এলিটের শ্রেণিবিভাগ দেখাও। বিভিন্ন প্রকার এলিটের বর্ণনা দাও

এলিটের শ্রেণিবিভাগ দেখাও। বিভিন্ন প্রকার এলিটের বর্ণনা দাও
এলিটের শ্রেণিবিভাগ দেখাও। বিভিন্ন প্রকার এলিটের বর্ণনা দাও

এলিটের শ্রেণিবিভাগ দেখাও। বিভিন্ন প্রকার এলিটের বর্ণনা দাও

উত্তরা ভূমিকা : আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে 'এলিট'। পৃথিবীর সকল সমাজব্যবস্থায় এলিটদের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। 

উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাজনীতিতে এপিটদের ভূমিকা লক্ষণীয়। এ এলিটগণ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। 

'A Dictonary of the Social Science' এ এলিটদের ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়, "Blite in the most general sense denotes a group of persons who in any society, holds positions of eminence."

এলিট : এলিট (Elite) একটি ইংরেজি শব্দ। এ ইংরেজি শব্দটির অর্থ হল উৎকর্ষে উচ্চতর (Superior)। প্রচলিত অর্থে 'এলিট' বলতে বাছাই করা ব্যক্তিবর্গের শ্রেণি বা সেরা শ্রেণি (Superior class) কে বুঝায়।

ভিলফ্রেডো প্যারেটোই (Vilfredo Pareto) প্রথম সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় এলিট শব্দটি প্রয়োগ করেন। সাধারণত এলিট বলতে সমাজের উচ্চ শ্রেণির ব্যক্তিবর্গের সমষ্টিকে বুঝায় যারা শাসনকার্য পরিচালনা করে।

এলিটের শ্রেণিবিভাগ : এলিটের অস্তিত্ব সাধারণত সমাজব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। যে কোন সমাজে বিভিন্ন ধরনের এলিট থাকতে পারে। 

Seymour তাঁর 'Elites in Latin America' গ্রন্থে একটি সমাজের বিভিন্ন ধরনের এলিটের শ্রেণিবিভাগ দেখিয়েছেন। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল :

১. রাজনৈতিক এলিট (Political elite), 

২. সাংস্কৃতিক এলিট (Cultural elite), 

৩. ধর্মীয় এলিট (Religious elite).. 

৪. শিল্প এলিট (Industrial elite).

৫. শ্রমিক এলিট (Labour elite)।

উপরিউক্ত এলিট ছাড়াও আরও কিছু ধরনের এলিটদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। 

যা নিম্নে উল্লেখ করা হল :

৬. অর্থনৈতিক এলিট (Economical elite),

৭. প্রশাসনিক এলিট (Administrational elite),

৮. সামরিক এলিট (Military elite ) ।

নিম্নে এগুলো সংক্ষেপে আলোচিত হল :

১. রাজনৈতিক এলিট (Political elite) : সমাজের উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক শ্রেণিই হচ্ছে রাজনৈতিক এলিট হিসেবে পরিচিত। G. Mosca তাঁর The Rulling Class' গ্রন্থে বলেছেন, “রাজনৈতিক শ্রেণি হচ্ছে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। 

এ গ্রুপ সমাজের শাসনকার্য পরিচালনা করে।” তিনি আরও বলেন, “সংখ্যায় অল্প হলেও এদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার অধিকারী হল এ সামাজিক শ্রেণি।”

২. সাংস্কৃতিক এলিট (Cultural elite) : এ শ্রেণি সমাজের অন্যতম প্রভাব বিস্তারকারী শ্রেণি। G. Mosca বলেন, “এ শ্রেণির জনগোষ্ঠী প্রবৃত্তিগত দিক থেকে অভিন্ন ইতিহাসে ডুব দিলে মানুষের এ অভিন্ন প্রকৃতি অনুধাবন করা যায়।” এ শ্রেণির এলিটগণ সমাজের সাংস্কৃতিক দিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

৩. ধর্মীয় এলিট (Religious elite) : ধর্মীয় এলিট বলতে সমাজের ধর্মীয় ব্যাপারে প্রভাব বিস্তারকারী গোষ্ঠী বা শ্রেণিকে বুঝায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Tain তাঁর The Ancient Regime গ্রন্থে বলেন, “ধর্মযাজক শ্রেণির সমন্বয়ে গঠিত ধর্মীয় এলিট। এ গ্রুপ সংখ্যালঘু হলেও সংখ্যাগুরুর উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।"

৪. শিল্প এলিট (Industrial elite): যে কোন রাষ্ট্রের শিল্পপতিদের সমন্বয়ে সমাজের যে উচ্চ শ্রেণি গঠন করা হয়। তাকে শিল্প এলিট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এরা দেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। 

Mosca তাঁর "The Rulling Class' গ্রন্থে বলেছেন “সুস্থ সামাজিক পিরামিডের শীর্ষে থাকা উচিত শিল্প এলিটদের, কেননা তাদের হাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে।

৫. শ্রমিক এলিট (Labour elite) : এ শ্রেণির এলিটগণ সমাজের শ্রমিকদের স্বার্থের জন্য গঠিত হয়। যেমন- Trade union এর মাধ্যমে শ্রমিক এলিট শ্রেণি তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকে। এ শ্রেণির এলিটগণ সরকারের কর্মকাণ্ডে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।

৬. অর্থনৈতিক এলিট (Economical elite) : এ শ্রেণির এলিটগণ সমাজের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। যে কোন রাষ্ট্রের পুঁজি বিনিয়োগের সমাজের পুঁজিপতি শ্রেণি বা অর্থনৈতিক এলিটগণ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এরা সরকারের অর্থনৈতিক সাহায্যদাতা হিসেবেও কাজ করে থাকে।

৭. প্রশাসনিক এলিট (Administrational elite) : প্রশাসনিক এলিট রাষ্ট্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারে সে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক জবাবদিহিতা থাকে। যা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মুখ্য ভূমিকা রাখে।

৮. সামরিক এলিট (Military elite) : প্রত্যেক সমাজে সামরিক এলিট বর্তমান থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭৫-১৯৯০ সাল পর্যন্ত এদেশে সামরিক এলিটগণ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। 

১৯৯০ সালে এরশাদ নামক স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর সামরিক এলিটদের অস্তিত্বের অবসান ঘটে।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিভিন্ন সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন শ্রেণির অস্তিত্ব মূলত বাধ্যতামূলক। 

কেননা এলিট শ্রেণিকে উপেক্ষা করে কোন সমাজব্যবস্থা সঠিকভাবে তার সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে না। 

এলিটগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে থাকে। শুধু অর্থনৈতিক সাহায্য নয় বিভিন্ন পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও এলিটদের ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। 

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আশরফ ও শর্মা বলেছেন, "The history of man is the history of the continuous replacement of elites : as one ascends, another declines."

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ