শাসক হিসেবে হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো
শাসক হিসেবে হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো |
শাসক হিসেবে হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো
- অথবা, শাসক হিসেবে হর্ষবর্ধনের মহত্ত্ব আলোকপাত কর।
- অথবা, শাসক হিসেবে হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব বর্ণনা কর ।
- অথবা, শাসক হিসেবে হর্ষবর্ধনের অবদান আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাজ্যবধনের মৃত্যুর পর উত্তর ভারতের থানেশ্বরের পুষ্যভূতি রাজবংশের সিংহাসনে বসেন তাঁর ভ্রাতা হর্ষবর্ধন।
হর্ষবর্ধন সিংহাসনে বসার পর সম্রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থানেশ্বর রাজ্যকে নিরাপত্তা বিধান করেন। তিনি শাসক হিসেবে যেমন যোগ্য ছিলেন তেমনি ছিলেন যোগ্য প্রশাসক ।
→ হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব : নিচে হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. কনৌজ-থানেশ্বর জোটগঠন : শশাঙ্ক ছিলেন হর্ষবর্ধনের অন্যতম প্রধান শত্রু। শশাঙ্কের বিরুদ্ধে হর্ষবর্ধন কামরূপ রাজ ভাস্কর বর্মণের সাথে সন্ধি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে হর্ষবর্ধন উক্ত শত্রুজোটকে হারিয়ে কনৌজ তাঁর অধিকারভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।
২. শ্রী মহাসামন্ত শশাঙ্কের বিরুদ্ধে অভিযান : সাম্রাজ্য বিস্তারের "জন্য হর্ষবর্ধন শশাঙ্কের বিরুদ্ধে এক সুবিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে। যুদ্ধ যাত্রা করেন।
ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, হর্ষবর্ধনের আগমনের সংবাদ পেয়ে শশাঙ্ক গ্রহবর্মনের ছোট ভাই শূরসেনকে সিংহাসনে বসিয়ে কনৌজ ত্যাগ করে।
৩. শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন : রণকুশলী ও মহাবীর ছিলেন হর্ষবর্ধন। সাম্রাজ্য বিস্তার ও নিজেকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন।
হিউয়েন সাং-এর মতে, হর্ষবর্ধনের সেনাবাহিনীতে প্রথমে ৫,০০০ যুদ্ধ হস্তী ২,০০০ অশ্ব ৫০,০০০ পদাতিক বাহিনী ছিল ।
৪. ধর্মসহিষ্ণুতা : হর্ষবর্ধনের পূর্বপুরুষরা ছিলেন সূর্যের উপাসক। প্রথম জীবনে শৈবধর্মে বিশ্বাসী হলেও পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি কোনো সময়ই অন্যকোনো ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করেননি। সকল ধর্মের হর্ষবর্ধন এর সমান সহানুভূতি ছিল।
৫. ধর্মীয় পৃষ্ঠপোষকতা : হর্ষবর্ধন ছিলেন একজন ধর্মপরায়ণ শাসক । তিনি বৌদ্ধধর্মের অনুসারী ছিলেন তিনি বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেন তবে, অন্যান্য ধর্মের প্রতিও হর্ষবর্ধনের উদার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। হিউয়েন সাং-এর সম্মানে তিনি কনৌজে বৌদ্ধ সম্মেলনের ব্যবস্থা করেন।
৬. শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান : হর্ষবর্ধন শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখেন। রাষ্ট্রীয় অর্থের এক-চতুর্থাংশ তিনি শিক্ষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে ব্যয় করেন।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি নিয়মিত অর্থ সাহায্য করতেন। হর্ষরচিত গ্রন্থের লেখক বাণভট্ট তার সভাসদ ছিলেন।
উপসংহার : পরিশেষে একথা বলা যায় যে, হর্ষবর্ধন যখন থানেশ্বরের সিংহাসনে বসেন তারপর থেকে তিনি সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি এবং সাথে সাথে গৌরব বৃদ্ধি করতে থাকেন। তিনি থানেশ্বর সিংহাসনের পূর্ণ মর্যদা রেখেছিলেন যা রাজ্যবর্ধন পারেনি।
সিংহাসনে আরোহণের পর থেকেই বহিঃশত্রুর হাত থেকে তিনি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান করেন এবং সাম্রাজ্যর বিস্তৃতি সাধন করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রাখেন। তাই হর্ষবর্ধনের শাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।