সিরাজ উদ দৌলার শাসনকালের বিবরণ দাও

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সিরাজ উদ দৌলার শাসনকালের বিবরণ দাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সিরাজ উদ দৌলার শাসনকালের বিবরণ দাও । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

সিরাজ উদ দৌলার শাসনকালের বিবরণ দাও
সিরাজ উদ দৌলার শাসনকালের বিবরণ দাও

সিরাজ উদ দৌলার শাসনকালের বিবরণ দাও

  • অথবা, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার শাসনকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির বিবরণ দাও ।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে নবাব সিরাজ-উদ- দৌলার রাজত্বকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার স্বল্পসময়ের শাসনকাল বিশেষ ঘটনাবহুল। কেননা তার শাসনামলে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য ব্রিটিশ আধিপত্য অস্তমিত হয়। 

তার শাসনকালে শুরু হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাম্রাজ্যবাদের সূচনা। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সময়কালে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের জাল এমনভাবে বিস্তার লাভ করে যার নাগপাশ থেকে স্বয়ং নবাবও বের হতে পারেননি। 

মাত্র দেড় বছরের শাসনকালে নবাব সিরাজ-উদ- দৌলা কিছু ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখেন বটে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ফলে সর্বোপরি তার শাসনকালের সমাপ্তি ঘটে পলাশির যুদ্ধের চরম পরাজয়ের গ্লানিতে।

→ সিরাজ-উদ-দৌলার শাসনকাল : যদিও নবাব সিরাজ- উদ-দৌলা স্বল্পসময়ে বাংলার মসনদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তথাপি তার শাসনকাল ছিল ঘটনাবহুল ও তাৎপর্যপূর্ণ। 

নিম্নে সিরাজ- উদ-দৌলার শাসনকালের বিবরণ দেওয়া হলো :

১. সিংহাসনে আরোহণ : নবাব আলীবর্দী খানের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। তার তিন কন্যা ছিল। তিন কন্যাকেই তিনি তার বড় ভাই হাজী আহমদের তিন পুত্রের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। 

১৭৩৩ সালে কনিষ্ঠ কন্যা আমেনা” বেগমের গর্ভে সিরাজ-উদ-দৌলার জন্ম হয়। সিরাজ-উদ-দৌলার পিতা জয়নুদ্দীন আহমদ খান বিহারের ডেপুটি নবাব ছিলেন। 

১৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দে আফগান বিদ্রোহীদের হাতে তিনি প্রাণ হারান। এসময় আলীবর্দী খান সিরাজকে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করে যান। 

সে সূত্রে মাতামহের মৃত্যুর পর সিরাজ-উদ-দৌলা ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল বাংলার সিংহাসনে নবাব পদে অভিষিক্ত হন। 

মাত্র তেইশ বছর বয়সে সিরাজ বাংলার মসনদে আরোহণ করে এক অভূতপূর্ব ঘটনার জন্ম দেন। অর্থাৎ তার শাসনকালের সূচনাই হয়েছিল তাৎপর্যপূর্ণভাবে।

২. শওকত জঙ্গের বিদ্রোহ দমন : নবাব আলীবর্দী খান তার প্রিয় দৌহিত্র সিরাজ-উদ-দৌলার জন্য মসনদের সাথে অনেক সমস্যাদি রেখে যান। তার নিজের পরিবারেই ছিল অনৈক্য। 

তাদের মধ্যে ছিল সিরাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, সিরাজ মসনদে আরোহণ করেই এইসব সমস্যার সম্মুখীন হন এবং দেখতে পান চারদিকে চক্রান্তকারীদের জাল পাতা রয়েছে। 

সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যেও সিরাজের শত্রুর অভাব ছিল না। তার প্রধান শত্রু ছিল তারই খালাতো ভাই পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা নবাব শওকত জঙ্গ। 

সিরাজ মসনদে আরোহণের পর শওকত জঙ্গ তাকে অভিনন্দন বাণী পাঠাননি। এতে পরিষ্কার বুঝা যায় যে শওকত জঙ্গ সিরাজের অনুগত ছিলেন না। 

এ অবস্থায় নবাব ১৭৫৬ সালের ১৬ মে সিরাজ মুর্শিদাবাদ থেকে সসৈন্যে শওকত জঙ্গকে দমন করার উদ্দেশ্যে পূর্ণিয়ার দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু রাজমহলে পৌঁছানোর পর অভিযান বাতিল করেন।

ইতোমধ্যে শওকত জঙ্গ বাদশাহের উজিরকে এক কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে সুবাদারির ফরমান এবং সিরাজকে বিতাড়িত করার জন্য বাদশাহের অনুমতি পেয়েছিলেন।

সুতরাং তিনি সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করলেন। নবাব সিরাজও কলকাতা জন্ম সমাপ্ত করে মানিকটাদের উপর কলকাতার ভার অর্পণ করে মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন। 

এরপর তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী শওকত জঙ্গকে দমনের উদ্দেশ্যে ১৭৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর দু'পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে শওকত জ পরাজিত ও নিহত হন।

৩. ঘষেটি বেগমের ষড়যন্ত্র নির্মূল : সিরাজ-উদ-দৌলার অপর প্রধান শত্রু ছিলেন তার খালা ঘষেটি বেগম। ঘষেটি বেগম ছিলেন অপুত্রক। সিরাজের ছোট ভাই ইকরাউদ্দৌলাকে তিনি লালন পালন করেন। 

তার ইচ্ছা ছিল নবাব আলীবর্দীর মৃত্যুর পর ইকরামউদ্দৌলাকে মসনদে বসাবেন। কিন্তু আলীবর্দীর মৃত্যুর পূর্বেই ১৭৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ইকরামুউদ্দৌলার মৃত্যু হয়। 

ঘষেটি বেগম - নিঃসন্তান হয়েও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন এবং সিরাজের অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না পেয়ে শওকত জঙ্গের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন। 

এছাড়া সিরাজের শত্রু যে যেখানে ছিল সকলেই ঘষেটি বেগমের আশীর্বাদ লাভ করে। ফলে সিরাজা ঘষেটি বেগমের দিকে মনোনিবেশ করেন। 

ঘষেটি বেগমের অর্থ- সম্পদের প্রতি সিরাজের লোভও ছিল। তিনি ঘষেটি বেগমের মতিঝিল প্রাসাদ অধিকার করার জন্য একদল সৈন্য পাঠান। 

ঘষেটি বেগমও বাধা দেওয়ার জন্য বেশ কিছু লোকজন জড়ো করেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল তার অনুচরবৃন্দ সকলেই তাকে ত্যাগ করেছে, কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। 

সিরাজ কোনো প্রকার রক্তপাত ছাড়াই ঘষেটি বেগমের প্রাসাদ অধিকার করে এবং তার অর্থসম্পদ নিজের হস্তগত করেন।

৪. ইংরেজ কর্তৃক দুর্গ নির্মাণ : নবাব আলীবর্নী খান ইউরোপীয় বণিকদেরকে তার রাজ্যে দুর্গ নির্মাণ করতে অনুমতি দেননি। আলীবর্দী খানের মৃত্যু আসন্ন এই সংবাদ পাওয়া মাত্র বাংলার ইংরেজ ও ফরাসি বণিকগণ ইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের প্রস্তুতির সূত্র ধরে বাংলায় অবস্থিত ঘাঁটিগুলোতে পূর্ণ নির্মাণ শুরু করে। 

আলীবর্দী খানের মৃত্যুতে নবাবের মসনদে আরোহণের আনুষাঙ্গিক ব্যস্ততার সুযোগ গ্রহণ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। 

নবাব অবিলম্বে ইংরেজ ও ফরাসিদের পূর্ণ নির্মাণ বন্ধ করবার এবং নির্মিত অংশ ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। 

ফরাসিরা নবাবের আদেশ মানলেও কলকাতায় ইংরেজ কর্তৃপক্ষ নবাবের আদেশ অমান্য করে এবং ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নতুনভাবে নির্মাণ করে তাকে দুর্ভেদ্য করে তোলে। 

এটি ছিল নবাবের প্রতি চরম ঔদ্ধত্যমূলক আচরণ। যা নবাবের শাসনকালের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

৫. ইংরেজ কর্তৃক কৃষ্ণদাসকে আশ্রয় প্রদান : ১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর শওকত জঙ্গ মৃত্যুবরণ করলে সিরাজ-উদ-দৌলা রাজবহুতকে ঢাকা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগে দাখিল করেন। 

তবে আলীবর্দীর মৃত্যুর আগেই রাজবল্লভের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। 

যাহোক পরবর্তীকালে সিরাজ তার অনুচরদের ঢাকায় পাঠান এবং নির্দেশ দেন রাজবহুতের ধন-সম্পদ যে বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং তার পরিবার পরিজনদের আটক করা হয়। 

রাজবল্লভের গোপন নির্দেশে তার পুত্র কৃষ্ণদাস তখন পরিবার পরিজন ও আনুমানিক ৫০ লক্ষ টাকার ধন-সম্পদসহ কলকাতায় ইংরেজদের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করে। 

১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল সিরাজ কৃষ্ণদাসকে তার হাতে অর্পণ করার জন্য কলকাতার ইংরেজ গভর্নর ড্রেককে নির্দেশ দেন। কিন্তু ডেক নবাবের আদেশ অমান্য করে নবাবের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানে।

৬. সপ্তকের অপব্যবহার : নবাবের শাসনামলে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল দত্তকের অপব্যবহার। মুঘল সম্রাট ফররুখশিয়ার ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে এক ফরমান দ্বারা ইংরেজ কোম্পানিকে বিনা শুল্কে সমগ্র ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অধিকার প্রদান করেন। 

বিনা শুল্কে আমদানি-রপ্তানির সুবিধার জন্য কোম্পানিকে যে ছাড়পত্র দেওয়া হয় তা দস্তক নামে পরিচিত। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা শীঘ্রই সপ্তকের অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। 

মুর্শিদকুলী খান এর বিরোধিতা করেন। ফলে স্থির হয় যে, কোম্পানির কর্মচারীরা" ব্যক্তিগত বাণিজ্যের জন্য দস্তক ব্যবহার করবে না। 

কিন্তু সিরাজ ক্ষমতাসীন হয়ে লক্ষ করেন যে, কোম্পানির কর্মচারীরা বোঝাপড়ার শর্ত অমান্য করে ব্যক্তিগত ব্যবসা করছে এবং নবাবকে কর ফাঁকি দিচ্ছে। 

এর ফলে নবাবের রাজকোষে যথেষ্ট ক্ষতি হয়। নবাব ইংরেজ গভর্নর ড্রেককে দত্তকের অপব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ড্রেক তা অগ্রাহ্য করেন। এর ফলে নবাব ইংরেজদের প্রতি ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হন।

৭. সিরাজ কর্তৃক কলকাতা জয় : নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ক্ষমতা গ্রহণের সময় থেকে ইংরেজরা নানাভাবে ও পন্থায় নবাবের আদেশ অমান্য করে আসছিল। এসব ঘটনা ছিল নবাবের সার্বভৌম ক্ষমতার উপর ইংরেজদের নগ্ন হস্তক্ষেপ। 

এসব ঘটনার ফলে সবার ক্রমশ ইংরেজদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্ধিহান হয়ে উঠেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বদ্ধপরিকর হন। 

১৭৫৬ সালের জুন মাসে তিনি কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে তিনি কাশিমবাজারের ইংরেজ কুঠি দখল করে নিয়ে কলকাতার দিকে অগ্রসর হন। 

১৬ জুন সিরাজ কলকাতার উপকণ্ঠে পৌঁছান। কলকাতা দুর্গের সৈন্য সংখ্যা তখন খুবই অল্প ছিল- কার্যক্ষম ইউরোপীয় সৈন্যের সংখ্যা তিনশ'রও কম ছিল এবং ১৫০ জন আর্মেনিয়ান ও ইউরেশিয়ান সৈন্য ছিল। 

কলকাতাস্থ ইংরেজ ঘাঁটি ফোর্ট উইলিয়াম দখল করতে সিরাজকে বেগ পেতে হয়নি। গভর্নর ট্রেক ও অপরাপর ইংরেজগণ ফোর্ট উইলিয়াম ত্যাগ করে জলপথে ফলতা নামক স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

২০ জুন কলকাতার নতুন গভর্নর হলওয়েলে আত্মসমর্পণ করেন এবং বিজয়ী সিরাজ কলকাতার দুর্গে প্রবেশ করেন।

৮. 'অন্ধকূপ হত্যা : কলকাতা দখল প্রসঙ্গেই অন্ধকূপ হত্যা নামক কাহিনির কথা জানা যায়। ইংরেজ লেখক ও কর্মচ হলওয়েল কর্তৃক এ কাহিনি সৃষ্টি হয়। 

এখানে বলা হয়, ১৮" x ১৪" – ১০" একখানি অতিক্ষুদ্র কক্ষে সিরাজ-উদ-দৌলার আদেশে ১৪৬ জন ইংরেজ বন্দিকে আবদ্ধ রাখা হয়েছিল এবং এদের মধ্যে ১২৩ জন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল। 

তবে এ ঘটনা যে অতিরঞ্জিত তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তদুপরি এ ঘটনার পিছনে কিছুটা সত্যি লুকিয়ে আছে। 

ফোর্ট উইলিয়াম দখল করে সিরাজ ইংরেজ বন্দিদেরকে অন্ধকূপ নামক একটি কক্ষে রেখেছিলেন। সেখানে হয়তো আহত কিছু সৈন্য মৃত্যুবরণ করেছিল।

৯. ইংরেজ কর্তৃক কলকাতা পুনর্দখল : কলকাতা জয় করার পর এর রক্ষার উপযুক্ত বন্দোবস্ত না করেই নবাব মুর্শিদাবাদের সিংহাসনে ফিরে আসেন। 

এ সুযোগে ইংরেজ কোম্পানি মাদ্রাজ থেকে রবার্ট ক্লাইভের অধীনে একদল সৈন্য ও এডমিরাল ওয়াটসনের অধীনে এক নৌবহর কলকাতা পুনরুদ্ধারের জন্য পাঠান। 

ক্লাইভ ও ওয়াটসন বিনা বাধায় কলকাতায় উদ্বাস্ত ইংরেজদের সঙ্গে মিলিত হন। ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর ইংরেজ সৈন্য ও নৌবহর কলকাতার দিকে যাত্রা করে। 

নবাবের বজ্রবন্ধে একটি ও তার কাছেই আরো একটি দুর্গ ছিল। ইংরেজরা বন্ধবন্ধ দুর্গ ধ্বংস করে এবং বিনা যুদ্ধে কলকাতা অধিকার করে। এরপর তারা ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ সুরক্ষিত করে।

১০. আলীনগরের সন্ধি স্থাপন : ইংরেজ কর্তৃক কলকাতা পুনর্দখলের সংবাদ পেয়ে নবাব কলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। ১৭৫৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নবাব কলকাতার শহরতলীতে আমীর চাঁদের বাগানে শিবির স্থাপন করেন। 

ইংরেজরা অতর্কিতভাবে নবাবের শিবির আক্রমণ করলে নবাব পাল্টা আক্রমণ করে ইংরেজদের হটিয়ে দেন। এসময় কলকাতা জয় করার মত নবাবের যথেষ্ট সৈন্য সংখ্যা থাকা সত্ত্বেও নবাব ইংরেজদের সাথে আপোস করার সিদ্ধান্ত নেন। 

কেননা এসময় আফগানরা আহমদ শাহ আবদালী দিল্লি, আগ্রা, মথুরা প্রভৃতি বিধ্বস্ত করে বিহার ও বাংলার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। এতে নবাব ভীত হয়ে পড়েন এবং ইংরেজদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন। 

১৭৫৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ইংরেজ ও নবাবের মধ্যে আলীনগরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। সন্ধির শর্তানুসারে 

(i) নবাব ইংরেজগণের দিল্লির সম্রাটের নিকট থেকে প্রাপ্ত সকল বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা স্বীকার করে নেন 

(ii) কলকাতা আক্রমণের সময় সাধিত সম্পদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে নবাব স্বীকৃত হন, 

(iii) নবাব কলকাতায় দুর্গ নির্মাণ করার অনুমতি দেন।

এই সন্ধির ফলে নবাবের প্রতিপত্তি অনেক হ্রাস পায় এবং ইংরেজদের শক্তি, প্রতিপতি ও ঔদ্ধত্যতা অনেক বেড়ে যায় ।

১১. পলাশির যুদ্ধ : নবাবের শাসনকালের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে পলাশির যুদ্ধ। এ যুদ্ধের ফলে সিরাজের শাসনকালের অবসান ঘটে। ষড়যন্ত্রকারীগণ যখন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত তখন রবার্ট ক্লাইভ অতিসামান্য অজুহাতে সিরাজের বিরুদ্ধে সসৈন্যে অগ্রসর হন। 

নবাবও ষড়যন্ত্রের কথা জ্ঞাত হয়ে পূর্বেই প্রস্তুত ছিলেন। সুতরাং তিনিও সসৈন্যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন প্রাতঃকালে ভাগীরথীর নদীর তীরে পলাশির প্রান্তরে উভয় পক্ষে যুদ্ধ হয়। 

যুদ্ধে নবাবের বিশাল বাহিনী থাকা সত্ত্বেও রণকৌশলগত অজ্ঞতা এবং মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার দরুন ক্ষুদ্র ইংরেজ বাহিনীর কাছে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয় ঘটে। ফলে বাংলার স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ২০০ বছর ব্যাপী ইংরেজ শাসনে লুণ্ঠিত হয়ে পড়ে।

উপসংহার : আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, নবাব সিরাজ- উদ-দৌলার শাসনকাল ছিল নানা ঘটনায় ঘটনাবহুল। তার "শাসনের সূচনা হয়েছিল ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে আর সমাপ্তিও ঘটে ষড়যন্ত্রের কারণে।

তার শাসনকাল ছিল ক্ষণস্থায়ী। যার ফলে তিনি শাসনব্যবস্থায় স্থিতি আনয়ন করতে সক্ষম হননি। তার বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত হয়েছে ষড়যন্ত্র দমনে এবং ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করে। 

তিনি প্রাথমিক সমস্যা দূর করতে সমর্থ হলেও সার্বিক সমস্যা সমাধানে তিনি অনভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। 

যার ফলে তার শাসনকাল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি। মোটকথা নবাব সিরাজের শাসনকাল ছিল খুবই স্বল্পস্থায়ী কিন্তু বিভিন্ন কারণে ঘটনাবহুল।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সিরাজ উদ দৌলার শাসনকালের বিবরণ দাও

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সিরাজ উদ দৌলার শাসনকালের বিবরণ দাও । যদি তোমাদের আজকের সিরাজ উদ দৌলার শাসনকালের বিবরণ দাও পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ