাহিত্যের বিকাশ ও উন্নতিতে ভূমিকা রাখেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুঘল যুগের সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুঘল যুগের সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো। যদি তোমাদের আজকের মুঘল যুগের সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ