শশাঙ্কের সাথে হর্ষবর্ধনের যুদ্ধের বিবরণ দাও
শশাঙ্কের সাথে হর্ষবর্ধনের যুদ্ধের বিবরণ দাও |
শশাঙ্কের সাথে হর্ষবর্ধনের যুদ্ধের বিবরণ দাও
- অথবা, শশাঙ্কের সাথে হর্ষবর্ধনের সংঘর্ষ কেন হয়েছিল?
- অথবা, শশাঙ্কের সাথে হর্ষবর্ধনের সংঘর্থের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাও ।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার সর্বপ্রথম সার্বভৌম নরপতি হচ্ছেন শশাঙ্ক। তিনি ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
এবং কতগুলো সমস্যার সম্মুখীন হন। তার এসকল সমস্যার মধ্যে থানেশ্বরের 'রাজা হর্ষবর্ধনের সাথে বিরোধ ছিল অন্যতম।
হর্ষবর্ধনের সাথে সংঘর্ষের কারণসমূহ : নিচে শশাঙ্ক ও হর্ষবর্ধনের মধ্যে সংঘর্ষের কারণসমূহ আলোচনা হলো :
১. শশাঙ্ক কর্তৃক রাজ্য বর্ধনের মৃত্যু : হর্ষবর্ধনের বড় ভ্রাতা রাজ্যবর্ধন গৌড়রাজ শশাঙ্ক কর্তৃক নিহত হয়েছিল। যদিও এ নিয়ে ঐতিহাসিকসের মধ্যে মতবিরোধ আছে।
হর্ষবর্ধন থানেশ্বরের সিংহাসনে আরোহণ করে ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শশাঙ্কের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার মনোবাসনা পোষণ করতে থাকেন।
২. শশাঙ্কের উত্তর ভারতের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ : গৌড়ের সিংহাসনে বসার পর শশাঙ্ক তার চিরশত্রু মৌখরি রাজার পতনের জন্য এবং একই সাথে নিজ রাজ্যের উন্নতির নিরাপত্তার জন্য উত্তর ভারতের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার মনোবাসনা করতে থাকেন যা ছিল তাদের সংঘর্ষের অন্যতম কারণ।
৩. শশাঙ্ক ও মালবরাজ দেবগুপ্তের মধ্যে সন্ধি : গৌড় ও মালবরাজ বংশের মধ্যে সঙ্গি ছিল তাদের দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ।
৪. থানেশ্বর ও কনৌজ জোট : অপরপক্ষ থানেশ্বর ও কনৌজ কারণ এ দুটি জোট পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকত। এর মধ্যে গঠিত জোট ছিল এ দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ।
৫. থানেশ্বর ও কামরূপ রাজ্যের মধ্যে চুক্তি : থানেশ্বর এর রাজা হর্ষবর্ধন ও কামরূপ রাজা ভাস্করবর্মা এর মধ্যে আর একটি জোট গঠিত হয়েছিল। সুতরাং এ জোট গঠনের ফলে হর্ষবর্ধন তারা শক্তিশালী হয়ে যান।
এটি ছিল সংঘর্ষের অন্যতম কারণ। শেষ পর্যন্ত শশাঙ্ক ও হর্ষবর্ধনের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে সঠিকভাবে কোনো কিছু জানা যায়নি।
৬১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শশাঙ্ক সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তা ঐবছর পঞ্জাম তাম্রশাসন থেকে পাওয়া যায়। এছাড়া ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি নিজ রাজ্যে অধিষ্ঠিত ছিলেন তা হিউয়েন সাং এর বিবরণীতেই পাওয়া যায়।
উপসংহার : পরিশেষে এ কথা বলা যায় যে, শশাঙ্ক যে বীর যোদ্ধা ছিলেন তা তিনি আবারও একবার হর্ষবর্ধনের সাথে সংঘর্ষের মাধ্যমে প্রমাণ করলেন। এসব কারণে প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে তাঁকে শ্রেষ্ঠ রাজার স্থান দেওয়া হয়েছে।