আমলা ও এলিট শ্রেণির মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর

আমলা ও এলিট শ্রেণির মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর
আমলা ও এলিট শ্রেণির মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর

আমলা ও এলিট শ্রেণির মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর

  • অথবা, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে আমলা ও এলিটের মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ ভূমিকা : আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এলিট ও আমলাতন্ত্রের অস্তিত্ব ছাড়া পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। আমলাতন্ত্র যেমন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য তেমনি এলিট শ্রেণি ছাড়াও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। 

সেজন্য উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এলিট ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে পারস্পরিক যোগসূত্র লক্ষ্য করা যায়। 

Prof Harman Finer বলেছেন, "The functions of the civil service in the modern state is not merely an important of government, without it, indeed government itself would be impossible."

এলিট ও আমলাদের মধ্যে সম্পর্ক বা পার্থক্য : আধুনিক উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এলিট ও আমলাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে একে অন্যের মধ্যে যোগাযোগ লক্ষ্য করা যায়। তবে এপিট ও আমলা উভয়ই রাষ্ট্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

নিম্নে এদের মধ্যে সম্পর্ক বা পার্থক্য তুলে ধরা হল :

১. সরকারি নীতি বলবৎকরণে : উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে আমলাগণ আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনকানুন এবং বিচারালয়ের সিদ্ধান্তসমূহের বলবৎকরণে ভূমিকা রাখেন। 

আইনকানুন, নীতি, সরকারি সিদ্ধান্ত এবং দৈনন্দিন শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে আমলাগণ একচেটিয়া অধিকার ভোগ করেন। 

কিন্তু সেক্ষেত্রে এলিটগণ অনুরূপ ক্ষমতা ভোগ করেন। এক্ষেত্রে আমলা ও এলিটদের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

২. রাজনৈতিক পরামর্শ প্রদানের ক্ষেত্রে : রাজনৈতিক শাসকগণ জনগণ দ্বারা নির্বাচিত। বর্তমান রাষ্ট্রের জটিল বিষয় সম্পর্কে তাদের সম্যক জ্ঞান থাকে না। অথচ দেশের নীতিনির্ধারণের ভার তাদের উপর অর্পিত হয়। 

সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক শাসকগণকে অভিজ্ঞ, কুশলী, সরকারি কর্মচারীদের উপর পরামর্শের জন্য নির্ভর করতে হয়। তখন আমলাগণই রাজনৈতিক শাসকগণকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। 

আবার আমলাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক এলিটদের কাছ থেকে সরকার যে কোন ধরনের পরামর্শ গ্রহণ করে থাকেন। S. E. Finer বলেন, "In modern states the higher ranks of the executive advise the policy maker."

৩. আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে : বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি অত্যন্ত জটিল প্রকৃতির। আর এ জটিল বিষয়াদি আইনে বিধিবন্ধ করা সম্ভব হয় না। 

সেজন্য প্রত্যেক দেশেই আইনসভা কর্তৃক শাসন বিভাগের উপর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমলাগণ অনেকাংশে আইন প্রণয়নে অংশগ্রহণ করে থাকেন। 

কিন্তু শ্রমিক এলিটদের আইন প্রণয়নে সরাসরি অংশগ্রহণের কোন সুযোগ নেই। তবে রাজনৈতিক এলিটরা আইন প্রণয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

৪. সংসদীয় ব্যবস্থায় : সংসদীয় শাসনব্যবস্থার আইনসভাতে রাজনৈতিক এলিটদের বা মন্ত্রীদেরকে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এক্ষেত্রে সরকারের আমলাগণ মন্ত্রীদের এসব প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

৫. সরকারের হস্তক্ষেপ : আমলাগণ যেহেতু সরকারি কর্মচারী বা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত সেহেতু সরকারের Chain of command এর আওতায় তাদেরকে থাকতে হয়। 

কিন্তু আমলাগণ যেহেতু সরকারি কর্মচারী নন সুতরাং তারা সরকারের সরকারি গণ্ডির বাইরে তাদের কর্মপরিধি বিস্তৃত করে। এক্ষেত্রে আমলা ও এলিটদের মধ্যে পার্থক্য দৃষ্ট হয়।

৬. কর্তব্যের ক্ষেত্রে : সরকারি কর্মচারী বা আমলাদের কর্তব্য ও ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় এবং তাদেরকে ধরাবাঁধা নিয়ম পদ্ধতির মধ্যে থেকে কার্য করতে হয়। 

প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও কার্যাদির লিখিত ফাইল ও রেকর্ডপত্রাদি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু সমাজের এলিটগণ যেহেতু শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারী নন সেহেতু তাদেরকে ধরাবাধা নিয়ম পদ্ধতির মধ্যে চলতে হয় না।

৭. রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে : সমাজের এলিটগণ যেহেতু ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা ব্যক্তি গোষ্ঠীর সমষ্টি সেহেতু তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কিন্তু আমলাগণ যেহেতু এলিটদের মত ক্ষমতাবান নন সেজন্য তারা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে না।

৮. নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে : সমাজের এলিট শ্রেণি যে কোন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু সরকারি আমলাদের ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা সরকারি দলের বাইরে তাদের সমর্থন বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে না ।

৯. সাংগঠনিক ক্ষেত্রে : সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির এলিট গড়ে উঠে। তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের । কিন্তু সরকারি আমলাগণ শুধুমাত্র সরকার কর্তৃক আরোপিত কার্যাদি গোলামের ন্যায় পরিচালনা করে থাকেন ।

১০. লক্ষ্যের দিক থেকে : লক্ষ্যের দিক থেকে আমলা বা এলিটদের মধ্যে কিছুটা সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। তাদের উদ্ভবের লক্ষ্য থাকে রাষ্ট্রের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা। এক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষায় তারা সচেষ্ট থাকে ।

১১. ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে : সমাজের এলিটগণ রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে সর্বদা তৎপর। তারা যে কোন উপায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা করায়ত্ত করতে চায় । কিন্তু সরকারি আমলাগণ রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের প্রতি তেমন কোন স্পৃহা প্রকাশ করে না ।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, যদিও কর্মপরিধি, কর্মপন্থার ক্ষেত্রে এলিট ও আমলাগণের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তবুও তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য এক। 

তাদের উভয়ের মূল লক্ষ্য রাষ্ট্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতিশীলতা বৃদ্ধি করা । সেজন্য উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে এলিট ও আমলাগণের ভূমিকা ছাড়া রাজনৈতিক কার্যাদি স্থবির হয়ে পড়ে। J

ohn Dewey, "A final important function of bureaucracies is that of their own internal management." 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ