লক্ষ্মণ সেনের শাসনকাল আলোচনা কর

লক্ষ্মণ সেনের শাসনকাল আলোচনা কর
লক্ষ্মণ সেনের শাসনকাল আলোচনা কর

লক্ষ্মণ সেনের শাসনকাল আলোচনা কর

  • অথবা, লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকাল বর্ণনা কর।
  • অথবা, লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকাল সম্পর্কে যা জান লেখ। 

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে লক্ষ্মণ সেন এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। যৌবনে তিনি তার পিতার সঙ্গে রাজ্য পরিচালনায় যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন। 

পিতার মৃত্যুর পর তিনি বাংলার সেন সিংহাসনে আরোহণ করে পিতৃরাজ্য রক্ষাসহ বহু রাজ্য জয়ে যে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে তা তাকে বাংলার ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।

লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকাল : নিম্নে লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১. রাজ্যবিস্তার : লক্ষ্মণ সেন তার পিতার মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করে বিভিন্ন রাজ্য জয় করে সেন সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। 

তিনি যেসব রাজ্য জয় করেছিলেন তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রাজ্য হলো- গৌড়, কলিঙ্গ, কামরূপ বাগলানা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসব রাজ্য তিনি জয় করে সামরিক দক্ষতার পরিচয় দেন।

২. ধর্মপরায়ণ হিসেবে লক্ষ্মণ সেন : লক্ষ্মণ সেন ছিলেন হিন্দুধর্মের পৃষ্ঠপোষক। তার রাজত্বকালে হিন্দুধর্ম ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে । তিনি নিয়মিত ধর্মচর্চা ও শাস্ত্র পাঠ করতেন। এছাড়াও তিনি অনেক মন্দির নির্মাণ করেন।

৩. কবি পণ্ডিত হিসেবে লক্ষ্মণ সেন : লক্ষ্মণ সেন একজন কবি ও সুপণ্ডিত ছিলেন। তার রচিত কয়েকটি শ্লোক পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া তিনি তার পিতার অসমাপ্ত গ্রন্থ সমাপ্ত করেন। তাছাড়াও তার রাজসভা অলংকৃত ছিল জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিতদের দ্বারা।

৪. সাহিত্য শিল্প চর্চা : লক্ষ্মণ সেনের শাসনামলে সাহিত্য ও শিল্পকলার চর্চাতেও সেন বংশ খ্যাতি লাভ করেছিল। মিনহাজউদ্দিন সিরাজ তাকে হিন্দুস্থানের রায়গণের বংশানুক্রমিক খলিফা বলে অভিহিত করেছেন।

৫. মুসলিম আক্রমণ : লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকালের উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হচ্ছে মুসলিম আক্রমণ। বখতিয়ার খলজি ১২০৩ মতান্তরে ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে নদীয়া আক্রমণ করে। 

কিন্তু হঠাৎ করে আক্রমণ করার কারণে তিনি কোনো পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ না করতে পারায় উপায় না দেখে নিজ প্রাণ রক্ষার্থে পালিয়ে যান। 

ফলে বাংলা হতে চিরতরে সেন শাসনের অবসান হয়। এ ব্যর্থতা লক্ষ্মণ সেনের জীবনের সবচেয়ে বড় একটি ব্যর্থতা, যার ফলে তিনি বিভিন্নভাবে ইতিহাসে সমালোচিত হয়েছেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লক্ষ্মণ সেন তার পূর্বপুরুষদের ন্যায় একজন প্রতিভাবান পুরুষ ছিলেন। উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি যে রাজ্য লাভ করেছিলেন তা রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত মুসলিম বীর বখতিয়ার খলজির আক্রমণের কাছে পরাজিত হন। 

তিনি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলেও তাঁর বিভিন্ন ধরনের কৃতিত্বমূলক কর্মের জন্য তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ