শশাঙ্কের দোষ ত্রুটি সম্পর্কে বানভট্ট ও হিউয়েন সাং এর বিবরণের যৌক্তিক বিচার কর

শশাঙ্কের দোষ ত্রুটি সম্পর্কে বানভট্ট ও হিউয়েন সাং এর বিবরণের যৌক্তিক বিচার কর
শশাঙ্কের দোষ ত্রুটি সম্পর্কে বানভট্ট ও হিউয়েন সাং এর বিবরণের যৌক্তিক বিচার কর

শশাঙ্কের দোষ ত্রুটি সম্পর্কে বানভট্ট ও হিউয়েন সাং এর বিবরণের যৌক্তিক বিচার কর

  • অথবা, শশাঙ্কের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে বানভট্ট ও হিউয়েন সাং-এর বিবরণের যৌক্তিকতা কতটুকু?

উত্তর : ভূমিকা : পরবর্তী গুপ্ত বংশের শাসকদের হাত থেকে গৌড়কে স্বাধীন করার পর শশাঙ্ক গৌড়ের সিংহাসনে বসেন ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে। 

নিজ দক্ষতাবলে শশাঙ্ক গৌড় এবং গৌড়ের বাইরে তার রাজ্যসীমা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। হর্ষবর্ধন ছিলেন থানেশ্বর রাজা শশাঙ্কের শত্রু। 

হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন বানভট্ট ও গুণগ্রাহী ছিলেন হিউয়েন সাং। বানভট্ট ও হিউয়েন সাং এ মহান শাসক শশাঙ্ক সম্পর্কে বিকৃত তথ্য প্রদান করেছেন। তাই তাদের বিবরণকে সতর্কতার সহিত গ্রহণ করতে হবে।

বানভট্ট ও হিউয়েন সাং-এর বিবরণীর যৌক্তিকতা আপাতদৃষ্টিতে আমরা দেখতে পারি যে, শশাঙ্কের ব্যাপারে বানভট্টের উক্তি ও হিউয়েন সাং-এর বিবরণীর কোনো মিল নেই। যৌক্তিকতা বিচারের বিষয়গুলো হচ্ছে-

১. শশাঙ্ক বিদ্বেষী : হিউয়েন সাং ছিলেন হর্ষবর্ধনের আশ্রিত গুণগ্রাহী একজন পরিব্রাজক। তিনি শশাঙ্ক সম্পর্কে বলেন যে, শশাঙ্ক বৌদ্ধধর্মের বিদ্ধেষী ছিলেন। সুতরাং একথা বলা যায় যে, শশাঙ্কের শত্রু হর্ষবর্ধনের আশ্রিত হিউয়েন সাং অবশ্যই শশাঙ্কের বিরুদ্ধে লিখবেন এটাই স্বাভাবিক ।

২. বানভট্টের উক্তির বিশ্লেষণ : বানভট্ট ছিলেন শশাঙ্কের শত্রু হর্ষবর্ধনের রাজ সভাকবি। সুতরাং তার উক্তিও নিরেপেক্ষ নয়। বানভট্টের উক্তিতে রাজ্যবর্ধন শশাঙ্কের আমন্ত্রণে শশাঙ্কের রাজদরবারে | যান নিরস্ত্র অবস্থায়। তবে তার এ বক্তব্যের কোনো প্রমাণ নেই। সুতরাং তার বক্তব্যকে সতর্কতার সাথে গ্রহণ করতে হবে।

৩. যৌক্তিকতার বিশ্লেষণ : সুতরাং দেখা যায় যে, বানভট্ট ও হিউয়েন সাং-এর বক্তব্যে অস্পষ্টতা লক্ষণীয়। তাছাড়া যেহেতু তারা দুজনই ছিলেন শশাঙ্কের শত্রুর পক্ষের লোক তাই তাদের লেখায় সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর হবে। 

তাদের উক্তির উপর নির্ভর করে শশাঙ্ককে বিশ্বাসঘাতক ষড়যন্ত্রকারীরূপে গ্রহণ করা যুক্তিসঙ্গত হবে না। রাজ্যবর্ধন কনৌজের দিকে অগ্রসর পথে শশাঙ্কের সাথে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন এমন হতে পারে।

কিংবা শশাঙ্কের মন্ত্রীবর্গের ষড়যন্ত্রেও রাজ্যবর্ধনের মৃত্যু হতে পারে। এমনটা মনে করা অসঙ্গত নয়।

শশাঙ্ক বৌদ্ধ নির্যাতন করতেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে তার পেছনে ধর্মীয় কারণের চেয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ বেশি থাকতে পারে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্ক এক বিশেষ নাম। যদি বানভট্ট ও হিউয়েন সাং-এর মতো পৃষ্ঠপোষক রাজ্য সভাকবি ও পরিব্রাজক শশাঙ্কের রাজদরবারে থাকত তাহলে শশাঙ্ককে হয়তোবা আমরা অন্যভাবে চিনতাম। সমসাময়িককালে হর্ষবর্ধনের চেয়ে তার চরিত্র কম উজ্জ্বল হয়ে উঠত না। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ