বাংলায় হুসেন শাহী বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর

বাংলায় হুসেন শাহী বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর
বাংলায় হুসেন শাহী বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর

বাংলায় হুসেন শাহী বংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর

  • অথবা, বাংলায় হুসেন শাহী বংশের উত্থান ও পতন ইতিহাস বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : হুসেন শাহী বংশের শাসন বাংলার স্বাধীন সালতানাতের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আলাউদ্দিন হুসেন শাহ হাবশি শাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলায় শান্ত ও শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনে সচেষ্ট হন। 

হুসেন শাহী শাসনামলে (১৪৯৪-১৫৩৮ খ্রি.) চারজন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হুসেন শাহ, নাসিরউদ্দিন নসরত শাহ, আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ ও গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ রাজত্ব করেন। 

তাঁদের রাজত্বকালে বাংলার প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। এ কারণে হুসেন শাহী শাসনকে বাংলার স্বাধীন সালতানাতের স্বর্ণযুগ বলা হয়।

বাংলা হলেন শাহী বংশের উত্থান : নিম্নে বাংলায় হুসেন শাহী বংশের উত্থান আলোচনা করা হলো :

(ক) আলাউদ্দিন হুসেন শাহ : বাংলার ইতিহাসে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করেন। তিনি একজন অনন্য সাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন লোক ছিলেন। তিনি শাহজাদা হয়ে জন্মগ্রহণ করেননি। 

সামান্য অবস্থা থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে নিজ যোগ্যতাবলে উন্নতির চরম শিখরে উঠেন। তিনি হাবশী শাসনের অবসান ঘটিয়ে হুসেন শাহী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। 

নিম্নে তাঁর রাজত্বকাল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

১. সিংহাসনে আরোহণ : আলাউদ্দিন হুসেন শাহ তাঁর পিতা ও ভাইয়ের সঙ্গে সুলতান বরবক শাহের আমলে বাংলায় আসেন এবং চাকরি গ্রহণ করেন। 

পরে তিনি মুজাফ্ফর শাহের অধীনে চাকরি নেন এবং নিজ যোগ্যতাবলে তিনি উন্নির পদে প্রতিষ্ঠিত হন। 

বিদ্রোহীরা মুজাফ্ফর শাহকে হত্যা করে রাজ্যের প্রধান অমাত্যগণ মিলিত হয়ে আলাউদ্দিন শাহকে সুলতান মনোনীত করেন।

২. অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন : আলাউদ্দিন হুসেন শাহ সিংহাসনে আরোহণ করে অল্প সময়ের মধ্যেই রাজ্যে পূর্ণ শাস্তি- শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

তিনি অরাজকতা সৃষ্টিকারী সৈন্যদলকে কঠোর হস্তে দমন করেন। হাবশীদের রাজ্য থেকে বিতাড়িত করেন। রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বিধানের উদ্দেশ্যে তিনি অভিজ্ঞ রাজকর্মচারী নিযুক্ত করেন।

৩. রাজধানী স্থানান্তর : নিরাপত্তার জন্য সুলতান আলাউদ্দিন পাণ্ডুয়া থেকে দিনাজপুর জেলার একডালায় রাজধানী স্থানান্তর করেন। রাজধানী স্থানান্তর সুলতান আলাউদ্দিনের কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে।

৪. সামরিক কৃতিত্ব : সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের ছাব্বিশ বছরের রাজত্বকালে বাংলা মুসলিম রাজ্যের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন করে তিনি রাজ্যসীমা সম্প্রসারণে মনোনিবেশ করেন।

৫. সিকান্দার লোদীর সঙ্গে সন্ধি ও উত্তর বিহার অভিযান : জৌনপুরের হুসেন শাহ শরীকে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ রাজনৈতিক আশ্রয় নিলে দিল্লির সুলতান সিকান্দার লোদী ক্রুক ১৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় অভিযান প্রেরণ করেন। 

শেষ পর্যন্ত দুইপক্ষ সন্ধি স্থাপন করে স্ব স্ব রাজ্যে ফিরে যায়। হুসেন শাহ সমগ্র উত্তর বিহার এবং দক্ষিণ বিহারের কিয়দংশ দখল করেছিলেন।

৬. কামরূপ-কামতা ও আসাম অভিযান : বাংলার পূর্ব-উত্তর সীমান্তে কামতা ও কামরূপের সাথে বাংলার সুলতানদের প্রায়ই যুদ্ধ লেগে থাকত। 

সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহও কামরূপ ও কামতায় অভিযান প্রেরণ এবং দীর্ঘকাল অবরোধের পর কামরূপ ও কামতা মুসলিম রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

রিয়াজ-উস-সালাতীনে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের আসাম অভিযানের উল্লেখ আছে। প্রথমদিকে মুসলিম বাহিনী সাফল্য লাভ করলেও পরে আসামরাজা কর্তৃক পরাজিত হয়।

৭. উড়িষ্যা অভিযান : মুদ্রায় উল্লেখ থেকে জানা যায় যে, উড়িষ্যার সঙ্গেও হুসেন শাহের সংঘর্ষ হয়েছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজ ভ্রমণকারী বারবোসা এই সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে হুসেন শাহের সে সাফল্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

৮. চট্টগ্রাম বিজয় : চট্টগ্রাম স্থায়ীভাবে হুসেন শাহের অধিকারের বহু প্রমাণ সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে ও অন্যান্য সূত্রে রয়েছে। 

১৫১৭ থেকে ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে চট্টগ্রামের উপর হুসেন শাহী শাসকদের অধিকার অক্ষুণ্ণ ছিল। পর্তুগিজ দূত জাও-দা সিলভেরিওর উক্তি অনুসারে মনে হয় যে, ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে হুসেন শাহ চট্টগ্রাম অধিকার করেছিলেন।

(খ) সুলতান নরসত শাহ : আলাউদ্দিন হুসেন শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নসরত শাহ ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি দীর্ঘ ১৩ বছর রাজত্ব করেন। নানা কারণে তাঁর রাজত্বকাল বাংলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। 

নিম্নে নসরত শাহের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. সামরিক কৃতিত্ব : সুলতান নসরত শাহ যখন বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন, সে সময় উত্তর ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছিল। 

এ গোলযোগপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগে নসরত শাহ অগ্রসর হয়ে আজমগড় পর্যন্ত তার রাজ্যসীমা সম্প্রসারিত করেন। এরপর তিনি প্রায় সমগ্র উত্তর বিহার অধিকার করেন। 

সুলতান নসরত শাহ ত্রিহুতের রাজাকে পরাজিত করে নিহত অধিকার করেন। অতঃপর তিনি হাজীপুর অধিকার করে সেখানে একটি ঘাঁটি নির্মাণ করেন।

২. পর্তুগিজদের সমন : নসরত শাহের শাসনামলে পর্তুগিজরা প্রায়ই জলপথে লুন্ঠন করতো। এমনকি তারা বাংলায় আধিপত্য বিস্তার করতেও চেষ্টা চালায়। নসরত শাহ পর্তুগিজদের কঠোর হস্তে দমন করেন এবং তাদেরকে বাংলা থেকে বিতাড়িত করেন।

৩. সম্রাট বাবরের সাথে সংঘর্ষ ও সন্ধি : ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর দিল্লির লোদী রাজবংশের অবসান ঘটিয়ে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করলে পরাজিত गाয় র াহের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করে।

প্রথমে নসরত শাহ বাবরের করেন। ১৫২৯ খ্রিষ্টাব্দে আফগান নেতাগণ বাবরের বিরুদ্ধে সৈন্য পরিচালনা করলে নসরত শাহও এ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। 

যুদ্ধে যথেষ্ট বীরত্ব প্রদর্শন সত্ত্বেও বাংলার সৈন্যবাহিনী মুঘল রণকৌশলের নিকট পরাজিত হয়। বাবর কর্তৃক আরোপিত পাঠাবলি নসরত শাহ স্বীকার করে নেন।

৪. অহমরাজ্য আক্রমণ : অহম বুরঞ্জি থেকে জানা যায় যে, নসরত শাহ তাঁর রাজত্বের শেষ বছরে (১৫৩২ খ্রি.) তার মুসলিম সেনাপতি ভুরবক একটি বাহিনী নিয়ে অহমরাজ্য আক্রমণ করেন এবং তেমনি দুর্গ অধিকার করেন। 

অহোম রাজ্যের পুত্রের সাথে মুসলিম বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যরা সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও পরে তারা অহোমীয়াদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়।

৫. নসরত শাহের কৃতিত্ব : নসরত শাহ পিতার মতোই উদার, সদাশয় ও সুদক্ষ শাসক ছিলেন। তিনি পিতৃরাজ্য অক্ষুণ্ণ রেখে তার রাজ্যসীমা বৃদ্ধি করেছিলেন। 

নসরত শাহ একজন মহানুভব ও নিষ্ঠাবান মুঘলমান ছিলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ করেছিলেন। 

এসব মসজিদ নির্মাণে তাঁর শিল্পানুরাগী মনের পরিচয় পাওয়া যায়। গৌড়ের বড় সোনা মসজিন, কদম রসুল মসজিদ, ভবন বাঘা মসজিদ, নবগ্রাম মসজিদ প্রভৃতি তার অপূর্ব স্থাপত্যকীর্তির নিদর্শন। 

নসরত শাহ বিদ্যোৎসাহী নৃপতি ছিলেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য উৎকর্ষ লাভ করে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কবি ও পণ্ডিত ব্যক্তি তাঁর দরবারে সম্মান পেয়েছে। 

জ্ঞান প্রসারের জন্য বিভিন্ন স্থানে গ্রন্থাগার স্থাপন তার শিক্ষানুরাগের পরিচয় বহন করে। ফতেহাবাদে তার নিজস্ব গ্রন্থাগার ছিল। 

নসরত শাহ জনদরদি ও প্রজারঞ্জক শাসক ছিলেন। তার শাসনামলে প্রজারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করে। রাজ্যের সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় ছিল। 

দীর্ঘ ১৩ বছর রাজত্ব করার পর ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে নসরত শাহ মৃত্যুবরণ করেন। তার সুশাসনে বাংলা সমৃদ্ধ ও শান্তিময় অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল।

(গ) আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ : ১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে নসরত শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। মুদ্রা প্রমাণে মনে হয় যে, নসরত শাহ তার ভাই গিয়াসুদ্দিন মাহমুদ শাহকে উত্তরাধিকারী নিয়োগ করেছিলেন। 

রিয়াজ-উস- সালাতিনের মতে, রাজ্যের একদল আমীরের সহায়তায় ফিরোজ শাহ সিংহাসনে বসেন। মাত্র নয় মাস শাসনের পর মাহমুদ শাহ তাকে হত্যা করে সিংহাসন দখল করেন। 

ফিরোজ শাহের স্বল্পকালীন রাজত্বের বিশেষ কোন ঘটনা জানা যায় না। নসরত শাহের মৃত্যুর পূর্বে অহোমরাজ্যের সাথে যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, তা তাঁর রাজত্বকালেও চলেছিল। 

ফিরোজ শাহ পিতা ও পিতামহের নায় বাংলা সাহিত্যে উৎসাহী ছিলেন। তিনি যুবরাজ থাকাকালীন তার আদেশে শ্রীধর কবিরাজ 'বিদ্যাসুন্দর' কাব্য রচনা করেন।

(ঘ) গিয়াসুদ্দিন মাহমুদ শাহ ভ্রাতুষ্পুত্র : সুলতান ফিরোজ শাহকে হত্যা করে গিয়াসুদ্দিন মাহমুদ শাহ ১৫৩৩ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর ৫ বছর স্থায়ী রাজত্বকালে হুসেন শাহী বংশের অবসান ঘটে। 

শুরু থেকেই মাহমুদ শাহ অমাত্যদের মধ্যে নিজের শত্রু ও স্বীয় রাজ্যে অন্তর্ধন্ত্রের বীজ বপন করেন। তাঁর পাঁচ বছরের রাজত্বকাল এই বিদ্রোহ ও বিবাদেই কাটে । 

এই বিবাদের শেষ পরিণতিস্বরূপ বিহারের শাসনকর্তা জালাল খানের অভিভাবক শের খানের নিকট মাহমুদ শাহ পরাজয় বরণ করেন। 

মাহমুদ শাহ বিহারের হাজীপুরে পলায়ন করেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। এর মাধ্যমেই বাংলায় হোসেনশাহী রাজবংশের অবসান ঘটে। 

গিয়াসুদ্দিন মাহমুদ শাহের রাজত্বকালেই সর্বপ্রথম পর্তুগিজগণ বাংলায় বাণিজ্যিক ঘাঁটি স্থাপন করার সুযোগ পায়। পর্তুগিজ সাহায্যের আশায় তিনি চট্টগ্রাম ও সাতগাঁও -এ পর্তুগিজ ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলেন।

বাংলায় হুসেন শাহী বংশের পত্তন : নিম্নে বাংলায় হুসেন শাহী বংশের পত্তন আলোচনা করা হলো :

১. নিল্লির সুলতানদের আক্রমণ : বাংলা হুসেন শাহ সিংহাসনের আরোহণের কিছুদিন পর জৌনপুর সুলতানের সাথে দিল্লির সুলতান সিকান্দার লোদীর সংঘর্ষ বাধে। 

সংঘর্ষের সিকান্দার লোদীর নিকট পরাজিত হয়ে জৌনপুরে সুলতান গৌড়ের অধিপতি হুসেন শাহের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেন। 

জৌনপুরের সুলতানকে আশ্রয় দানের অপরাধে সিকান্দার লোদী গৌড়ের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। 

পরবর্তীতে লোদী শাসকরা সুযোগ পেলেই বঙ্গে আক্রমণ চালাত। এতে হুসেন শাহী বংশের ভিত্তি অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়।

২. মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা : ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে দিল্লিতে বাবর কর্তৃক মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা হুসেন শাহী বংশের পতনের অন্যতম কারণ। 

হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ও নসরত শাহ শক্তিশালী মুঘল আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সুর্বল শাসকদের কারণে হুসেন শাহ বংশের পতনদিক ধাপিত হয়।

৩. রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা : রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা বাংলায় হুসেন শাহী বংশের পতন আরেকটি অন্যতম কারণ। আলাউদ্দিন হুসেন শাহের মৃত্যুর পর বিহার, উড়ষ্যা ও অহোম প্রভৃতি রাজ্যে চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। 

এতে বাংলার স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। নসরত শাহ আমলে এ বংশের পতনের ভাঙন শুরু হয় ও গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহের রাজত্বকালে এ অবস্থা চরম পর্যায়ে পৌঁছে এবং পতন ঘটে।

৪. পর্তুগিজদের শক্তি বৃদ্ধি : হুসেন শাহ ও নসরত শাহের শাসনামলে পর্তুগিজরা তেমন কোনো সুবিধা লাভ করতে পারেন নি। কিন্তু গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে তারা খুব শক্তিশালী হয়ে উঠে।

এ সময় শেরশাহের আক্রমণ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য মাহমুদ পর্তুগিজনের সামরিক সাহায্যের আশায় চট্টগ্রাম ও সাতগাঁওয়ে বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করেন। 

ফলে বাংলার অর্থনীতি ও রাজনীতিতে পর্তুগিজদের প্রভাব বিস্তৃত হতে থাকে, যা হুসেন শাহী বংশের পতন ডেকে এনেছিল।

৫. শেরশাহের গৌড় অধিকার : শেরশাহের গৌড় অধিকার বাংলা হুসেন শাহ পতনের আরেকটি প্রধান কারণ। ১৫৩৬ সালে শেরশাহ সর্বপ্রথম গৌড় আক্রমণ করেন। 

কিন্তু সে সময় সন্ধির মাধ্যমে গৌড়ের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হলেও দ্বিতীয় আক্রমণের গৌড়ের পতন ঘটে। 

শেরশাহ তার বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে গৌড় অবরোধ করলে দীর্ঘদিন অবরোধ্য থাকার পর মাহমুদ শাহ বাধ্য হয়ে পরাজয় বরণ করেন। এ পরাজয়ের মধ্য দিয়েই হুসেন শাহী বংশের পতন ঘটে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এবং তাঁর বংশধরগণ প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল বাংলা শাসন করেছেন । বাংলার স্বাধীন সুলতানি শাসনের ইতিহাসে তা এক গৌরবোজ্জ্বল যুগ।

রাজ্যসীমা সম্প্রসারণ, প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা এবং ধর্ম, সাহিত্য ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ উৎকর্ষ এ যুগের বৈশিষ্ট্য রাজকর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে যে উদারতা হুসেন শাহী যুগে লক্ষ্য করা যায়, তা শাসক ও শাসিতের মধ্যে ব্যবধান ঘোচাতে সাহায্য করেছিল। 

সর্বদিক বিবেচনা করে একথা নিঃসন্দেহে আশা- আকাঙ্ক্ষা সংবলিত এক শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। এই যুগের কৃতিত্ব বাস্তবিকই এ যুগকে বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল যুগ রূপে চিহ্নিত করেছে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ