সংস্কারক হিসেবে বাইবার্সের কৃতিত্ব উল্লেখ কর
সংস্কারক হিসেবে বাইবার্সের কৃতিত্ব উল্লেখ কর |
সংস্কারক হিসেবে বাইবার্সের কৃতিত্ব উল্লেখ কর
- অথবা, প্রশাসক হিসেবে বাইবার্সের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।
উত্তর : ভূমিকা : মিশরে আইয়ুবী সালতানাতের শেষ পর্যায়ে এসে আইয়ুবী সুলতান নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মিশরীয় বাহিনীর উপর আর ভরসা রাখতে পারছিলেন না।
ফলে এ সময় আইয়ুবী সুলতান মালিক আস সালিহ তাঁর দেহরক্ষী বাহিনীতে বেশ কিছু তুর্কি ক্রীতদাসদের নিযুক্ত করেন। এই জাসদের নেতৃত্বে ১২৫০ সালে আইয়ুবী বংশের পতন ঘটে এবং সূচনা হয় মামলুক শাসনের।
বিভিন্ন চড়াই-উত্রাই ফিরিয়ে ১২৬০ সালে রুকনউদ্দিন বাইবার্স মামলুক সিংহাসনে আরোহণ করেন। অসাধারণ সমর নেতার পাশাপাশি তিনি একজন যোগ্য প্রশাসক বা সংস্কারকও ছিলেন।
→সুলতান বাইবার্সের কৃতিত্ব : নিম্নে সুলতান বাইবার্সের কৃতিত্ব আলোকপাত করা হলো :
১. সেনাবাহিনীর সংস্কার : ক্ষমতায় এসেই বাইবার্স সৈন্যবাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা বিধান করেন। এতদিন সৈন্যদের মধ্যে যে গোত্রীয় ও বংশগত বিরোধ ও মতপার্থক্য ছিল তা দূরীভূত করে, তিনি সৈন্যবাহিনীতে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
২. নৌবাহিনীর সংস্কার : বাইবার্স সিংহাসনে আরোহণ করে উপলব্ধি করেন মৌ শক্তিতে বলীয়ান মোঙ্গল ও ক্রুসেডারদের আক্রমণ থেকে মামলুক সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য তাঁর নৌবাহিনীর আমূল সংস্কার প্রয়োজন। আর এজন্য তিনি তাঁর নৌবাহিনীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নৌঘাঁটি ও অসংখ্য রণতরী নির্মাণ করেন।
৩. বিচার বিভাগ : বাইবার্স একজন ন্যায়বিচারক ছিলেন। তাই বিচার বিভাগের উন্নতির জন্য তিনি কায়রো দুর্গের পদমূলে পুরাতন বিচারালয় পুনঃনির্মাণের আদেশ জারি করেন।
তাছাড়া তিনিই একমাত্র মামলুক সুলতান যিনি ইসলামের প্রধান ৪টি মাজহাবের মাসালা-মাসায়েল ব্যাখ্যা করার জন্য ৪ জন স্বতন্ত ইমাম নিয়োগ করেছিলেন।
৪. ডাক বিভাগের সংস্কার : সুলতান রুকনউদ্দিন বাইবার্স | তাঁর ডাক বিভাগের আমূল সংস্কারসাধন করেন। তিনি ডাক বিভাগের উন্নতির জন্য সেনাবাহিনীর একটি অংশকে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
৫. রাজস্ব সংস্কার : সুলতান রুকনউদ্দিন বাইবার্স ক্ষমতায় এসে রাজ্যের রাজস্ব ব্যবস্থায় যথেষ্ট সংস্কারসাধন করেন। তিনি রাজ্যের পূর্বোক্ত অযৌক্তিক কর এবং সৈন্যবাহিনীর জায়গির প্রথার বিলোপ করে তাদের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের আওতায় এনে নিয়মিত বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করেন।
৬. গোয়েন্দা বাহিনী গঠন : সুলতান বাইবার্স রাজ্যের যাবতীয় খবরাখবর, বিরোধীদের কর্মতৎপরতা ইত্যাদি জানার জন্য একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা বাহিনী গঠন করেন। গোয়েন্দা বাহিনীর তৎপরতার কারণে তাঁর শাসনামলে বড় কোনো বিদ্রোহ বা বিশৃঙ্খলা ঘটেনি।
৭. মূল্য নিয়ন্ত্রণ : সুলতান বাইবার্সের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংস্কার হলো মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রবর্তন। তিনি রাজ্যে মজুতদারী ও মুনাফাখোরী ব্যবস্থার পতন ঘটানোর জন্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন। ফলে ১২৬৪ সালের দুর্ভিক্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছিল ।
৮. কৃষির সংস্কার : সুলতান বাইবার্স তাঁর শাসনামলে কৃষির উন্নতির জন্য বহু খাল খনন করেন। তাছাড়া পুরাতন অনেক খাল পুনঃখননের ব্যবস্থাও তিনি গ্রহণ করেছিলেন। ফলে এ সময় কৃষি উৎপাদন পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সুলতান রুকনউদ্দিন বাইবার্স ছিলেন একজন যোগ্য সংস্কারক ও প্রশাসক। তাই ১২৬০ সালে সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি রাজ্যের সৈন্যবাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী, রাজস্ব, কৃষি, মূল্য নিয়ন্ত্রণ, ডাক ও বিচার বিভাগের আমূল সংস্কার সাধন করে প্রশাসন ব্যবস্থায় গতিশীলতা নিয়ে আসেন ।