সুলতান আল নাসিরের কৃতিত্ব উল্লেখ কর

সুলতান আল নাসিরের কৃতিত্ব উল্লেখ কর
সুলতান আল নাসিরের কৃতিত্ব উল্লেখ কর

সুলতান আল নাসিরের কৃতিত্ব উল্লেখ কর

  • অথবা, সুলতান আল নাসিরের কৃতিত্বগুলো কী কী?

উত্তর : ভূমিকা : মামলুক শাসকদের মধ্যে সুলতান আল নাসিরের রাজত্বকাল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ তিনি মামলুক সুলতানদের মধ্যে সর্বোচ্চ সময় রাজত্বকাল পরিচালনা করেছিলেন।

এই সুদীর্ঘ রাজত্বকালে তিনি দু'বার সিংহাসনচ্যুত হলেও আবার সিংহাসনে উপবিষ্ট হন। তাঁর শাসনকালে মামলুক সাম্রাজ্য জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্পসাহিত্য, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল । আল নাসিরের কৃতিত্ব ও আলোচনার পূর্বে তার পরিচয় জানা জরুরি।

→ পরিচয় ও সিংহাসন আরোহণ : সুলতান আল নাসির ১২৮৪ খ্রিস্টাব্দে মিশরের কায়রো নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন বাহরি মামলুক সুলতান কালাউন এবং মাতা ছিলেন মোঙ্গল বংশের রমনি আশলুন বিতে শাকতেহ। 

ভ্রাতা আল খলিল, আল আশরাফের মৃত্যুর পর তিনি ১২৯৩ খ্রিস্টাব্দে মামলুক বংশের সুলতান হন। তিনি আমৃত্যু ১৩৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মামলুক বংশের শাসক হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন। তবে তিনি ২ বার পদচ্যুত হন ।

→ আল নাসিরের কৃতিত্ব : নিম্নে আল নাসিরের কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :

১. বিদ্রোহ দমন : সুলতান আল নাসির যখন ক্ষমতায় এসে তাঁর সকল বিদ্রোহী শক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করেন। দ্বিতীয় বাইবার্সও তাঁর শাসনের বিরোধিতা করলে তিনি তাকে বন্দি ও হত্যা করে উক্ত বিদ্রোহ দমন করেন।

২. মক্কা-মদিনার কর্তৃত্ব : সুলতান মালিক আল নাসির মুসলিম বিশ্বে স্বীয় প্রজ্ঞা বৃদ্ধির জন্য মুসলমানদের পবিত্র স্থান মক্কা ও মদিনার উপর স্বীয় প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। এ সময় মোঙ্গল নেতা উলজাইতু খান মক্কা-মদিনা দখলের চেষ্টা করলে নাসির শহর দুটির উপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।

৩. দ্রুজদের বিদ্রোহ দমন : এ সময় লেবাননের দ্রুজ সম্প্রদায়ের শিয়া বিদ্রোহীগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে। জেবেলা দখল করে ব্যাপক লুন্ঠন চালায় ও হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। 

তারা হযরত আলীকে রাসূলের উত্তরাধিকারী ঘোষণা দিয়ে কুরআনের রূপক ব্যাখ্যা গ্রহণ করত। সুলতান আল নাসির কঠোরহস্তে এই দ্রুজ সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হন।

৪. বেদুইনদের বিদ্রোহ দমন : সুলতান আল নাসির তাঁর রাজ্যের ব্যয়ভার বহন ও মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য মরু অঞ্চলের বেদুইনদের উপর অতিরিক্ত করারোপ করেন। বেদুইনরা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তাদের বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেন।

৫. গ্রিসের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক : এশিয়া মাইনরে তুর্কিদের প্রতিনিয়ত শক্তি বৃদ্ধি ঘটলে তাদের সাথে আল নাসিরের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য গ্রিক সম্রাট ১৩১৭ এবং ১৩২৬ সালে পরপর দুটি দল প্রেরণ করেন।

৬. দিল্লির সাথে সম্পর্ক স্থাপন : ভারতবর্ষের তুর্কি সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক পারস্য বিজয়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ভাই তিনি এই বিজয়াভিযান আরো সহজতর করার জন্য আল নাসিরকে পশ্চিম পারস্য অভিযানের অনুরোধ জানিয়ে ১৩৩১ সালে কায়রোতে রাজপ্রতিনিধি প্রেরণ করেন।

৭. মরক্কো ও আবিসিনিয়ার সাথে সম্পর্ক : আবিসিনিয়ার রাজা যখন নাসিরের বন্ধুত্ব কামনা করেন তখন নাসির তা গ্রহণ করেন। এছাড়া এ সময় মরক্কোর সুলতান ও নাসিরের দরবারে দূত প্রেরণ করে মৈত্রী স্থাপন করেন।

৮. ফিরোজ শাহের সাথে সম্পর্ক : এ সময় নাসির দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহের সাথেও বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। ফিরোজ শাহ প্রেরিত দূতকে আল নাসির তাঁর দরবারে সাদর আমন্ত্রণ জানান ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাহরি মামলুক সুলতান আল নাসিরের রাজত্বকালে মামলুক বংশ ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল ও যথেষ্ট সমৃদ্ধি অর্জন করেছিল। তাই কালাউনের পর তাঁর রাজত্বকালকে বাহারি মামলুকদের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ শাসনকাল বলা হয়ে থাকে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ