সফল শাসক হিসেবে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের কৃতিত্ব বর্ণনা কর

সফল শাসক হিসেবে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের কৃতিত্ব বর্ণনা কর
সফল শাসক হিসেবে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের কৃতিত্ব বর্ণনা কর

সফল শাসক হিসেবে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের কৃতিত্ব বর্ণনা কর

  • অথবা, শাসক হিসেবে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সফলতাগুলো কি ছিল?
  • অথবা, শাসক হিসেবে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ'র কৃতিত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ ।

উত্তর : ভূমিকা : 'হুসেন শাহের শাসনকাল বাংলার ইতিহাসের মধ্যযুগে একটি উজ্জ্বল অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে।' বাংলার ইতিহাসে হাবশি শাসন যখন একটি অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করেছিল তখন তিনি বাংলার শাসকরূপে স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ একটি শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।

→ হুসেন শাহের কৃতিত্ব : আলাউদ্দীন হুসেন শাহ হুসেন শাহী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ক্ষমতা লাভের পর দৃঢ় ও উদার শাসন ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। তার শাসনব্যবস্থা থাকে হসেন শাহী বংশের শ্রেষ্ঠ শাসকে পরিণত করেছে। 

নিম্নে শাসক হিসেবে হুসেন শাহের কৃতিত্ব মূল্যায়ন করা হলো-

১. শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপন : আলাউদ্দিন হুসেন শাহ বাংলার অস্থিতিশীল অবস্থার পতন ঘটান। তিনি শাসন ক্ষমতায় এসে বাংলায় শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। তার শাসনকালকে শান্তি ও সমৃদ্ধির যুগ বলা হয়।

২. উদার শাসন : হুসেন শাহ বাংলার ইতিহাসে শাসক হিসেবে উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি হিন্দুদের প্রতি সহনশীল ছিলেন। তার রাজসভায় হিন্দু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কবি-সাহিত্যিকদের সচরাচর আনাগোনা তার স্বাক্ষর বহন করে। তিনি উদার শাসনব্যবস্থা চালু করেন।

৩. সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ : হুসেন শাহ সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি তীব্র অনুরাগ প্রদর্শন করেন। তিনি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে উৎসাহিত করেন। তার সময়ে ম | অবলম্বন করে অনেক সাহিত্য রচিত হয়েছিল।

৪. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা : হুসেন শাহ একজন ধর্ম সহিষ্ণু ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সকল ধর্মের স্বাধীনতা প্রদান করেন। ফলে হিন্দুরাও তাদের ধর্মীয় সকল আচার-আচরণ পালনের সাথে ধর্মপ্রচারের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করে। শ্রী চৈতন্য ধর্ম প্রচারে বের হলেও তাকে কোন প্রকার বাধা দেওয়া হয়নি।

৫. স্থাপত্য শিল্পে অবদান : ইলিয়াস শাহী যুগে বাংলায় মুসলিম স্থাপত্য শিল্পক্ষেত্রে যে নতুন ধারার সূচনা হয়েছিল, হুসেন শাহের সময় সেই ধারার প্রচলন ছিল। 

তিনি বহু মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তার সময়ে নির্মিত মসজিদের মধ্যে 'গৌড়ের ছোট সোনা মসজিদ' এবং 'শুমতি দ্বার' শিল্প সৌন্দর্যে বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে।

৬. সামরিক সাফল্য : হুসেন শাহ তার সুদীর্ঘ রাজত্বকালে সামরিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তিনি কামতাপুরের খেন রাজ্য ধ্বংস। 

উড়িষ্যা ও ত্রিপুরা রাজ্যের কিয়দংশে অধিকার বিস্তার করেন, উত্তর বিহার ও দক্ষিণ বিহারের অংশ বিশেষেও তার আধিপত্য বিস্তৃত হয়েছিল। আরাকান ও ত্রিপুরা রাজ্যের বিরুদ্ধেও তিনি সাফল্য লাভ করেছিলেন।

৭. উপাধি লাভ : হুসেন শাহের শাসনব্যবস্থা ও উদার নীতির কারণে তিনি অনেক উপাধিতে ভূষিত হন। কৃষ্ণদাস কবিরাজ তাকে ঈশ্বরের অবতার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাকে 'নৃপতি তিলক', "জগৎ ভূষণ', 'কৃষ্ণাবতার প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল।

উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, বাংলার ইতিহাসে হুসেন শাহ একজন কৃতিত্ববান শাসক ছিলেন। হুসেন শাহ একজন সফল শাসক হিসেবে ইতিহাসে উজ্জ্বল স্থান দখল করেছেন। হুসেন শাহের উদার শাসনব্যবস্থা হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ