বাংলার রাজনীতিতে ইউরোপীয় সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রভাব উল্লেখ কর

বাংলার রাজনীতিতে ইউরোপীয় সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রভাব উল্লেখ কর
বাংলার রাজনীতিতে ইউরোপীয় সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রভাব উল্লেখ কর

বাংলার রাজনীতিতে ইউরোপীয় সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রভাব উল্লেখ কর

  • অথবা, বাংলার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ইউরোপীয় সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রভাব কেমন ছিল?

উত্তর : ভূমিকা : ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে যদিও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সর্বশেষ বাংলায় আগমন করেছিল, তবুও তারা সামুদ্রিক বাণিজ্যে পর্তুগিজ ও ফরাসিদেরকে বিতাড়িত করে এককভাবে বাংলার নিয়ন্ত্রণ হস্তগত করে। 

আর এ সামুদ্রিক = বাণিজ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলায় তাদের যে আধিপত্য সুদৃঢ় হয় তা বাংলার রাজনৈতিক অবস্থায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল।

বাংলার রাজনীতিতে ইউরোপীয় সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রভাব : বাংলার রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর ইউরোপীয় সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ :

১. অভিজাত শ্রেণির উদ্ভব : ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম রাখার জন্য ইংরেজরা এখানে একটি শাসক অভিজাত শ্রেণি সৃষ্টির চেষ্টা চালায় এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজা, নওয়াব, স্যার প্রভৃতি উপাধিধারী অভিজাত শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।

২. ব্রিটিশ অনুগত জমিদার শ্রেণির উদ্ভব : বাংলার রাজনৈতিক জীবনে ইউরোপীয় সামুদ্রিক বাণিজ্য প্রসূত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবটি ছিল ব্রিটিশ অনুগত জমিদার শ্রেণি সৃষ্টি। 

লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সৃষ্টি হয় জমিদার শ্রেণি যারা ব্রিটিশ শাসনকে টিকিয়ে রাখতে তাদের খুঁটি হিসেবে কাজ করেছিল।

৩. মধ্যবিত্ত শ্রেণি : ব্রিটিশদের সৃষ্টি নীতির ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ঘটে। সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ফল ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবির্ভাব। 

প্রথমদিকে কোম্পানির সাথে জড়িত বালিয়া, মুৎসুদ্দি, ফয়াল, পাইকারি, দালাল, বেপারি প্রভৃতি শ্রেণি হলো বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রথম পুরুষ। 

সরকারের অনুসৃত নীতির ফলে এ সকল আদি মধ্যবিত্ত শ্রেণি ধীরে ধীরে দানা বেঁধে ওঠে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ফলে উদ্ভব হয় বিচারক, উকিল, মোক্তার ও মহুরির। 

শিক্ষা ও সংস্কারের ফলে সৃষ্টি হয় শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সমাজসেবী প্রভৃতি শ্রেণির। 

ভূমি সংস্কারের ফলে সৃষ্টি হয় ভূম্যাধিকারী, মধ্যস্বত্বাধিকারী ইজারাদার প্রভৃতি শ্রেণির। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের ফলে সৃষ্টি হয় ব্যাংকার, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী প্রভৃতির। 

সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় কর্মবৃদ্ধি ও শিল্পায়নের ফলে গড়ে ওঠে এক বিরাট চাকরিজীবী শ্রেণি। এরা সকলেই ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

৪. রাজনৈতিক সংগঠন ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা : ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি ছিল বাংলায় রাজনৈতিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ লাভ। তখন পেশাগত সাংগঠনিক তৎপরতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক তৎপরতায় গড়ে ওঠে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন। আর এ রাজনৈতিক সংগঠন থেকেই শুরু হয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ৷

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলায় ইউরোপীয় সামুদ্রিক বাণিজ্যের রাজনৈতিক প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। তারা যেমন তাদের নিজেদের প্রয়োজনে এখানে একটি অভিজাত শ্রেণি এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি সৃষ্টি করেছিল তেমনি সকল শ্রেণি তাদের নিজেদের প্রয়োজনে ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন গড়ে তোলে এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় ৷ 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ