প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবনের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর

প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবনের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর
প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবনের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর

প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবনের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর

  • অথবা, প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবনের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলা একক কোনো রাজার অধীনে ছিল না। প্রাচীন বাংলা ছোট ছোট জনপদে বিভক্ত ছিল। একেক জনপদের একেক জন শাসক একেক মতের ধর্মের ছিল। 

মূলত প্রাচীন বাংলার শাসকদের ইচ্ছানুযায়ী সেখানে যে ধর্ম প্রচার ও ধর্মের প্রভাব দেখা যায় আবার সময় সময় ভিন্ন শাসক ভিন্ন সময় প্রাচীন বাংলা শাসন করেছে তাই তাদের ধর্মমতও ভিন্ন।

গুপ্ত যুগের পূর্বে বাংলার ধর্মীয় জীবন : প্রাচীন গুপ্ত যুগের পূর্বে বাংলায় মৌর্য, শৃঙ্গ ও কৃষাণ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় মৌর্য শাসনব্যবস্থা ছিল খুবই উন্নত। 

প্রাচীন বাংলায় মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং মৌর্য শাসকরা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিল এবং সে সময় বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রসার হয়েছিল। 

আর মৌর্য বংশের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্ধকার নেমে আসে। সে সময় হিন্দু বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক উন্নতি সাধন করে।

→ প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবনের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :

১. গুপ্ত যুগে বাংলার ধর্মীয় জীবনের বৈশিষ্ট্য : বাংলায় গুপ্ত শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ধর্মীয় ব্যাপারে সম্রাটরা ছিল উদার। তারা বৌদ্ধধর্মের উন্নতির ব্যাপারে কাজ করলেও অন্য ধর্মের প্রতি তারা বিদ্বেষী ছিল না। 

সকল ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। সম্রাট বৈণ্যগুপ্ত শৈব ধর্মের লোক হলেও তার ধর্মের উন্নতি করে তিনিও অন্য ধর্মের কল্যাণের জন্য কাজ করেন। 

বৌদ্ধধর্মের মঠের উন্নয়ন ও মঠ নির্মাণে তিনি ব্যাপক সহায়তা করেন। সে সময় ধর্মীয় ব্যবস্থা ছিল খুবই উদার ও পরধর্মসহিষ্ণু।

২. পাল যুগের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য : গুপ্ত যুগের মতো পাল সম্রাজ্যও ধর্মীয় ব্যপারে উদাসীন ছিলেন। পাল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পর থেকেই ধর্মীয় কল্যাণে রাজারা কাজ করে গিয়েছেন। 

সে সময় বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিল পাল রাজারা। তারা বৌদ্ধ ধর্মের কল্যাণে বৌদ্ধ ধর্মের মঠ ও মন্দির নির্মাণ করেন। অন্য ধর্মের তারা ক্ষতি করেনি বরং সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। 

বৌদ্ধ রাজারা অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে যেত। সে সময় এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে যেত। 

সে সময় ধর্মীয় বিরোধ বা বিদ্বেষ ছিল না বললেই চলে। তবে আস্তে আস্তে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব প্রতিপত্তি কমতে থাকে পালদের পতনের মধ্যে দিয়ে।

৩. সেন যুগে ধর্মীয় জীবনের বৈশিষ্ট্য : পূর্বেকার গুপ্ত এবং পাল সাম্রাজ্যে যেমন বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ব্যাপক বৃদ্ধি পায় তেমনি আবার সেন বংশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধর্মের প্রভাব কমে গিয়ে হিন্দুধর্মের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। 

সেন রাজারা হিন্দুধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তারা হিন্দুধর্মের উন্নয়নে কাজ করেন। সে সময় হিন্দুধর্মের মধ্যে শ্রেণিভেদ দেখা যায়। 

যেমন-ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, কায়স্ত, ডোম, চণ্ডাল এসব ধর্মীয় বিভাজন লক্ষ্য করা যায়। এ নিয়ে সমাজে মর্যাদার লড়াই হতো মাঝে মাঝে এ শ্রেণির মধ্যে আত্মমর্যাদার লড়াই হতো। 

এসব কারণে সেন যুগে ধর্ম শান্তি প্রিয় ছিল না। গুপ্ত ও পাল যুগের মতো অস্থিতিশীল ধর্মীয় অবস্থা সে সময় বিরাজ করতো।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবন সাদাসিধেই বলা যায়। ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রাচীন বাংলার মানুষ সহনশীল ছিল যার কারণে ধর্ম নিয়ে তেমন কোনো দ্বন্দ দেখা যায় না। 

কিন্তু সেন আমলে সে সহনশীল পরিস্থিতি আর থাকে না সেন আমলে ধর্মীয় জীবন এক অস্থির অবস্থার মধ্যে ছিল। ধর্ম নিয়ে সংঘর্ষ ও এমনকি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ