হর্ষবর্ধনের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো

হর্ষবর্ধনের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো
হর্ষবর্ধনের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো

হর্ষবর্ধনের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো

  • অথবা, হর্ষবর্ধনের শাসনব্যবস্থা বিস্তারিত আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : থানেশ্বরের সিংহাসনের অন্যতম প্রভাবশালী শাসক হচ্ছেন হর্ষবর্ধন। সমসাময়িককালের ইতিহাসে যে ক'জন প্রভাবশালী ও প্রতিভাবান শাসকের নাম পাওয়া যায়। 

তার মধ্যে হর্ষবর্ধন ছিলেন অন্যতম একজন শাসক। তিনি তার পূর্ববর্তী শাসক রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর থানেশ্বরের সিংহাসনে বসেন। 

তিনি শুধুমাত্র একজন শ্রেষ্ঠ শাসকই ছিলেন না সাথে সাথে তিনি ছিলেন একজন যোগ্য প্রশাসকও। তার পরিচয় ও শাসনব্যবস্থা বাংলার ইতিহাসে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ।

হর্ষবর্ধনের পরিচয় : হর্ষবর্ধন সম্পর্কে জানার জন্য আমরা যে সমস্ত উৎস পাই তার মধ্যে দুটি উৎস গুরুত্বপূর্ণ। একটি হচ্ছে তার সভাকবি বানভট্ট রচিত 'হর্ষচরিত' এবং অপরটি হচ্ছে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর বর্ণনা। 

হর্ষবর্ধন ছিলেন পাঞ্জাবের থানেশ্বরের পুষ্যভূতিরাজা প্রভাকরবর্ধনের পুত্র। প্রভাকরবর্ধনের দুই পুত্র হচ্ছেন রাজ্যবর্ধন ও হর্ষবর্ধন এবং কন্যা ছিল রাজ্যশ্রী সুতরাং রাজ্যশ্রী হচ্ছে হর্ষবর্ধনের ভগ্নী রাজ্যবর্ধন হচ্ছে হর্ষবর্ধনের বড় ভাই। 

রাজ্য বর্ধনের মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন থানেশ্বরের পুষ্যভূতি রাজবংশের রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনে বসেই তিনি রাজ্যের শাসন শৃঙ্খলা সুদৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনে তার শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন।

→ হর্ষবর্ধনের শাসনব্যবস্থা : সিংহাসনে আরোহণের পর হর্ষবর্ধন তার সাম্রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলার দিকে মনোযোগ দেন। নিচে তাঁর প্রশাসনিক কার্যক্রম তথা শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

১. রাজ্য পরিদর্শন : হর্ষবর্ধন ছিলেন তার রাজত্বের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। হর্ষবর্ধন শাসন কার্যের কোনো দায়িত্ব রাজকর্মচারীদের উপর অর্পণ করে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতেন না। 

তিনি রাজকার্য তারাই করতেন। তিনি রাজ্য পরিদর্শনে বের হতেন। শুধু শহর নয় তিনি আমও রাজ্য পরিদর্শনে বের হতেন। নিনকে তিনি তিনভাগে ভাগ করে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।

২. মন্ত্রিপরিষদ : মন্ত্রিপরিষদ রাজ্যকে শাসনকার্যে সাহায্য করতেন। রাজ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ বা অন্য কোনো সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে মন্ত্রিপরিষদ রাজাকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও সাহায্য করতো রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর এ মন্ত্রী আমত্যবর্ণরাই হর্ষবর্ধনকে সিংহাসনে বসতে অনুরোধ করেছিল।

৩. অমত্যগণ : বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায় যে, বহু উচ্চপদস্থ আমত্যবর্গ হর্ষবর্ধনকে রাজকার্যে সাহায্য করতেন। কুমারামাতারা ছিলেন শিক্ষানবিশ মন্ত্রী ও কর্মচারী। 

এরা সম্রাটের খুবই বিশ্বাসভাজন ছিলেন। এছাড়াও ছিল উপারিক, মহাসামন্ত, বিষয়পত্তি প্রভৃতি কর্মচারী। 

বিষয়পতিরা ছিলেন তিলার অধিকর্তা। মহাসামন্ত ছিলেন সামস্ত কর্মচারী। পুষ্টকৃত কনিক প্রভৃতি কর্মচারীও ছিল।

৪. রাজস্বনীতি : হর্ষবর্ধন সাম্রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করেন। প্রদেশগুলোর নির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া যায় নি। প্রদেশ ভূক্তিগুলোকে বিষয় বা জেলায় ভাগ করা যায়। 

কতকগুলো গ্রাম নিয়ে বিষয় গঠিত হতো। প্রাদেশিক শাসকর্তার উপাধি ছিল লোকপাল। হর্ষের আমলে প্রধান রাজস্ব ভূমি থেকে সংগৃহীত হতো। 

এছাড়াও বাণিজ্য ও খনি শুল্কও ছিল সরকারি আয়ের অন্যতম উৎস। রাজস্ব ছিল তিন প্রকারের যথা- ভাগ, হিরণ্য ও বলি । ভূমিকরকে ভাগ বলা হতো ফসলের ছিল ভূমিকর।

৫. সামরিক সংগঠন : হর্ষবর্ধনের সামরিক বাহিনী সম্পর্কে জানা যায় যে, পদাতিক, হস্তী ও অশ্ববাহিনী নিয়ে হর্ষের বাহিনী গঠিত ছিল। হিউয়েন সাং এর মতে, ৬৯ লক্ষ হাতী এবং এক লক্ষ অ্য নিয়ে তার বাহিনী গঠিত হয়। 

সম্ভবত সংখ্যাটি অতিরঞ্জিত। তিনি তাঁর বাহিনীর অশ্বগুলো সিন্ধু কম্বোজ পারস্য থেকে সংগ্রহ করতেন। বাছাই সেনাবাহিনীর মধ্য থেকে রাজকীয় সেনাবাহিনী গঠন করা হতো। 

সেনাবাহিনীও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা উত্তরাধিকার বলে ক্ষমতা অর্জন করতো এবং ভরণ- পোষণের জন্য তাদের ভূমি বন্দোবস্ত করা হতো।

৬. বিচার ব্যবস্থা : হর্ষবর্ধন বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সর্বদাই ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। সাম্রাজ্যের লোকজন বা এ ধারা যাতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে তিনি তার দিকে নজর । 

ফৌজদারি আইন ছিল বেশ কঠোর। অপরাধীদের কঠোর সাজা দেওয়া হতো। অঙ্গব্যবচ্ছেদ, জরিমানা এবং প্রয়োজন হলে প্রাণদণ্ড দেওয়া হতো। 

অনেক সময় অপরাধীকে ধরার জন্য দৈব পরীক্ষা নেওয়া হতো। গুপ্ত যুগ অপেক্ষা ফৌজদারি আইনের কঠোরতা হর্ষবর্ধনের যুগে দেখা যায় ।

৭. হর্ষবর্ধনের শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি : হর্ষবর্ধনের শাসনব্যবস্থাকে একটি উদারনৈতিক স্বৈরতন্ত্র বলা যেতে পারে। এই শাসনব্যবস্থার সাফল্য হর্ষবর্ধনের ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতার উপরই বেশি নির্ভর করতো।

কিন্তু এ বিশাল সাম্রাজ্য তার একার পক্ষে শাসন করা সম্ভব ছিল না। ফলে কর্মচারীদের যোগ্যতার উপর তার শাসনব্যবস্থার সুফল নির্ভর করতো। 

তবে তার রাজ্যের সাধারণ প্রজারা ছিল অনেকটা শান্তিপ্রিয় যা হর্ষবর্ধনের এ শাসনব্যবস্থার সাফল্যে কাজ করেছিল।

উপসংহার : পরিশেষে এ কথা বলা যায় যে, হর্ষবর্ধন ছিলেন একজন প্রজারঞ্জক শাসক। তিনি প্রজাদের কল্যাণের নিমিত্তে তার রাজ্যে শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ফলে দেখা যায় যে হর্ষের বিরাট সাম্রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। 

থানেশ্বরের হর্ষবর্ধনের মতো যোগ্যতম শাসক ছিল সময়ের দাবি কারণ হর্ষবর্ধন তার কূটনৈতিক মেধা দ্বারা থানেশ্বরকে সমসাময়িককালের উৎকর্ষে নিয়ে যান তাঁর শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ