ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ কে ছিলেন | ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ এর কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর

ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ কে ছিলেন । ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ এর কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ কে ছিলেন । ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ এর কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর

ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ কে ছিলেন । ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ এর কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর

  • অথবা, আলী মোবারক কে ছিলেন?

উত্তর : ভূমিকা : ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ বাংলার ইতিহাসে এক বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনিই প্রথম শাসক যিনি বাংলার ইতিহাসে দিল্লির কেন্দ্রীয় শাসনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পূর্ব বাংলায় রাজত্ব করেন। 

তিনি সর্বপ্রথম বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসনের সূচনা করেন এবং তা প্রায় ২০০ বছর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

→ ফখরুদ্দীন মোবারক শাহের পরিচিতি ও কৃতিত্ব : নিম্নে ফখরুদ্দীন মোবারক শাহের পরিচিতি ও কৃতিত্ব আলোচনা করা হলো :

১. পরিচয় : ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের প্রাথমিক জীবন বা পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। তিনি সোনারগাঁও এর শাসনকর্তা বাহরাম খানের সিলাহদার ছিলেন। সাধারণত তিনি ফখরা নামেই পরিচিত ছিলেন।

২. ক্ষমতালাভ : ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে বাহরাম খান মৃত্যুবরণ করলে, ফখরুদ্দিন বিদ্রোহী হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ উপাধি ধারণ করে সোনারগাঁও এর সিংহাসন অধিকার করেন। ফখরুদ্দিন কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণাই বাংলায় স্বাধীন সুলতানি যুগের সূচনা করে ।

৩. কদর খান ও অন্যান্যদের সাথে সংঘর্ষ : ফখরুদ্দিনের স্বাধীনতার খবর পেয়ে লখনৌতির শাসনকর্তা কদর খান, সাতগাঁওয়ের শাসনকর্তা ইজ্জউদ্দিন ইয়াহিয়া ও কারার শাসনকর্তা ফিরোজ খান সোনারগাঁও আক্রমণ করেন। 

তারা সোনারগাঁও আক্রমণ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ফখরুদ্দিন পালিয়ে দিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। 

ফখরুদ্দীনের হাতি অশ্ববাহিনী ও ধনসম্পদ বিজয়ীদের হস্তগত হয়। অতঃপর কদর খান সোনারগাঁও এ থেকে যান।

৪. কদর খানের পতন : ফখরুদ্দিন পালিয়ে গিয়ে নদী পার হয়ে নদীর পূর্বতীরে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। বর্ষাকালে তিনি পাল্টা আক্রমণ করেন। 

বর্ষাকালে কদর খানের অধিকাংশ ঘোড়া মারা যায়। এছাড়া তিনি যে বিপুলধনসম্পদ হস্তগত করেছিলেন তা সৈন্যদলের মধ্যে বণ্টন না করায় তাদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল। 

এ অসন্তোষের সুযোগে ফখরুদ্দিন কদর খানের সৈন্যদলে বিভেদ সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। ফলে যুদ্ধে কদর খান পরাজিত ও নিহত হন। ফখরুদ্দিন পুনরায় সোনারগাঁও এর সিংহাসনে আরোহণ করেন।

৫. লখনৌতিতে অভিযান : সোনারগাঁও -এ কনর খানের মৃত্যুর পর লখনৌতিতে তাঁর সৈন্যধ্যক্ষ (আরিজ) আলী মুবারক- সুলতান আলাউদ্দিন আলী শাহ উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন।

ফখরুদ্দিন লখনৌতি অধিকার করার উদ্দেশ্য মুখলিস নামক তার এক সেনাপতিকে লখনৌতি আক্রমণ করতে পাঠান। 

কিন্তু আলী মোবারক তাকে পরাজিত করেন। অতঃপর প্রায় প্রতি বছরই লখনৌতি ও সোনারগাঁও এর মধ্যে যুদ্ধ লেগেই ছিল ।

৬. চট্টগ্রাম বিজয় : ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ তাঁর রাজ্যসীমা দক্ষিণ-পূর্বদিকে বর্ধিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর সময়েই সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম অঞ্চল মুঘলমানদের শাসনাধীনে আসে। 

ঐতিহাসিক শিহাবউদ্দিন তালিম তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, সুদূর অতীতে ফখরুদ্দিন নামে বাংলার এক সুলতান চট্টগ্রাম সম্পূর্ণরূপে জয় করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ফখরুদ্দিন চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি রাজপথ তৈরি করেন।

৭. ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের কৃতিত্ব : ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ ছিলেন বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান। তাঁর ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সোনারগাঁও এর ক্ষমতা দখল করার পর বাংলায় স্বাধীন সুলতানি যুগের সূচনা হয় এবং এ সুলতানি আমল দুইশত বছর স্থায়ী হয়। 

ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ একজন বিচক্ষণ সেনাপতি ও যোগ্য শাসক ছিলেন । তিনি নিজ নামে খোতবা পাঠ ও মুদ্রা চালু প্রচলন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় সোনারগাঁওয়ে যথেষ্ট উন্নতি হয়। 

তিনি চট্টগ্রামে ও পূর্ব-বাংলার অন্যান্য শহরে মসজিদ, ইমারত ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। ফলে পূর্ববঙ্গ একটি শক্তিশালী জনপদে পরিণত হয়। 

ইবনে বতুতার বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ ফকির দরবেশদেরকে অত্যন্ত ভক্তি করতেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ফখরুদ্দিন কর্তৃক সোনারগাঁও -এর ক্ষমতা অধিকার বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসনের সূচনা করে। 

চট্টগ্রাম জয় তার শাসনামলের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বাংলার স্বাধীন সালতানাত প্রতিষ্ঠায় ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের অবদান অপরিসীম । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ