উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে এলিট ও আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কী ব্যাখ্যা কর

উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে এলিট ও আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কী ব্যাখ্যা কর
উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে এলিট ও আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কী ব্যাখ্যা কর

উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে এলিট ও আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কী ব্যাখ্যা কর

  • অথবা, এলিট কী? তৃতীয় বিশ্বে এলিট ও আমলাতন্ত্রের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এলিট ও আমলাতন্ত্রের অস্তিত্ব ছাড়া পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। আমলাতন্ত্র যেমন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য তেমনি এলিট শ্রেণি ছাড়াও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। 

সেজন্য উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এলিট ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে পারস্পরিক যোগসূত্র লক্ষ্য করা যায়। 

Prof Harman Finer বলেছেন, "The functions of the civil service in the modern state is not merely an important of government, without it, indeed government itself would be impossible."

উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে এলিট ও আমলাতন্ত্রের ভূমিকা : আধুনিক কালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনা করলে সর্বাগ্রে যাদের নাম আসে তারা হলেন সমাজের এলিট ও আমলাগণ। 

যে কারণে বর্তমান দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এলিট বা আমলাদের নিয়ে। নিম্নে উন্নয়নশীল দেশের রাজনীতিতে এলিট ও আমলাতন্ত্রের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল :

১. সামাজিক উন্নয়ন : উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের সামাজিক উন্নয়নে রাষ্ট্রের এলিট শ্রেণি ও আমলাগণ একটা বড় ভূমিকা রাখে । সৃষ্টির আদিকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যে কোন রাষ্ট্রের সামাজিক উন্নয়নে রাষ্ট্রের এলিট ও আমলাগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। 

বর্তমানে নাগরিক কল্যাণের পথ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আমলাদের নবপন্থা উদ্ভাবন করতে হচ্ছে। সে সাথে সমাজের এলিটগণ সমাজের সকল জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সর্বদা তৎপর ।

২. অর্থনৈতিক উন্নয়নে : উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উচ্চতর সরকারি কর্মকর্তা বা এলিটগণই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেন । 

অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করতে গিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এলিটগণকে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা, অধিকতর অর্থনৈতিক কল্যাণ লাভের জন্য জনগণের নতুন নতুন দাবিদাওয়া, সনাতন জীবনধারার অনুসারী শক্তিসমূহের বিরোধিতাজনিত সমস্যাদির মোকাবিলা করতে হয়। 

দেশের এসব সমস্যা মোকাবিলা ও তার সমাধানের পথ একমাত্র রাষ্ট্রের আমলা ও এলিটগণই দিয়ে থাকেন।

৩. সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানাদি গড়ে তোলা : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ, সেনাবাহিনীর সদস্যবৃন্দ যারা মধ্যবিত্ত শ্রেণি হতে প্রবেশ করেছে এবং আমলাগণ যারা নতুন রাষ্ট্রের কর্ণধারের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব শ্রেণি অনেক উন্নয়নশীল দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। 

এ ধরনের এলিট ও আমলাগণ নতুন নতুন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় সর্বদা সচেষ্ট থাকেন।

৪. আইন প্রণয়নে : উন্নয়নশীল দেশের আইন প্রণয়নে আমলাতন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আইন প্রণয়ন করা হল আইন বিভাগের কাজ। 

সরকারি কর্মচারীগণ প্রত্যক্ষভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারে না সত্য, কিন্তু বাস্তবে তারা আইন প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। 

আইন প্রণয়নে যে দূরদর্শিতা, দক্ষতা ও প্রশাসনিক কলাকৌশলগত জ্ঞানের প্রয়োজন হয় তার জন্য আমলাদের ও এলিটদের উপর নির্ভর করতে হয়।

৫. প্রশাসনিক কার্যে : বর্তমানে রাষ্ট্র ও সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য বৃদ্ধির ফলে আমলাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সুতরাং উন্নয়নশীল দেশের সরকারি কার্যাবলি প্রতিক্ষেত্রে আমলাদের ও এলিটদের উপর নির্ভরশীল। Prof Finer বলেছেন, "The functions of the civil service is not merely an improvement of the government, indeed, without it, government itself would be impossible."

৬. আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে : উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশসমূহের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে। 

জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি, উচ্চমানের ভোগসামগ্রী ও কল্যাণ লাভের আকাঙ্ক্ষা ও সে সঙ্গে সনাতনধর্মী জীবনযাত্রার সমার্থক শক্তির উপস্থিতি আধুনিকীকরণের পথে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। 

ফলে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও অর্থনৈতিক নীতিমালা অস্থিরীকৃত ও অনিশ্চিত অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের এলিট ও আমলাগণ সামগ্রিক উন্নয়নের গতিধারা নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

৭. রাজনৈতিক জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে : এলিট শ্রেণি রাজনৈতিক জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং আমলাগণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে জনগণকে রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে থাকেন। 

পরবর্তীতে অনেকাংশে আমলাগণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদান করে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে তোলেন।

৮. রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিধান করা : আমলাগণ রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিধানের অন্যতম সংগঠন হিসেবে কাজ করেন। আমলাগণের পাশাপাশি রাষ্ট্রের এলিটগোষ্ঠীও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সামগ্রিকভাবে সাহায্য করে থাকে।

৯. শাসনকার্যে নিরবচ্ছিন্নতা রক্ষা করা : প্রত্যেকটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার সর্বদা পরিবর্তনশীল। একদল শাসনক্ষমতা গ্রহণ করে আবার পরবর্তীতে অন্যদল ক্ষমতায় আসে। 

এভাবে শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন হতে থাকে। এ উত্থানপতনের মধ্যে আমলাগণ শাসনকার্যে নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

১০. রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন : বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকাংশই ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের নাগপাশে থেকে সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছে। 

এসব উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর থেকেই এসব দেশে নতুন এলিট শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে। 

এলিট শ্রেণির পাশাপাশি আমলাতন্ত্রও বা রাষ্ট্রের আমলা শ্রেণি রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করেন। 

এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমে এলিট ও আমলাগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা থেকে একথা প্রতীয়মান হয় যে, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের এলিট ও আমলাগণ যেমন স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন, অপরদিকে সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে ভূমিকা পালন করে থাকেন। 

এক্ষেত্রে আমরা Edward Shills এর সাথে একমত হয়ে বলতে পারি যে, "The gestation birth and continuing life of these states is in large measures the work of intellectuals." 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ