আল নাসিরের পরিচয় দাও । আল নাসির সম্পর্কে যা জান লিখ
আল নাসিরের পরিচয় দাও । আল নাসির সম্পর্কে যা জান লিখ |
আল নাসিরের পরিচয় দাও । আল নাসির সম্পর্কে যা জান লিখ
উত্তর : ভূমিকা : আল নাসির ছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মামলুক শাসক। তার রাজত্বের বৈশিষ্ট্য এই যে, তিনি তিনবার মিশরের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।
মামলুক সুলতানদের মধ্যে তার রাজত্বকালই দীর্ঘতম। তার সুদীর্ঘ ৪২ বছর রাজত্বকালে মামলুক সাম্রাজ্যের গৌরব বৃদ্ধি পায় ।
→ আল-নাসিরের পরিচয় : নিম্নে আল-নাসিরের পরিচয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
জন্ম পরিচয় : আল নাসিরের মূলনাম আল মালিক আল নাসির আদদিন মুহাম্মদ ইবনে কালাউন। তিনি ১২৮৪ খ্রিস্টাব্দে মিশরের কায়রো নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুন কায়রোতেই মৃত্যুবরণ করেন। আল নাসিরের পিতার নাম কালাউন এবং মাতার নাম আশলুন বিনতে শাকতেহ।
সিংহাসন লাভ : মিশরের মামলুক সুলতান কালাউনের মৃত্যুর পর তার পুত্র আশরাফ খলিল সিংহাসনে আরোহণ করেন।
কিন্তু ১২৯৩ সালে এক আততায়ীর হাতে আশরাফ খলিল নিহত হলে তার ছোট ভাই আল মালিক নাসির মুহাম্মদ মাত্র নয় বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন।
তিনি ১২৯৩-৯৪, ১২৯৮-১৩০৮ এবং ১৩০৯-১৩৪০ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। প্রথম দুইবার তিনি সিংহাসনচ্যুত হন এবং পরে ১৩০৯ সাল হতে একটানা ৩০ বছর যাবৎ সিংহাসনে থেকে শাসন কার্য পরিচালনা করেন।
বিদ্রোহ দমন : মামলুক সুলতান আল নাসির সাম্রাজ্যের মধ্যে বিদ্রোহী শক্তির ক্ষমতা খর্ব করার জন্য তৎপর হন। ২য় বাইবার্স তার শাসনের বিরোধিতা করলে তাকে বন্দি ও হত্যা করা হয়।
লেবাননের কট্টরপন্থি শিয়া বিদ্রোহী দ্রুজ সম্প্রদায় এর বিদ্রোহ দমন করেন। এমন কি কর বাড়ানোর অজুহাতে রাজ্যের বেদুইনরা বিদ্রোহ করলে তাদের অনেককে হত্যা করে বিদ্রোহ দমন করেন সুলতান নাসির।
বৈদেশিক নীতি : মামলুক সুলতান আল নাসির তার শাসনকালকে নিরাপদ করার জন্য গ্রিস, দিল্লি, মরক্কো, আবিসিনিয়া-এর শাসকদের সাথে সুসম্পর্ক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
এমন কি মোঙ্গলদের প্রভাব ক্ষুণ্ণ করতে এবং বিশ্বের মুসলমানদের সহানুভূতি লাভে মক্কা ও মদিনার উপর স্বীয় প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা করেন।
জনহিতকর কাজ : সুলতান নাসির মামলুক শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক ছিলেন। তিনি তার শাসনামলে রাস্তা ঘাট কালভার্ট তৈরি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আল নাসিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেন ।
চরিত্র : আল-নাসির আত্মবিশ্বাসী ও কঠোর প্রকৃতির নরপতি ছিলেন। তার চরিত্র ছিল নিষ্কলঙ্ক ও মাধুর্য্যময়। তার বুদ্ধি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল অতুলনীয়। তার সাহস ও কৌশল ছিল অভূতপূর্ব। জ্ঞান, গুণ, রুচি প্রভৃতির দিক দিয়ে তিনি ছিলেন অতুলনীয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান আল-নাসির নিঃসন্দেহে মধ্যযুগের শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তার রাজত্বকালে মিশর জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা সভ্যতায় উন্নতির শিখরে আরোহণ করে।