উত্তর ভারতের রাজনীতিতে শশাঙ্কের হস্তক্ষেপের কারণগুলো আলোচনা কর

উত্তর ভারতের রাজনীতিতে শশাঙ্কের হস্তক্ষেপের কারণগুলো আলোচনা কর
উত্তর ভারতের রাজনীতিতে শশাঙ্কের হস্তক্ষেপের কারণগুলো আলোচনা কর

উত্তর ভারতের রাজনীতিতে শশাঙ্কের হস্তক্ষেপের কারণগুলো আলোচনা কর

  • অথবা, শশাঙ্কের উত্তর ভারতের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণসমূহ বিবৃতি কর । 
  • অথবা, শশাঙ্ক কেন উত্তর ভারতের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেন? আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। তিনিই ছিলেন বাংলার ঐতিহাসিক যুগের প্রথম সার্বভৌম নরপতি, বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্ক প্রথম যিনি রাজ্য জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেটাকে বাস্তবে রূপদান করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

শশাঙ্ক বাংলার বাইরে গৌড় রাজ্যের সীমানা মগধ, উড়িষ্যার উত্তরাঞ্চলে বৃদ্ধি করেন। শশাঙ্ক গৌড়ের সিংহাসনে ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে বসার পর নিজ রাষ্ট্রকে চিরশত্রু মৌখরি রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।

→ শশাঙ্কের গৌড় রাষ্ট্রের উত্থান : শশাঙ্ক ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে পরবর্তী গুপ্ত বংশের শাসকদের পরাজিত করার মাধ্যমে গৌড়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের উত্থান ঘটান। 

সিংহাসনে বসে নানাবিধ কারণে শশাঙ্ক উত্তর ভারতের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নিচে শশাঙ্কের উত্তর ভারতে জড়িয়ে পড়ার পেছনে কারণসমূহ বর্ণনা করা হলো :

→ শশাঙ্কের উত্তর ভারতের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণসমূহ : শশাঙ্ক সিংহাসনে আরোহণের পর নিজ রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ নীতি গ্রহণ করেন। 

যাহা ছিল শশাঙ্কের উত্তর ভারতের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। তাছাড়া সাম্রাজ্য বিস্তৃতির লোভ- লালসা ছিল শশাঙ্কের উত্তর ভারতের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। নিচে অন্যান্য কারণসমূহ আলোচিত হলো :

১. শশাঙ্কের সাম্রাজ্য জয়ের লিঙ্গা : বাংলার প্রাচীন শাসকদের মধ্যে একমাত্র শশাঙ্ক ছিলেন যোগ্য শাসক যিনি তাঁর কল্পনাকে বাস্তবরূপ দিতে পেরেছিলেন। 

গৌড় রাজ্য জয়ের পর শশাঙ্ক দক্ষিণ ও পশ্চিমে রাজ্য জয় করে উত্তর ভারতের দিকে অভিযান প্রেরণের মানুষিকতা শশাঙ্ককে উত্তর ভারতের রাজনীতিতে ঠেলে দেয়।

২. গৌড়ের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখা : শশার সিংহাসনে আরোহণের পর বুঝতে পেরেছিলেন যে, গৌড়ের সিংহাসনকে শত্রু মুক্ত রাখতে হলে তাকে উত্তর ভারতের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে কনৌজ রাজা এবং থানেশ্বর রাজাকে সবসময় ব্যতিব্যস্ত রাখতে হবে। ফলে এর মাধ্যমে তাঁরা পৌড় রাজ্যের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকবে।

৩. পুরুষানুক্রমিক শত্রুতা : শশাঙ্কের উত্তর ভারতের রাজনীতি জড়িয়ে পড়ার কারণগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। 

পুরুষানুক্রমিক শত্রুতা কনৌজের মৌখরি রাজদের সাথে পরবর্তী গুপ্ত বংশের শাসকদের মধ্যে ব্যাপক শত্রুতা ছিল মগধ ও গৌড় রাজ্যের অধিকার নিয়ে। 

শশাঙ্ক পরবর্তী গুপ্ত বংশের হাত থেকে গৌড় ও মগধ অধিকার করলে শশাঙ্কের সাথে মৌখবিরাজদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। 

সুতরাং দেখা যায় যে, গৌড় ও মগধের উপর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যে ফ্য সেটি শশাঙ্কের পূর্ববর্তী শাসকদের সময়ও ছিল সুতরাং এ দ্বন্দ্বগুলো ছিল পুরুষানুক্রমিক বা বংশক্রমিক। তাই শশাঙ্ক উত্তর ভারতের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল।

৪. থানেশ্বর কনৌজ ছোট গঠন : কনৌজ রাজা গ্রহবর্মণ বানেশ্বরের পুষ্যভূতি রাজা প্রভাকরবর্মনের মেয়ে রাজ্যশ্রীকে বিবাহ করেন, ফলে থানেশ্বর রাজার সাথে কনৌজের রাজার একটি সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। 

উভয় শক্তিই শশাঙ্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একমত হয়। ফলে শশাঙ্ক বুঝতে পেরেছিলেন যে, থানেশ্বর রাজা যে কোনো মুহূর্তে গৌড় আক্রমণ করতে পারে। 

সুতরাং শশাঙ্ক নিজরাজ্যের নিরাপত্তার জন্য থানেশ্বর কনৌজ জোটের বিপরীত জোট গঠন করতে তৎপর হয়ে পড়েন। যা ছিল অন্যতম কারণ। 

৫. গৌড় মালব জোট গঠন : শশাঙ্ক নিজ রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। উক্ত জোটের বিপরীত জোট গঠনে শশাঙ্ক তৎপর হন। এ সময় মৌখরিরাজদের সাথে মালবরাজ দেবগুপ্তের ব্যাপক দ্বন্দ্ব বাধে। 

ফলে শশাঙ্ক খুব সহজেই মালব রাজ দেবগুপ্তের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করার মাধ্যমে গৌড় মালব জোট গঠন করেন। যাহা ছিল অন্যতম কারণ।

৬. মালবরাজ কর্তৃক গ্রহবর্মণকে আক্রমণ : মালবরাজ দেবগুপ্ত উক্ত জোট গঠন করার পর থানেশ্বর রাজার অসুস্থতার সুযোগে কনৌজে আক্রমণ করেন। 

কনৌজ আক্রমণ করার পর কনৌজ রাজ গ্রহবর্মণ মালব্রাজ দেবগুপ্তের মোকাবেলা করেন। এ যুদ্ধে কনৌজরাজ পরাজিত ও নিহত হয় দেবগুপ্তের কাছে। 

দেবগুও কনৌজ অধিকার করেন এবং গ্রহবর্মনের স্ত্রী রাজ্যশ্রীকে কারাবন্দি করে রাখেন। এসময় থানেশ্বরের রাজা হয়ে ক্ষমতায় আসেন রাজ্যবধর্ম। 

রাজ্যবর্ধন বোন রাজ্যশ্রীকে উদ্ধার ও কনৌজ পুনঃউদ্ধার করার জন্য কনৌজের অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।

৭. রাজ্যবর্ধনের মৃত্যু : রাজ্যবর্ধন কনৌজ অভিমুখে তার যুদ্ধ যাত্রা শুরু করেন। রাজ্যবর্ধনের সাথে এক পর্যায়ে মালবরাজ দেবগুপ্তের যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে দেবগুপ্ত পরাজিত ও নিহত হন। 

ফলে কনৌজ রাজ্যবর্ধন অধিকার করেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্ম পরিহাস রাজ্যবধর্নকে আবার গৌড়রাজ শশাঙ্কের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। এ যুদ্ধে শশাঙ্ক রাজ্যবর্ধনকে পরাজিত ও নিহত করেন। 

হিউয়েন সাং ও বানভট্ট এর মতে "দশান্ত বিশ্বাসঘাতকতা করে রাজ্যবর্ধনকে নিজ দরবারে ডেকে এনে হত্যা করেছিলেন। যদিও ড. মজুমদারস অ্য ঐতিহাসিক এ মত মেনে নেয়নি।

৮. শশাঙ্ক-হর্ষবর্ধনের সংঘর্ষ : ভ্রাতা রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনে বসার পর হর্ষবর্ধন ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য গৌড়রাজ শশাঙ্কের বিরুদ্ধে রণযত্রা শুরু করেন।

তিনি শশাঙ্কের সমুচিত শিক্ষাদান এবং গৌড় রাজ্যকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলার জন্য বিপুল সেনাবাহিনী নিয়ে শশাঙ্কের দিকে অগ্রসর হন। 

কিছুদুর যাবার পর জানতে পারেন ভগ্নী রাজ্যশ্রী বিন্ধ্য পর্বতে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন হর্ষ কূটকৌশলে কামরূপ রাজা ভাস্কর বর্মার সাথে শশাঙ্কের বিরুদ্ধে জোট গঠন করেন। 

অতঃপর শশাঙ্ক ভগ্নীকে বিন্ধ্য পর্বত থেকে উদ্ধার করার পর গঙ্গানদীর তীরে সেনাপতি ভন্ডির নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর সাথে একত্রিত হন। 

কিন্তু এ সেনাবাহিনীর অগ্রগতি সম্পর্কে আর কিছু জানা যায় না। হর্ষচরিতের রচয়িতা বানভট্ট এ সম্পর্কে আর কিছু উল্লেখ করেননি। তাই হর্ষবর্ধনের সাথে শশাঙ্কের যুদ্ধ হয়েছিল কি-না তা সম্পর্কে মতভেদ আছে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শশাঙ্ক ছিলেন একজন রাজ্য জয়ের নেশায় মত্ত শাসক। তিনি সমগ্র বাংলায় তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন যাহা বাধা স্বরূপ শশাঙ্ক উত্তর ভারতের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে হয়। এছাড়া এতে শশাঙ্কের নিজ রাজ্যের সার্বভৌম ক্ষমতাও অক্ষুণ্ণ থাকে । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ