পাল শাসন আমলে বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থার বর্ণনা দাও

পাল শাসন আমলে বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থার বর্ণনা দাও
পাল শাসন আমলে বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থার বর্ণনা দাও

পাল শাসন আমলে বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থার বর্ণনা দাও

  • অথবা, পাল শাসন আমলে বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থা কেমন

উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে পালনের দীর্ঘ ৪০০ বছরের শাসনকাল ইতিহাসকে করেছে গৌরবান্বিত সে সময় বাংলা ছিল সুখে শান্তিতে পরিপূর্ণ এবং আর্থসামাজিক অবস্থায় বাংলা অনেক এগিয়েছিল। কৃষি ও শিল্পের ব্যাপক বিস্তার নে সময় লক্ষ্য করা যায়।

পাল শাসন আমলে বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থা : পাল শাসন আমলে বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থা নিম্নে আলোকপাত করা হলো:

পাল শাসন আমলে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা : নিম্নে পাল শাসন আমলে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা আলোচনা করা হলো :

১. কৃষি : পাল আমলে কৃষিই ছিল তাদের প্রধান জীবিকা। সে সময় প্রচুর পরিমাণে চাল, আম, নারকেল, আম উৎপন্ন হতো। সে সময় বাংলা গম চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। 

বিভিন্ন শিলালিপি থেকে জানা যায় বাংলার মাটিতে এসব কমল উৎপন্ন হতো, যার দরুন বাংলার অর্থনীতি সচল ছিল।

২. শিল্প : সে সময় বাংলা শিল্পসমৃদ্ধ ছিল। যেসব শিল্প হতে প্রচুর আয় ও সুনাম অর্জন করে তাহলো মিহি সুতার বস্তু যা "দুল" নামে পরিচিত ছিল। তাছাড়া চিনিশিল্প, লবণ শিল্প, জাহাজ শিল্প | প্রভৃতি শিল্পে বাংলা সমৃদ্ধ ছিল, যার অনেক প্রমাণ রয়েছে।

৩. গৃহপালিত জন্তু : যেসব পশু মূলত গৃহে পালন করা যায় এবং রাক্ষুসে নয় যেসব পশু মূলত গৃহপালিত, আর প্রাচীন বাংলার ঘরে ঘরে গৃহপালিত পশু পালন করা হতো যেমন- গাভী, মেষ, ছাগল ও অ্য। 

এসব গৃহপালিত পশু দ্বারা যেমন চাষাবাদ করে ফসল ফলানো যেত আবার মাংস দুধ পাওয়া যেত। ফলে মানুষের আয় হতো।

৪. খনিজ দ্রব্য : পাল যুগে বাংলায় প্রচুর খনিজ দ্রব্য পাওয়া যেত, যার দরুন বাংলার অর্থনীতি অনেকটা ভালো ছিল। প্রাচীন বাংলায় পাওয়া যেত সোনা, মুক্তা, লোহা, তামা, লবণের খনি। 

আর খনি থেকে এসব মূল্যবান জিনিস পাওয়া যেত ভারো পাওয়া যেত তামার খনি, পিতলের খনি, যা অর্থনৈতিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছিল।

৫. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য : নদীমাতৃক দেশ হিসেবে নৌবাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার হয়েছিল। নৌকা ছিল প্রধান যাতায়াত মাধ্যম। নদীপথে এক স্থান হতে অন্য স্থানে পণ্য পরিবহণ করা যেত বলে বাণিজ্য পড়ে উঠে। ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অর্জিত হয়।

৬. বৈদেশিক বাণিজ্য : পাল যুগে বাণিজ্য শুধুমাত্র দেশেই হতো না, বহির্বিশ্বের সাথেও পাল যুগের বাণিজ্য পরিচালিত হতো। যেমন- তিব্বত, নেপাল, মধ্য এশিয়া, চীনসহ শ্ৰেষ্ঠ আরব দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য পরিচালিত হতো। তবে রাজনৈতিক সংকটে তা ক্রমেই কমতে থাকে।

৭. রেশম শিল্প : পাল যুগে রেশম চাষ হতো। আর রেশমের সুতা দ্বারা তৈরি হতো রেশমের বস্ত্র, যা দেশি বিদেশি উভয় জায়গায় প্রচুর চাহিদা ছিল। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব ছিল।

→ পাল আমলের সামাজিক অবস্থা : নিয়ে পাল আমলের সামাজিক অবস্থার বর্ণনা দেওয়া হলো :

১. বাংলার জাতিসমূহ : পাল আমলে বাংলার অনেকগুলোর জাতির পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন- নিষাদ, কিরাত, শামিল, পুণ্ড। তাদের জীবন মান, ধর্ম, দর্শন, আচরণ চিন্তা করে বুঝা যায় তারা উন্নত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল।

২. জনগোষ্ঠীর শ্রেণিবিভাগ : প্রাচীন যুগে বাংলার জনগোষ্ঠি ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র- এ চার শ্রেণিতে ভাগ ছিল। আর্যদের পরই মূলত এ জাতিভেদ দেখা যায়। 

সামাজিক মর্যাদায় ব্রাহ্মণরা ছিল সবার উপরে আবার সংকর জাতিগুলো- উত্তম, মধ্যম, ও অধম- এ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল।

৩. নারীদের অবস্থা : পাল যুগে নারীদের অবস্থা ছিল খুবই উন্নতমানের। নারীরা শান্তস্বভাবের মৃদুভাষী ছিল। পুরুষেরা একটি বিবাহ করতে পারত এবং সে সময় বীতকের প্রচলন ছিল। নারীরা প্রভাবশালী ছিল।

. শিক্ষাব্যবস্থা : পালরাজারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন এবং সে সময় বিহার বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় ভাষা ও ধর্ম শিক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয়। পাল রাজারা নালন্দা বিহারের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

৫. পোশাক-পরিচ্ছদ : বর্তমান সময়ের মত পাল যুগে পোশাকের কেনো বিলসিতা ছিল না। মহিলারা শাড়ি পরতো। আবার দেখা যেত মহিলারা অতিরিক্ত পোশাক হিসেবে ওড়না পরতো। পুরুষেরা ধুতি, চাদর ও জুতা পরিধান করতো।

৬. অলংকার : পাল যুগে নারীরা অলংকার খুব পছন্দ, করতো। বাহিরে বের হতে অলংকার গায়ে জড়িয়ে বের হতো এমনকি তারা ঘরে অলংকার পরে বসে থাকত। তারা মণি-মুক্তা স্বর্ণের অলংকার পরতো। তবে নারীদের পাশাপাশি নাকি পুরুষেরাও অলংকার পরতো।

৭. খাদ্যদ্রব্য : বর্তমান সময়ের মতোই পাল যুগে মানুষ ভাত, মাংস, ডাল, মাছ, সবজি, দুধ, মাখন, ঘি খেত। সে সময় পিঠার কথাও জানা যায়। পাঠা ও হরিণের মাংস তারা খেত। তারা সুরা পানে অবস্থা ছিল। তবে ব্রাহ্মণরা সুরাপান করতো না ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পাল যুগের আর্থসামাজিক অবস্থা ছিল খুবই উৎকৃষ্ট। কিন্তু পাল সংস্কৃতি বর্তমান থেকে অনেক ব্যতিক্রম নয়। তবে পাল সমাজ ব্যবস্থা ছিল উন্নত ও সমৃদ্ধ- এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ