সাতগাঁও এর পরিচয় দাও। সংক্ষেপে সাতগাঁওয়ের বিবরণ দাও

সাতগাঁও এর পরিচয় দাও। সংক্ষেপে সাতগাঁওয়ের বিবরণ দাও
সাতগাঁও এর পরিচয় দাও। সংক্ষেপে সাতগাঁওয়ের বিবরণ দাও

সাতগাঁও এর পরিচয় দাও। সংক্ষেপে সাতগাঁওয়ের বিবরণ দাও

উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল বাংলা। মধ্যযুগে মুসলিম শাসনের ফলে অঞ্চলটি সারা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়ে উঠে। 

বাংলা ছিল শস্য-শ্যামল অঞ্চল। এখানে ছিল পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য। এ সকল খাদ্যশস্য নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্রে রপ্তানি করা হতো। 

এই রপ্তানির জন্য যতগুলো বাণিজ্য বন্দর ছিল তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য বন্দর হলো সাতগাঁও বাণিজ্য বন্দর। ব্যবসা- বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো।

→ সাতগাঁও-এর পরিচয় : সাতগাঁও মধ্যযুগীয় বাংলার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য বন্দর। প্রাচীনকালে এটি সপ্তগ্রাম গ্রামে পরিচিত ছিল। প্রাক-মুসলিম যুগে এটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল ছিল। 

এটি বর্তমানে পলি দ্বারা ভরাট হয়ে যাওয়া সরস্বতী নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম তীরে এবং সরস্বতী-হুগলির | সঙ্গমস্থলের নিকটে অবস্থিত ছিল।

দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের পৌত্র সুলতান রুকনউদ্দিন কায়সারের সময়ে ১২৯৮ সালে সপ্তগ্রাম সর্বপ্রথম মুসলিম শাসনাধীনে আসে। 

সুলতান শামছুদ্দীন ফিরুজ শাহের শাসনামলে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা বিশেষ করে সোনারগাঁও অধিকার করার জন্য সপ্তগ্রাম নগরটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। 

১৩২৪ সালে গিয়াসউদ্দীন তুঘলক বাংলা জয় করেন এবং এটিকে প্রশাসনিক তিনটি ভাগে বিভক্ত করেন। সাতগাঁও ছিল তিনটি ভাগের অন্যতম একটি। 

মুহম্মদ বিন তুগলকের শাসনামলে সাতগাঁও টাকশাল শহরে পরিণত হয়। টাকশাল শহর হিসেবে এটি একশত বছরেরও অধিক কাল টিকে ছিল।

সাতগাঁও শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছিল। শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, সাতগাঁওয়ের শাসক জাফর খান সাতগাঁওয়ে আবাসিক মাদ্রাসাসহ একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।। 

এখানে ছাত্র ও শিক্ষকের জন্য আহারের ব্যবস্থাও ছিল। বাংলা সাহিত্য থেকে জানা যায় যে, সাতগাঁও সংস্কৃত শিক্ষারও কেন্দ্র ছিল ।

১৫৫৫ সালের দিকে পর্তুগিজরা এখানে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। ১৫৮৩ সালের দিকে সাতগাঁও একটি প্রসিদ্ধ বন্দরে পরিণত হয় । 

এখানে ইংরেজ এবং পর্তুগিজরা শুল্ক অফিস নির্মাণ করে। এরপর ১৬৩২ সালে মুঘলদের কর্তৃক হুগলি বিজয়ের পর শুল্ক অফিস হুগলিতে স্থানান্তর করা হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগে সাতগাঁও বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে স্বীকৃত ছিল। এটি একটি প্রসিদ্ধ শহর, বন্দর ও শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সাতগাঁওয়ের উত্থান হয়নি। 

এর আবির্ভাব ঘটেছিল তৎকালীন বাণিজ্যিক তৎপরতার সংযোগের ফলে এবং এর বিলুপ্তির জন্য জটিল রাজনৈতিক অবস্থায়ই বিশেষভাবে দায়ী ছিল। বাংলার সালতানাতের পতনের সাথে সাথে সাতগাঁও ধীরে ধীরে বন্দরের উপযোগিতা হায়ে ফেলে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ