সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ কর

সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ কর
সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ কর

সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ কর

  • অথবা, সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার কারণ কি ছিল?

উত্তর : ভূমিকা : ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ বা সিপাহি বিদ্রোহ সমগ্র ভারতবর্ষের গণসংগ্রামের ইতিহাসে সর্বপ্রধান ঘটনা। মাত্র দু'বছরের মধ্যে ভারতের কোটি কোটি মানুষের মিলিত এ অভ্যুত্থান নানা কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

→ সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ : সিপাহি বিদ্রোহ কোনো একক কারণে ব্যর্থ হয়নি। এ পিছনে ছিল বহুবিধ কারণ। নিম্নে যেসব কারণে সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হয়েছিল তা আলোচনা করা হলো:

১. পরিকল্পনার অভাব : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ প্রধানত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সংগঠনের অভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার পূর্বেই বিদ্রোহীগণ বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহী হয়ে পড়ে।

২. সংগঠনের অভাব : সঠিক সুশৃঙ্খল সংগঠনের অভাবে বিদ্রোহ শক্তিশালী হতে পারেনি।

৩. একতার অভাব : সিপাহি বিদ্রোহ ভারতের একটা | বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপ্ত হলেও গোটা ভারতে তা ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। 

ভারতের বিভিন্ন জমিদারগণ যুদ্ধে অংশ না নিয়ে উল্টো ইংরেজদের সহযোগিতা করেছিলেন। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতগণও এ বিদ্রোহ সমর্থন করে। ফলে বিদ্রোহ শীঘ্রই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

৪. সামরিক শিক্ষা ও অস্ত্রের অভাব : বিদ্রোহীদের অস্ত্রশস্ত্র ও রশদের যথেষ্ট অভাব ছিল। তাদের অনেকেরই সামরিক শিক্ষা ছিল না। অন্যদিকে ব্রিটিশদের পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র, রশন ছিল এবং | সামরিক প্রশিক্ষণও ছিল প্রয়োজনমাফিক।

৫. আদর্শ ও সংহতির অভাব : বিদ্রোহীদের মধ্যে আদর্শ ও সংহতির অভাব তাদের বিফলতার অন্যতম কারণ ছিল। বিদ্রোহ কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দ্বারাও পরিচালিত হয়নি। 

কোনো একটি বিশেষ অঞ্চলে ইংরেজদের বিতাড়িত করার পর সেই শূন্যস্থানে কি ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রচলিত হবে সে সম্বন্ধে পূর্ব নির্ধারিত কোনো পরিকল্পনা ছিল না। যার ফলে বিদ্রোহ সফলতা লাভ করতে পারেনি।

৬. স্বার্থপরতা ও গোষ্ঠীতান্ত্রিক মনোবৃত্তি : অযোধ্যার বেগম মৌলভি আহমদ উল্লার সঙ্গে মুঘল শাহজাদাগণও সিপাহি নেতাদের সঙ্গে কলহে লিপ্ত হয়েছিলেন। 

সম্রাট বাহাদুর শাহ মারাঠা নেতা নানা সাহেব এবং ঝাঁসির রানি নিজ নিজ এলাকায় ক্ষমতা পুনরুদ্ধারেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। 

এভাবে বিদ্রোহের নেতৃবৃন্দের স্বার্থপরতা, গোষ্ঠীতান্ত্রিক মনোবৃত্তি বিদ্রোহের প্রাণশক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিল।

৭. ডাক ও তারের উপর দখল : ডাক ও তারের উপর ব্রিটিশদের দখলদায়িত্ব অব্যাহত ছিল। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে খবরাখবর নিত এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে সুবিধা হতো। অন্যদিকে সিপাহিদের সে সুযোগ ছিল না বিধায় সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিদ্রোহীদের মধ্যে উপযুক্ত কোনো সেনানায়ক ছিল না। ছিল না সুষ্ঠু কোনো পরিকল্পনা। অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক শক্তির অভাবও ছিল লক্ষণীয়। 

যার কারণে বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়। জন লরেন্স এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন- সিপাহিদের মধ্যে যদি একজনও প্রতিভাবান সেনানায়ক থাকত, তবে আমাদের সর্বনাশ হতো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ