বিক্রমাদিত্য কার উপাধি ছিল । প্রাচীন ভারতের বিক্রমাদিত্য বলা হয় কাকে এবং কেন

বিক্রমাদিত্য কার উপাধি ছিল । প্রাচীন ভারতের বিক্রমাদিত্য বলা হয় কাকে এবং কেন
বিক্রমাদিত্য কার উপাধি ছিল । প্রাচীন ভারতের বিক্রমাদিত্য বলা হয় কাকে এবং কেন

বিক্রমাদিত্য কার উপাধি ছিল । প্রাচীন ভারতের বিক্রমাদিত্য বলা হয় কাকে এবং কেন 

  • অথবা, প্রাচীন ভারতের বিক্রমাদিত্য কার উপাধি ছিল এবং উপাধি দেওয়ার কারণ সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
  • অথবা, প্রাচীন ভারতের বিক্রমাদিত্য উপাধি লাভকারী কে ছিলেন? কেন তাকে এ উপাধি দেয়া হয় সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন ভারতের বিক্রমাদিত্য বলতে কাকে বোঝানো হয় এ বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা যায় ইতিহাসে। মূলত রাজ্য বিক্রমাদিত্যের কার্যক্রমের সাথে প্রাচীন ভারতের রাজা চন্দ্রগুপ্তের কিছুটা মিল পাওয়া যায় বলে ধারণা করা হয়। 

ভারতের গুপ্ত সম্রাটদের শাসনকাল ছিল এক গৌরবময় অধ্যায়। গুপ্ত সম্রাটদের উদার পৃষ্ঠপোষকতায় গুপ্তযুগে শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উৎকর্ষ সাধিত হয়। 

আবার সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রসারের কারণে অর্থনৈতিক মান উন্নত হয়। আর গুপ্ত বংশের রাজা দ্বিতীয় চন্দ্র গুপ্তের আমলে এ সকল কার্যক্রমের উন্নত হয়েছিল বলে তাকে বিক্রমাদিত্য বলা হতো।

প্রাচীন ভারতের বিক্রমাদিত্য : কেউ কেউ বলেছেন গুপ্ত বংশের রাজা সমুদ্রগুপ্তের উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তকে বিক্রমাদিত্য বলা হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ বলেছেন তিনি। 

সামান্য লোক কাহিনির বিক্রমাদিত্য। যারা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তকে বিক্রমাদিত্য বলে দাবি করেছেন তাদের যুক্তি হলো দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত 'বিক্রম' বিক্রমাঙ্ক উপাধির সাথে সাথে 'বিক্রমাদিত্য' উপাধি গ্রহণ করেন।

কিন্তু যারা এই দাবি অস্বীকার করেন। তাদের দাবি হলো লোককাহিনিতে যে বিক্রমাদিত্যের সম্পর্কে জানা যায় তার সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্যের সাথে দ্বিতীয় চন্দ্র গুপ্তের বৈশিষ্ট্যের মিল পাওয়া যায় না। 

তবে সব বৈশিষ্ট্যের মিল না থাকলেও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সাথে বিক্রমাদিত্যের কিছু মিল থাকায় বলা হয়ে থাকে যে, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত নিজে লোককাহিনির বিক্রমাদিত্য না হলেও হয়তো এ বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে জড়িত কিছু ঐতিহ্যের উৎস ছিলেন।

বিক্রমাদিত্য বলার কারণ : দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তকে প্রাচীন ভারতের বিক্রমাদিত্য বলার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। নিম্নে সে কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো :

প্রথমত, বিক্রমাদিত্য পাটলিপুত্র এবং উজ্জয়নী নগরীতে রাজত্ব করতেন বলে সংস্কৃত সাহিত্যে উল্লেখ আছে। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র এবং উজ্জয়িনী জয় করে তা গুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।

দ্বিতীয়ত, বিক্রমাদিত্য শকদের শত্রু ছিলেন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তও শকদের শত্রু ছিলেন এবং তিনি পশ্চিম ভারতের শক রাজাকে পরাজিত করে তা গুড় সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।

তৃতীয়ত, বিক্রমাদিত্য ৫৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বিক্রমসম্মত নামে একটি অব্দের প্রচলন করেন। অনেক ঐতিহাসিক দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

চতুর্থত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সাহিত্য সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক | ছিলেন। সম্ভবত কবি কালিদাস তার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে বিক্রমাদিত্যের সভায় নবরত্নের উপস্থিতি ছিল। কালিদাস নবরত্নের অন্যতম সদস্য ছিলেন।

পঞ্চমত, কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন যে, তিনি পিতা সমুদ্র গুপ্তের মতোই রাজ্য বিজেতা ছিলেন। যেহেতু সমুদ্র গুপ্তের শুরু করা রাজ্য বিজয়কে সমাপ্ত করেন পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত। 

একটি সুসংগঠিত রাজ্যের জন্য উপজাতি রাজ্য, সীমান্ত রাজ্য, এমনকি বিদেশি শক- কুশানদের রাজ্য অঙ্গীভূত করার দায়িত্ব তিনিই পালন করেছিলেন এবং এরপরেই তিনি বিক্রমাদিত্য উপাধি গ্রহণ করেন।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায় যে, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শাসনামলে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নকরণ ছিল রাজা বিক্রমাদিত্যের মতোই। 

তিনি পিতা সমুদ্রগুপ্তের রেখে যাওয়া বিশাল স্থিতিশীল সাম্রাজ্য মানুষের | সেবায় ও শিল্পসাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। 

তাই তার রাজ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। আর এ সকল কারণে তাকে বিক্রমাদিত্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার প্রচলিত মুদ্রা ও বিক্রমাদিত্য উপাধি পাওয়া যায় ৷ 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ