বরেন্দ্র বিদ্রোহের কারণ কি ছিল

বরেন্দ্র বিদ্রোহের কারণ কি ছিল
বরেন্দ্র বিদ্রোহের কারণ কি ছিল

বরেন্দ্র বিদ্রোহের কারণ কি ছিল

  • অথবা, উত্তর বাংলার সাম বিদ্রোহ এর কারণসমূহ লিখ ।

উত্তর : ভূমিকা : একাদশ শতাব্দীতে তৃতীয় বিগ্রহপাদের মৃত্যুর পর তার পুত্র দ্বিতীয় মহীপাল পাল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার রাজ্যে সিংহাসনে বসার পর উত্তর বাংলায় অর্থাৎ বরেন্দ্র অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দেয়। 

ইতিহাসে এ বিদ্রোহকে কৈবর্ত বিদ্রোহ বা সামন্ত বিদ্রোহ বা বরেন্দ্র বিদ্রোহ বলা হয়। দ্বিতীয় মহীপাল এ বিদ্রোহ দমন করতে গেলে বিদ্রোহীদের কাছে পরাজিত ও নিহত হয়।

→ উত্তর বাংলার সামস্ত বিদ্রোহের কারণসমূহ : দ্বিতীয় মহীপালের শাসনামলে সংঘটিত সামন্ত বিদ্রোহের কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. স্বেচ্ছাচারিতা : দ্বিতীয় মহীপাল স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন। তিনি তার রাজ্যের মন্ত্রীবর্গ ও প্রজাসাধারণের কোনো মতামতের গুরুত্ব দিতেন না। 

ফলে রাজ্যের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। রাজ্যে বিশৃঙ্খলার সুযোগে বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজ্যবর্গগণ দ্বিতীয় মহীপাল তথা পাল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

২. জন সাধারণের উপর অত্যাচার : দ্বিতীয় মহীপালকে ইতিহাসবিদগণ অত্যাচারী রাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি তারা রাজ্যের জনসাধারণের উপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার করতেন। 

তাঁর এই অত্যাচারমূলক আচরণের কারণে জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। যার ফলস্বরূপ উত্তর বাংলায় সামস্ত বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

৩. শাসনকার্যে ব্যর্থতা : দ্বিতীয় মহীপাল তাঁর সাম্রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনায় চরমভাবে ব্যর্থ হয়। তার প্রমাণ হলো তিনি তার ভ্রাতৃদ্বয় রামপাল ও শূরপালকে কারারুদ্ধ করে রাখে। 

এর ফলে উত্তর বাংলার সামন্তরা মহীপালের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা খুঁজে পায় এবং রাজ্যর বিরূদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ।

৪. কৈবর্তদের উপর নির্যাতন : পাল রাজারা কৈবর্তদের উপর অমানুষিক নির্যাতন করতো। কৈবর্তরা ছিল মৎসজীবী। তাদের জীবিকা ছিল বৌদ্ধধর্ম বিরোধী। তাই কৈবর্তদের নেতা দিব্য দেশে বিরাজমান অসন্তোষের সুযোগে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।

৫. ভ্রাতৃ বিরোধ : দ্বিতীয় মহীপাল পাল সাম্রাজ্যের সিংহাসন আরোহণ করার পর তিনি মনে করেন চারদিকে তাঁর বিরূদ্ধে ঘোর যড়যন্ত্র চলছে এবং এ ষড়যন্ত্রের নায়ক হচ্ছে তারই ভ্রাতা রামপাল। 

এ অহেতুক সন্দেহের ফলে তিনি তাঁর ভ্রাতৃদ্বয় রামপাল শূরপালকে কারারুদ্ধ করেন । যার যার ফলে প্রজাসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ জন্মে এবং উত্তর বাংলায় সামন্তরা মহীপালের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দ্বিতীয় মহীপাল শাসক হিসেবে ছিলেন অত্যাচারী, স্বৈরাচারী, শঠ, নিষ্ঠুর এবং দুর্নীতিপরায়ণ। 

এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক মজুমদার বলেন যে, "He was more sinned against than sinning". অর্থাৎ, “তিনি নিজে যত না অপরাধ করেছেন তারচেয়ে অন্যরা অপরাধ করেছে অনেক বেশি ।” 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ