ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কি । ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সম্পর্কে লিখ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কি । ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সম্পর্কে লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কি । ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সম্পর্কে লিখ । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কি । ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সম্পর্কে লিখ
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কি । ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সম্পর্কে লিখ

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কি । ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সম্পর্কে লিখ

  • অথবা, ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ধারণা দাও। 
  • অথবা, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সম্পর্কে যা জান লিখ। 

উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষে 'ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সবচেয়ে নির্মম পরিণতি ছিল ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। ১৭৬৪ সালে বক্সার যুদ্ধের বিজয়ের ফলে কোম্পানি বণিকের ব্যবসা ছেড়ে শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। 

কিন্তু বাংলার রাজস্ব প্রশাসন সম্পর্কে কোম্পানির কর্মচারীদের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা রাজস্ব আদায়ে ব্রিটেনের প্রচলিত পদ্ধতি প্রয়োগের চেষ্টা করেন। 

কিন্তু বস্তুত তাতে প্রকৃত ক্ষমতা চলে যায় কোম্পানির হাতে। ফলে কোম্পানির কর্মচারীদের অবাধ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য, লুণ্ঠন ইত্যাদির কারণে দেশে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর দেখা দেয়।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর : ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ইংরেজরা এক চরম প্রহসনের মাধ্যমে নবাব সিরাজের বাহিনীকে পরাজিত করেন। ফলে তারা বাংলার শাসন ক্ষমতায় অংশগ্রহণে সুযোগ লাভ করেন। 

এরপর ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে বাংলায় নবাব মীর কাশিম অযোধ্যর সুজা-উদ-দৌলা এবং মুঘল সম্রাটের সম্মিলিত বাহিনী ইংরেজদের হাতে চরমভাবে পরাজিত হয়। 

বাংলার শাসন ক্ষমতায় ইংরেজদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন রবার্ট ক্লাইভ বাংলার দ্বিতীয় বারের মত গভর্নর হয়ে এসে ১৭৬৫ সালে এক প্রহসনের চুক্তির মাধ্যমে বাংলায় নাবালক নবাব নাজিম উদ্দিনকে বার্ষিক ৫৩,৮৬,১৩১ লক্ষ টাকা। 

আর মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমকে ২৬ লক্ষ টাকা দেয়ার চুক্তিতে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেন। 

লর্ড ক্লাইভ এই দেওয়ানি লাভের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ ১৭৫৫ সালে যে নতুন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন তাই ইতিহাসে দ্বৈত শাসন হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে। 

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দ্বৈত শাসন ছিল লর্ড ক্লাইভের একটি সাংবিধানিক মুখোশ ও রাজনৈতিক কূটচাল মাত্র। এ শাসনব্যবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ফৌজদারী বিষয়াবলি, বিচার প্রভৃতি নবাবের হাতে অর্পণ করা হয়। 

আর রাজস্ব আদায় দেওয়ানি ও জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়বলি ও সামরিক প্রতিরক্ষা ইত্যাদির ভার দেয়া হয়, কোম্পানির হাতে। কিন্তু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা মূলত কোম্পানির হাতেই চলে যায়। 

কারণ নবাবের কোনো ব্যক্তিগত সৈন্যবাহিনী না থাকলেও তার উপর দেয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভার দেয়া হয়। অন্যদিকে কোম্পানিও তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে কোনোপ্রকার সহযোগিতা করতো না। 

ফলে নবাব এই ক্ষমতাহীন বিশাল দায়িত্ব পালনে প্রচণ্ডভাবে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে কোম্পানি দিওয়ান বা রাজস্বের ভার সরাসরি নিজ হাতে না নিয়ে রেজা খান মুহাম্মদ ও সিতার রায় নামক দুজন কর্মচারীর তত্ত্বাবধানে তা ছেড়ে দেন। 

কিন্তু তারা কলকাতায় আড়ম্বরপূর্ণ জীবন-যাপন করে কোম্পানির লোকদের দ্বারা রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। 

কিন্তু কোম্পানির লোকজনের বাংলার রাজস্ব প্রশাসন সম্পর্কে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা ব্রিটেনে প্রচলিত রাজস্বের নিয়ম-কানুন এখানে প্রয়োগ করা শুরু করেন। 

কিন্তু তা বাংলার অর্থনীতির সাথে খাপ না খাওয়ায় রাজস্ব প্রশাসনে চরম জবরদস্তি লুটপাট ও দুর্নীতিতে সয়লাভ হয়ে পড়ে।

এ সময় রাজ্যে দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা কোনো ফসল ফলাতে ব্যর্থ হয়। দেখা দেয় তীব্র খাদ্য সংকট। 

একদিকে খাদ্য সংকট অন্যদিকে কোম্পানির কর্মচারীদের রাজস্ব আদায়ের জন্য নির্মম নির্যাতন-নিপীড়ন দেখে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের আবির্ভাব ঘটায় বাংলা ১১৭৬ সন ইংরেজি ১৭৭০ সনে এই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বলে তা ইতিহাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত হয়ে আছে।

ছিয়াত্তরের এই মন্বন্তরের কারণে বাংলায় প্রায় এক- তৃতীয়াংশ লোক মৃত্যুবরণ করেন। গ্রামবাংলার অনেক জনপদ গভীর জঙ্গলে পরিণত হয়। খাদ্যের অভাবে মানুষ বিভিন্ন দুর্নীতি, লুটপাট ডাকাতি, রাহাজানি ইত্যাদি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৬৫ সালে লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণমূলক দ্বৈত শাসন বাংলার শাসন কাঠামো ও অর্থনীতির জন্য ছিল অভিশাপস্বরূপ। 

কোম্পানির কর্মচারীদের অবাধ লুটপাটের কারণে দেখা দেয় ভয়াবহ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। যাতে প্রাণ হারায় অসংখ্য মানুষ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কি । ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সম্পর্কে লিখ

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কি । ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সম্পর্কে লিখ। যদি তোমাদের আজকের ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কি । ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সম্পর্কে লিখ পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ