প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের ভৌগোলিক উপকরণ আলোচনা কর

প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের ভৌগোলিক উপকরণ আলোচনা কর
প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের ভৌগোলিক উপকরণ আলোচনা কর

প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের ভৌগোলিক উপকরণ আলোচনা কর

  • অথবা, বাংলার ইতিহাসে ভৌগোলিক উপকরণের প্রভাব আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীনকালে বাংলাদেশ বলতে কোনো নাম ছিল না। বাংলাদেশ বলতে এখন যে অঞ্চলটি বুঝায়, তখন সে অঞ্চলে কোনো অখণ্ড রাজ্যও ছিল না। 

এদেশ তখন অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং এ রাজ্যগুলো বিভিন্ন জনপদ বা রাষ্ট্র নামে অভিহিত হয়। বিভিন্ন জনপদের সমষ্টিই বঙ্গ বা বাংলা । 

এ জনপদগুলোর মধ্যে পুণ্ড্র, বঙ্গ, গৌড়, রাঢ়, বরেন্দ্র সমতট ও হরিকেল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এসব রাজ্যের সীমা ও বিস্তৃতি সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। 

কারণ রাজশক্তির হ্রাস বৃদ্ধির ফলে এদের সীমানা বার বার পরিবর্তিত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা ছিল অপরূপ সৌন্দর্যর অধিকারী। আর এ সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়ার পেছনে কিছু উপকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। 

প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের ভৌগোলিক উপকরণ : ঐতিহাসিকগণ ভূগোল ও দিনপঞ্জিকে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সূর্য ও চন্দ্র বলে মন্তব্য করেছে। বিভিন্ন জাতি ও তাদের ইতিহাসের উপর ভৌগোলিক প্রভাব লক্ষ্য করে দার্শনিক বোভিন মন্তব্য করেছেন যে, ভূগোল ও আবহাওয়া বিভিন্ন জাতির ভাগ্য নির্ধারণ করে। 

প্রত্যেক দেশের জাতির ভাগ্য নির্ধারণ করে। প্রত্যেক দেশের ঐতিহাসিক বিবর্তনে দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যাবলি বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। 

এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। তদ্রূপ বাংলার ভৌগোলিক অবস্থান প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যাবলি এদেশের ইতিহাসের গতিধারা ও জনজীবনের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে যে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে নিচে তা আলোচনা করা হলো

১. নদীমাতৃকতার প্রভাব : অসংখ্য নদ-নদী পরিবেষ্টিত বাংলার জনগণের জীবনপ্রণালি নানাবিধ পরিবর্তন ও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। রক্ষণশীলতা বাঙালি জাতির মনে কখনোই শিকর গড়তে পারেনি। 

সুদূর অতীতকাল থেকেই এদেশের নদনদী, খালবিল ইত্যাদির উত্থান পতন ও ভাষাপড়ার সাথে এদেশের গণচরিত্র ও ইতিহাসের গতি প্রকৃতি বিশেষভাবে সম্পর্কিত থেকেছে। আবহমানকাল থেকেই বছরের অধিকাংশ সময় এদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল নদ-নদী ও জল বেষ্টিত।

২. ভূ-প্রকৃতি ও আবহাওয়ার প্রভাব : ভূ-প্রকৃতি বাংলার আবহাওয়ায় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত রূপ রয়েছে। যা প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার দু-কূল জুড়ে অসংখ্য নদী-নালা নিয়ে ঘেরা বাংলার দু- কূল জুড়ে গড়ে উঠেছে কত নগর, বন্দর, জনপদ, সেখানে মানুষের হাট বসেছে পণ্যের মেলা বসেছে হৃদয়ের আদান-প্রদান চলছে সভ্যতা সৃষ্টির পরশে জেগেছে প্রাণের স্পন্দন। 

আবার একসময় ধীর শান্ত নদীপ্রবল আক্রোশে দুর্বার হয়েছে। ভূ- প্রাকৃতিক গঠন ও আবহাওয়াগত বৈচিত্র্য বাংলার জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। 

ভূ-প্রকৃতি অনুসারে বাংলার বুকে কর্কটক্রান্তি রেখা মাঝ বরাবর অতিক্রম করেছে। এ বাংলা বিষুবরেখার উপরে অবস্থিত। 

তাই এখানকার আবহাওয়া মৃদু ও নাতিশীতোষ্ণ। সুতরাং বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার ভূ-প্রকৃতি ও আবহাওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।

৩. পলিউর্বরতা : বাংলা হচ্ছে নদীমাতৃক এলাকা। নদীমাতৃক বাংলার আবহাওয়ায় এবং ভূ-প্রকৃতির গঠন বৈচিত্র্যে এদেশের মানুষের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠেছে তার প্রভাব লক্ষ করা যায় এদেশের মানুষের জীবনযাপনের উপর। 

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা আচার আচরণ ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের বিশাল সমভূমি আর প্রচুর নদনদী থাকায় একটি বড় সুবিধা রয়েছে। 

নদী বয়ে এনেছে পলিমাটি, ফলে এদেশের মাটি হয়েছে উর্বর মাটিতে ফলে পর্যাপ্ত ফসল। এভাবেই শস্য-শ্যামলা হয়েছে বাংলাদেশ।

৪. যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাংলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, দুর্গম উত্তরে হিমালয়ের শাখাবিশেষ, পূর্বে আসাম ও ত্রিপুরার পর্বতমালা এবং পশ্চিমে রাজমহল ঝাড়খণ্ডের বনভূমি ও বীরভূম মালভূমির পার্বত্য অঞ্চল বলে বিদেশিরা সহজে এখানে বিজয় করতে পারত না। 

এদেশের মানুষ নৌকা চালানোতে দক্ষ হয়ে উঠে। বিদেশি আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য নৌ-যুদ্ধে পারদর্শী হয়ে উঠে। ইতিহাসে দেখা গেছে যে, মুসলিম সুলতানগণ এদেশের ভৌগোলিক এ বৈশিষ্ট্যের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিল ।

৫. অর্থনীতির উপর প্রভাব : এ অঞ্চল ছিল নদী-নালায় ভরপুর। নদীর গতি পরিবর্তন এদেশে মানুষের জীবনধারা ও অর্থনীতির উপর দারুণ প্রভাব ফেলেছে। 

নদীর একূল ভাঙে এবং ওকূল গড়ে। নদীর গতি পরিবর্তনের কারণে ধ্বংস হয়েছে। আবার নতুন গতিপথের পাশে গড়ে উঠেছে জনবসতি। 

আবহাওয়া ও নদীর অবস্থান প্রাচীন বাংলার ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রকে উন্নত করেছে। বণিকরা শুধু দেশের ভেতরেই নয় নদীপথে দেশের বাইরেও বয়ে নিয়েছে তাদের পণ্য এবং অর্থনীতির ভীত মজবুত করেছে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বাংলাকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করেছে। প্রাচীন বাংলার আবহাওয়া, জলবায়ু, নদীমাতৃকতা প্রভৃতি বাংলার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। 

আর এ প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে বাংলার জনসাধারণ হয়ে উঠেছে দুর্বার ও সংগ্রামমুখী । প্রাচীনকাল থেকে বহুদিন পর্যন্ত বাংলা ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম। 

সেহেতু এদশের স্বাধীন রাজনৈতিক জীবনের আওতায় বাঙালিদের জাতীয় জীবনের বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠার সুযোগ পায় । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ