প্রথম মহীপালের পূর্বে পাল সাম্রাজ্যের বিপর্যয় সম্বন্ধে যা জান লিখ

প্রথম মহীপালের পূর্বে পাল সাম্রাজ্যের বিপর্যয় সম্বন্ধে যা জান লিখ
প্রথম মহীপালের পূর্বে পাল সাম্রাজ্যের বিপর্যয় সম্বন্ধে যা জান লিখ

প্রথম মহীপালের পূর্বে পাল সাম্রাজ্যের বিপর্যয় সম্বন্ধে যা জান লিখ

উত্তর : ভূমিকা : প্রথম মহীপালের রাজত্বকালের পূর্বে পাল সাম্রাজ্যে বিপর্যয় নেমে আসে। রাজ্যসীমা সংকুচিত হয়। ধর্মপালের আমলে পাল সাম্রজ্য সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দেবপালের আমলে পল সাম্রাজ্য ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করে। 

দেবপালের সময় পালবংশের যে গৌরব ছিল তার পরবর্তী রাজাগণ সে গৌরব আর ধরে রাখতে পারেনি। প্রথম মহীপাল পাল সাম্রাজ্যর অগ্রগতিতে সহয়তা করে এবং নিঃসন্দেহে বলা যায় প্রথম মহীপালের পূর্বে পাল সাম্রাজ্য এক মহাবিপর্যয় দেখা দিয়েছিল ।

প্রথম মহীপালের পূর্বে পাল সাম্রাজ্যর বিপর্যয় : পাল সাম্রাজ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :

১. রাষ্ট্রকূটরাজের আক্রমণ : বৎসরাজ কর্তৃক মধ্যদেশ অধিকার করার আগেই দাক্ষিণাত্য রাষ্ট্রকূটরাজা ধ্রুবধারাবর্ষ আযাবর্তে বিজয়াভিযান প্রেরণ করেন। 

ধ্রুব প্রথমে ধর্মপালকে পরাজিত করে। ধর্মপালের এতো শক্তি থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রকূটরাজার হাতে পরাজিত হয়। রাষ্ট্রকূটরাজা বিজয় সংরক্ষণ না করেই তার স্বীয় রাজ্যে ফিরে যান। 

ধর্মপাল সেখানে তার রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনা অব্যবহৃত রাখে ঠিক, কিন্তু পাল সাম্রাজ্য সে সময় বিপদের মধ্যে ছিল এবং পাল সাম্রাজ্যর শক্তি যে কম তা অনুমেয় থেকে যায়।

২. প্রতীহার রাজাদের আক্রমণ : প্রতিহার রাজারা পালবংশের শত্রু ছিল। তারা পাল রাজ বংশকে পরাজিত করার জন্য ভিন্ন ছক আঁকে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সাথে মিত্রতার মাধ্যমে প্রতিহার রাজারা পালবংশকে পরাজিত করতে চাই এবং ভিন্ন সময় ভিন্ন সুযোগ প্রতিহার রাজারা নিতে চায়। 

যখন পাল রাজা নারায়ণপাল তার শক্তির পরিচয়ে ব্যর্থ এমন সময় প্রতিহার রাজারা বাংলা আক্রমণ করে পালবংশকে এগিয়ে যেতে বাধা দেয়। 

৮৮৫-৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতীহার রাজা মহেন্দ্রপাল মগধ ও উত্তর বাংলার আধিপত্য বিস্তার করেছিল বা পালবংশের জন্য মহাবিপদ সংকেত ছিল বলা যায়। পাল সাম্রাজ্য সে সময় বিশাল হুমকির মুখে পড়ে যায

৩. চন্দের ও কালচুরি বংশের আক্রমণ : পাল সম্রাট নারায়ণপালের পুত্র রাজ্যপাল যখন পাল সাম্রাজ্যর ক্ষমতায় আসে তখন চন্দেল ও কালচুরি বংশের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। 

রাজ্যপাল সে দ্বন্দ্ব সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। ভিন্ন উৎস থেকে জানা যায় চন্দের ও কলচুরি বংশ নাকি পাল সাম্রাজ্যর একটা অংশ দখল করে ছিল। 

যদিও তা বেশি দিন দখলে রাখতে পারেনি তার পরও বলা যায় এটা পাল সাম্রাজ্যর শক্তির যে ভাঙন দেখা দিয়েছে বা প্রমাণ করে এবং পাল সাম্রাজ্য যে সে সময় বিপদে ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কম্বোজ পালবংশের উত্থান : দ্বিতীয় বিগ্রহপালের রাজত্বের প্রথম দিকে পাল সাম্রাজ্য চারদিকে থেকে বিপদের মুখোমুখী হয়। এক বৈদেশিক শক্তির আক্রমণ। 

দুই দেশীয় শক্তির আক্রমণ। সব পাশ কাটিয়ে না উঠতে পারায় সে সময় কম্বোজ পালবংশ নামের একটা বংশ তাকে ক্ষমতা প্রতিপত্তি পালদের উপর দেখাতে চায়। 

তা বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা জানতে পারি। তবে পালবংশের দুর্বলতার কারণেই কম্বোজ পালবংশের উত্থান হয়। কম্বোজরা বাংলার বিভিন্ন অংশ দখল করে এবং সেখানে তারা তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

ধারণা করা হয় পালদের দুর্বলতার সুযোগে পাল সাম্রাজ্যর কোনো রাজ কর্মচারী হয়ত কম্বোজ পাল রাজ বংশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। তবে এ সময় এ বংশ পালবংশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায় ৷

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গৌরবে গৌরবান্বিত পালবংশের প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল ব্যাপক কিন্তু অযোগ্য পাল রাজাদের হাত ধরেই এ বংশের এসব অশনি সংকেত দেখা দেয়। 

বংশকে পতনের দিকে ঠেলে দিতে পালদের অযোগ্য অদক্ষ রাজারাই দায়ী। না হলে পালবংশকে এত সমস্যায় পড়তে হতো না এটা নিশ্চিত বলা যায়। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ