সিপাহী বিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ কি ছিল

সিপাহী বিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ কি ছিল
সিপাহী বিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ কি ছিল

সিপাহী বিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ কি ছিল

  • অথবা, অর্থনৈতিক কারণেই সিপাহি বিদ্রোহ হয়েছিল-ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ভূমিকা : ইংরেজদের নানা বৈষম্যের ভিত্তিতে কোম্পানির ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে যে বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটে সেটিই সিপাহি বিদ্রোহ নামে পরিচিত । 

সিপাহি বিদ্রোহের পেছনে অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান থাকলেও মূলত অর্থনৈতিক কারণই ছিল প্রধান। অর্থনৈতিক নানা বৈষ্যমের ফলে মূলত এ বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

→ অর্থনৈতিক কারণেই সিপাহি বিদ্রোহ : ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল ইংরেজ সরকারের অর্থনৈতিক নীতির ফলে জনসাধারণের অসন্তোষ ও ক্ষোভ । সিপাহি বিদ্রোহের অর্থনৈতিক বিভিন্ন দিকগুলো তুলে ধরা হল :

১. রাজস্ব আদায়কারীদের শোষণ : ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ভারতীয় দরিদ্র কৃষককূলের উপর জমিদার ও রাজস্ব আদায়কারী শক্তির যুগ্ম শোষণের ফলে কৃষকরা ক্ষিপ্ত হয়। যার কারণে তারা কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ গড়ে তোলে।

২. করের বোঝা : কোম্পানির শাসকরা এদেশের কৃষক ও শ্রমিকদের উপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিত। যার কারণে তারা বিদ্রোহ করে।

৩. সেচ ব্যবস্থা ধ্বংস : জমিদার ও রাজস্ব আদায়কারী শক্তি যে রাজস্ব আদায় করতো তার সামান্যতম অংশও কৃষির উন্নয়নে ব্যয় করতো না। যার ফলে কৃষি সেচ ব্যবস্থা চরম বিপর্যয়ে পড়ে। যার ফলে কৃষকরা বিদ্রোহ গড়ে তোলে।

৪. শিল্প ধ্বংস : ইংরেজদের বৈষম্যমূলক নীতির ফলে এদেশের স্থানীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়, অন্যদিকে ব্রিটিশ পণ্যের ভারতীয় বাজার দখলদায়িত্ব চরমভাবে লক্ষ্য করা যায়। ব্রিটিশদের এ | বৈষম্যমূলক নীতির ফলে কৃষক, শ্রমিকরা বিদ্রোহ গড়ে তোলে ।

৫. অত্যাচারমূলক আইন : ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক কৃষকদের উপর বিবিধ অত্যাচারমূলক আইন, এসবের ফলে কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠে এবং ব্রিটিশ শাসনের অবসানকল্পে তারা বিধ্বংসী মহাবিদ্রোহে সামিল হয়।

৬. নীতি : ইংরেজদের শাসনামলে অর্থনৈতিক নানা- শোষণের মাধ্যমে জাতীয় জীবনে চরম দারিদ্র্যতা নেমে আসে। কোম্পানির ভূমিরাজস্ব নীতির ফলে এদেশের একদা সমৃদ্ধ। কৃষককূল, বণিক মহাজনদের কাছে ঋণগ্রস্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে এবং ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়।

৭. সূর্যাস্ত আইন : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রসূত ভূমি বিক্রয় আইন তথা সূর্যাস্ত আইনের অনুশীলনে অনেক জমিদার সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার হন, যার কারণে সিপাহি বিদ্রোহের মতো বিধ্বংসী মহাবিদ্রোহের সামিল হয়।

৮. ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতিসাধন : ভারতের ব্রিটিশ শাসনের প্রত্যক্ষ কুফল ছিল ভারতের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। 

কোম্পানির কর্মচারীদের শুল্কবিহীন অন্তর্বাণিজ্য এবং প্রতিটি দ্রব্যে একচেটিয়া বাণিজ্যিক অধিকার মূলত ভারতের চিরাচরিত বাণিজ্য প্রথার মূলে ব্রিটেনের শিল্পজাত পণ্যের আমদানি বাড়িয়ে সরকার ব্রিটিশ পণ্যে বাজার ছেয়ে ফেলে। 

নানাবিধ কারণে এদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্রিটিশরা চরম ক্ষতিসাধন করে। যার ফলে কৃষক শ্রমিকরা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ গড়ে তোলে ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ব্রিটিশরা অর্থনৈতিকভাবে এদেশের মানুষকে নানাভাবে নিষ্পেষিত করে তোলে। অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়ে বঞ্চিত কৃষক শ্রমিকরা কোম্পানির সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ গড়ে তোলে। এ কারণে বিদ্রোহ গড়ে উঠলেও অর্থনৈতিক কারণ ছিল প্রধান কারণ ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ