বাংলায় পালবংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর

বাংলায় পালবংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর
বাংলায় পালবংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর

বাংলায় পালবংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর

  • অথবা, বাংলার পালবংশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : যখন শশাঙ্কের মৃত্যু হয় তখন শাসন ভারের অভাবে বাংলায় সর্বত্র অশান্তি বিরাজ করে। দীর্ঘ দিন এ অবস্থা চলতে থাকে এমনকি বৈদেশিক শক্তিও বাংলা আক্রমণ করে এমন সময় জনগণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে শাসন ক্ষমতায় বসায় গোপালকে। এরপর থেকেই বাংলার রাজ ক্ষমতায় গোপালের আবির্ভাব।

পালবংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি : কোনো রাজবংশ বা কোনো নতুন শাসক এমনি এমনি ক্ষমতায় যায় না। যেসব কারণে বাংলায় পালবংশের প্রতিষ্ঠা নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-

১. সাম্রাজ্যের ভিতর দ্বন্দ্ব : শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলার রাজ ক্ষমতায় চরম হতাশা দেখা দেয়। যোগ্য শাসকের অভাব রাজনৈতিকভাবে সর্বত্র বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। 

এসব দ্বন্দ্ব অবসানের জন্যই বাংলার একটা শৃঙ্খল রাজবংশের প্রয়োজনীয়তা লক্ষ করা যায় এবং যার জন্য পালবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

২. মিত্রশালীদের রাজ্য অধিগ্রহণ : যখন শশাঙ্ক মারা যায় তখন শশাঙ্কের যারা বন্ধু ছিল যাদের কাছ থেকে শশাঙ্ক রাজ্য বিষয় করে। তারা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর তাদের রাজ্য ফিরিয়ে নিতে চায় এতে শশাঙ্কের রাজ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছিল। 

এ সময় জনগণ এ সমস্যা সমাধানের জন্য গোপালকে ক্ষমতায় বসায় এবং এ সমস্যার সমাধান হয়।

৩. শান্তি প্রতিষ্ঠা : রাজ্যে যখন চরম দ্বন্দ্ব সংঘাত চলতে থাকে। সাধারণ মানুষ যখন সবলদের দ্বারা অত্যাচারিত হতে থাকে। 

এমন সময় বাংলায় যাতে শশাঙ্কের যুগের মতো শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। তার জন্য একটা সুগঠিত রাজবংশ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলে, যার জন্যই পালবংশের প্রতিষ্ঠা।

৪. বহিঃশত্রুর আক্রমণ : বাংলায় শুধু অন্তদ্বন্দ্বই লেগে থাকে না বহিঃশত্রু কর্তৃক বাংলা বারবার আক্রান্ত হতে থাকে। বাংলার সবাই তখন বিদেশিদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে থাকে।

৭২৫-৩৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কনৌজের যশোবর্মা পশ্চিম বাংলা ও পূর্ব বাংলার কিছু অংশ জয় করে নেয়। এসব দখলদার থেকে মুক্তি পেতেই বাংলায় পালবংশের প্রতিষ্ঠা।

৫. ললিতাদিত্যের আক্রমণ : যশোবর্মা যখন বাংলা আক্রমণ করে দখল করে তখন তার গৌড় ও বঙ্গের উপর অধিকার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। 

অল্প কিছুদিন পরেই যশোবর্মাকে পরাস্থ করে কাশ্মীরের ললিতাদিত্য এবং তিনি গৌড়ের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। সে জন্যই বাংলায় পালবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

৬. তিব্বতীয়দের আক্রমণ : বাংলায় তিব্বতীয়রা আক্রমণ করে বাংলা দখল করতে চেষ্টা চালায়। তিব্বতীয়দের হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করতে পালবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

৭. হর্ষের আক্রমণ : কামরূপ রাজ শ্রীহর্ষ বাংলা আক্রমণ করেছিলেন। ভিন্ন তথ্য থেকে তার প্রমাণ মেলে। হর্ষের আক্রমণের পর যাতে পরবর্তীতে এমন আক্রমণ আর না হয় তার জন্য পালবংশের প্রতিষ্ঠা

৮. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : যখন শশাঙ্ক মারা যায় তখন বাংলার সর্বত্র রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকে। ফলে বহিঃশত্রু আরো বাড়তে থাকে। 

বাংলায় রাজনৈতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এমন সময় বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয় পালবংশ। যে বংশ বাংলায় এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটায় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলায় পালবংশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট সহজ কথায় বলা যায় তখন বাংলায় চরম বিশৃঙ্খলা চলতে থাকে। 

ন্যায়বিচার যখন নাই বললেই চলে, শান্তি খুঁজে পাওয়া তখন দায় এমন সময় বাংলায় একটি যোগ্য শাসন বংশ প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়ে যার প্রেক্ষিতেই বাংলার পালবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ