দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা কর

দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা কর
দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা কর

দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা কর

  • অথবা, দ্বিতীয় মহীপাল কে ছিলেন? তার রাজত্বকাল কেমন ছিল?

উত্তর : ভূমিকা : দীর্ঘদিন শাসিত পালবংশের ইতিহাসে দ্বিতীয় মহীপালের শাসন এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দ্বিতীয় মহীপাল এমন এক সময় পালবংশের ক্ষমতার আরোহণ করে যখন পালবংশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। 

পালবংশ বহিশত্রুর আক্রমণ, পার্শ্ববর্তী রাজার আক্রশে যখন পালবংশ প্রায় পতনের মুখে তখন আলোকবর্তিকা হয়ে ক্ষমতায় আসে দ্বিতীয় মহীপাল ।

→ দ্বিতীয় মহীপালের পরিচয় : পিতা তৃতীয় বিগ্রহ পালের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় মহীপাল পাল সাম্রাজ্যর ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তিনি পাল সাম্রাজ্যর বারতম রাজা। 

দ্বিতীয় মহীপাল ১০৭০ হতে ১০৭৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৫ বছর পাল সাম্রাজ্যের ক্ষমতায় ছিলেন। সে সময় পাল সাম্রাজ্যে ব্যাপক সমস্যা ছিল। তিনি সামন্ত বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন।

→ দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকাল : দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করার আগেই বলা হয়েছে পাল সাম্রাজ্যের কঠিন অবস্থার সময় তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করে। 

নিম্নে তার রাজত্বকালের বিবরণ দেওয়া হলো :

১. সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব : যখন পিতা তৃতীয় বিগ্রহপাল মারা যায় তখন তার পুত্র দ্বিতীয় মহীপাল পাল সাম্রাজ্যের ক্ষমতায় আরোহণ করেন। 

সে সময় তার অন্য দুই ভাই দ্বিতীয় শুরপাল ও রামপাল সিংহাসন আরোহণ নিয়ে দ্বিতীয় মহীপালের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে। যার জন্য দ্বিতীয় মহীপাল তার দুই ভাইকে কারারুদ্ধ করে এ দ্বন্দ্বের অবসান করেন

২. বরেন্দ্র বিদ্রোহ : দ্বিতীয় মহীপাল যখন ক্ষমতায় আরোহণ করে তখন পাল সাম্রাজ্য বরেন্দ্র বিদ্রোহ দেখা দেয়। এটা দ্বিতীয় মহীপালের সময়কার উল্লেখযোগ্য ঘটনা। 

উত্তর বাংলার সামন্তরা দ্বিতীয় মহীপালের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ করে তাই বরেন্দ্র বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এ বিদ্রোহকে আবার অনেকে বলে কৈবত বিদ্রোহ। 

অত্যাচারী দ্বিতীয় মহীপাল যখন জনগণের উপর নির্মম অত্যাচার করতে থাকে তখন জনগণ তার উপর ক্ষেপে যায়। দ্বিতীয় মহীপাল তার ব্যর্থতা ঢাকতে জনগণের উপর অত্যাচার করতে থাকে। 

এ সময় সামন্ত রাজা দিব্যক আসে এবং তার নেতিত্বে উপর বাংলার জনগণ দ্বিতীয় মহীপালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এ বিদ্রোহকে বলা হয় সামন্ত বিদ্রোহ এবং এ বিদ্রোহ চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

৩. বিদ্রোহ দমনে মহীপাল : দ্বিতীয় মহীপাল ক্ষমতায় আসার পর যেসব বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল তা তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেসব বিদ্রোহ দমন করেন। 

বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সৈন্যদেরকে নতুন করে সাজায়। তবে সামন্ত বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে তিনি পুরোপুরি তার কৌশল কাজে লাগতে ব্যর্থ হয়। 

যার দরুন সামন্তদের হাতে তার মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় মহীপালের মৃত্যুর পর পাল সাম্রাজ্যের পতন হয়। দিব্য বরেন্দ্র ভূমিতে নিজেকে স্বাধীন নৃপতি ঘোষণা করে স্বাধীন রাজা বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দ্বিতীয় মহীপাল চরম পর্যায়ে এসে পালবংশের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বের যোগ্যতা ছিল কিন্তু প্রজাদের সাথে তিনি মিশতে পারতেন না। 

যার দরুন প্রজারা তার শুধু খারাপ দিকটাই জানতে পারত ভালো দিক জানতে পারত না এবং প্রজারা তার বিরোধী হয়ে যায়। ফলে দ্বিতীয় মহীপালের পতন তরান্বিত হয়। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ