সিপাহি বিদ্রোহের দমন সম্পর্কে যা জান লেখ
সিপাহি বিদ্রোহের দমন সম্পর্কে যা জান লেখ |
সিপাহি বিদ্রোহের দমন সম্পর্কে যা জান লেখ
- অথবা, কিভাবে সিপাহিদের বিদ্রোহ দমন হয়েছিল? সংক্ষেপে লিখ।
- অথবা, সিপাহি বিদ্রোহের দমন সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটিশদের দীর্ঘ এক শতক কাল পর্যন্ত নির্যাতন ভোগ করার পর এদেশের কৃষক শ্রমিকরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। পরাধীনতার ১০০ বছর পর স্বাধীনতা ঘোষণা করে সৈনিকরা।
কিন্তু ব্রিটিশরা নানা কৌশলে সিপাহিদের বিদ্রোহকে দমন করে । তবে এ বিদ্রোহ দমনে ইংরেজদের বহু কষ্ট ভোগ করতে হয়।
→ সিপাহি বিদ্ৰোহ দমন : সিপাহিদের বিদ্রোহ ভারতের বিভিন্ন অংশে দ্রুতগতিতে বিস্তৃতি লাভ করে এবং এটি এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে, মনে হতো ভারত থেকে ইংরেজ শাসন শেষ হতে চলেছে। কিন্তু ইংরেজরা সেটিকে বিভিন্ন কৌশলে দমন করেন। নিম্নে সিপাহি বিদ্রোহের দমন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. সমর কৌশল ও রাজন্যবর্গের সহযোগিতা : বিদ্রোহের প্রথম দিকে ব্রিটিশপক্ষ বহুস্থানে পরাজিত হলেও জন ও হেনরি, লরেন্স হ্যাভলক, উট্রম, কলিন ক্যাম্পবেল প্রভৃতি ইংরেজ সেনানায়কদের সমর কৌশল ও উপস্থিত বুদ্ধি এবং পাঞ্জাবি, নেপালি ও শিখ সৈন্যদের সহযোগিতায় এবং একাধিক দেশীয় রাজন্যবর্গের সহযোগিতায় শীঘ্রই বিদ্রোহ দমন করা হয়।
২. দিল্লি দখল ও নির্যাতন : ১৮৫৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ গোলন্দাজ বাহিনী তীব্র সংগ্রামের পর দুর্গ প্রাচীর ভেঙ্গে বিদ্রোহীদের পরাস্ত করে দিল্লি শহর দখল করে।
সম্রাট ভীত হয়ে দিল্লি থেকে দুর্গ প্রাসাদ ত্যাগ করেন। ব্রিটিশ বাহিনীর অত্যাচার করে দিল্লিতে বহু নির্দোষ নর-নারীকে হত্যা করে।
৩. বাহাদুর শাহের আত্মগোপন : ইংরেজ সামরিক বাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে অবশেষে দুর্গ প্রাসাদ ত্যাগ করে হুমায়ূনের সমাধি সৌধে আশ্রয় নেন।
অবশেষে ইংরেজ সেনাপতি হাডসনের হাতে ধরা পড়েন এবং সম্রাটের দুই পুত্র ও এক পৌত্রকে ইংরেজরা নৃশংসভাবে হত্যা করে।
৪. বাহাদুর শাহের মৃত্যু ও মুঘল বংশের পতন : ১৮৫৭ |সালের জানুয়ারি মাসে বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেওয়া হয়। সেখানে ১৮৬২ সালে ৮৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। | সম্রাটের মৃত্যুর সাথে সাথে মুঘল বংশের চিরতরে পতন ঘটে।
৫. ব্রিটিশদের লক্ষ্ণৌ দখল : লক্ষ্ণৌর বিদ্রোহ দমনে ইংরেজদের বহু কষ্ট স্বীকার করতে হয়। অবশেষে অস্ত্রশস্ত্র ও রসদের অভাবে 'বিদ্রোহীরা অসুবিধায় পড়ে। ১৮৫৮ সালের মার্চ মাসের স্যার কলিন ক্যাম্বেলের অধীনে ব্রিটিশ সৈন্যগণ লক্ষ্ণৌ দখল করে।
৬. ঝাঁসির রানি নিহত : ১৮৫৭ সালের ১৭ জুন তারিখে যুদ্ধরত অবস্থায় ঝাঁসির রানি নিহত হন। তাকে পরাজিত করেছিলেন জেনারেল স্যার হিউরোজ।
৭. তাঁতিয়া তোপির পরাজয় : ঝাঁসির রানির মৃত্যুর পর তাঁতিয়া তোপি ইংরেজদের বহু বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে অবশেষে বন্দি হন এবং পরে প্রাণদণ্ড দণ্ডিত হয়ে মারা যান।
৮. বিদ্রোহী নেতাদের পরাজিত : কানপুরের নানা সাহেব এক সময় পরাস্থ হয়ে নেপালে পলায়ন করেন। বিহারের কুনওয়ার সিং, বেরিলির খান, বাহাদুর খান, ফৈজবাদের মৌলভি আহমদউল্লাহ প্রভৃতি বিদ্রোহী নেতারা যুদ্ধরত অবস্থায় অথবা ফাঁসিতে প্রাণ দেন।
এভাবে ভারতের নেতাগণ একে একে পরাজিত ও নিহত হলে বিদ্রোহের বহ্নিশিখা নির্বাপিত হয়ে যায়। ১৮৫৮ সালের জুলাই মাসের মধ্যে সকল বিদ্রোহ শেষ হয়ে সর্বত্র শৃঙ্খলা ফিরে আসে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ ও সমর কৌশল ও সৈন্যবাহিনীর অভাবে কৃষক-শ্রমিক সিপাহিরা সফলতা লাভ করতে পারেনি। তবে এটির সুদূরপ্রসারী ফল ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা ইংরেজদের ভিতকে নাড়া দিয়েছিল।